নেত্রকোণা রেলস্টেশন
প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে ট্রেনের ঘর্ষণে আগুনের ফুলকি, আতঙ্কে যাত্রীরা
আরামদায়ক ও নিরাপদ হওয়ায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষের পছন্দ ট্রেন। কিন্তু অনেক সময় ট্রেনেও দুর্ঘটনা ঘটে। সেই দুর্ঘটনা যদি কারও অবহেলার কারণে ঘটে তাহলে সেটাকে দুর্ঘটনা বলা যায় না।
নেত্রকোণা জেলা শহরের এক কিলোমিটার জায়গার মধ্যে দুটি রেলস্টেশন। তবে বড় স্টেশন নামের মেইন স্টেশনটিই সবাই ব্যবহার করেন। যেটি কাগজে-কলমে নেত্রকোণা রেলওয়ে স্টেশন। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই রেলস্টেশন শুরু থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিল। ২০২১ সালের ১৫ অক্টোবর তৎকালীন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের হাত ধরে উদ্বোধন হয় সংস্কারকৃত নতুন রেলস্টেশনের। তখন যাত্রী সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে, প্ল্যাটফর্ম উঁচুকরণ, স্টেশন বিল্ডিং রিনোভেশন, এক্সেস কন্ট্রোল এবং প্ল্যাটফর্ম শেড নির্মাণে কাজ করা হয়। কিন্তু মনিটরিং ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে যাত্রীসেবার বিষয়টি এখন প্রশ্নের মুখে।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে স্টেশনে গেলে যাত্রী ও স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, হাওর এক্সপ্রেস ও মহুয়া কমিউটার ট্রেন দুটি ঢাকা-মোহনগঞ্জ রুটে চলাচল করে। ট্রেন দুটির কয়েকটি বগি ময়মনসিংহ ও নেত্রকোণা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে আগুনের ফুলকি ছোটে। যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। ২০২১ সালের অক্টোবরে প্ল্যাটফর্ম উঁচু করার পর থেকেই বিভিন্ন সময় এ রকম ঘর্ষণের ঘটনা ঘটলেও এটা নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই।
যাত্রী ও স্টেশনের দোকানিরা বলছেন, ময়মনসিংহ এবং নেত্রকোণা স্টেশনে তারা এই ঘর্ষণের বিষয়টি দেখেছেন। প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে ট্রেনের বগি ঘষা খেয়ে আগুনের ফুলকি ছোটে, এটা আসলে ট্রেনের বগির জন্য হতে পারে। কারণ নির্দিষ্ট কিছু বগিতে তারা ঘটতে দেখেছেন। প্ল্যাটফর্ম আগে নিচু ছিল, তখন এই সমস্যা হতো না। এখন প্ল্যাটফর্মের সংস্কার কাজ করার পর প্ল্যাটফর্ম যখন উঁচু হয়েছে তখন থেকে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় ট্রেনের বগিগুলো ঘষা খাচ্ছে প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে।
আব্দুস সাত্তার খান নামে একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, বগি এখানে প্ল্যাটফর্মের সাথে ঘষা খায়। বিভিন্ন জায়গায় আগুনের ফুলকি বের হয়। ঝালাই করলে যে রকম আগুন বের হয়, এখানে ওই রকম আগুন তৈরি হয়। এখন যদি একটা দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে এখানে তো অনেকগুলো মানুষ মারা যেতে পারে। সমস্যাটা তো আজকে থেকে না, বেশ কিছুদিন যাবত স্টেশনটা উঁচু করার পর থেকে এই সমস্যাটা তৈরি হয়েছে। এখন সমস্যাটার সমাধান কেউ করছে না। এখন তাদের অবহেলার কারণে যদি এখানে মানুষ মারা যায় তাহলে এটার দায়ভার কে নেবে?
ইয়াহিয়া খান নামে আরেক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, আগে যে প্ল্যাটফর্ম ছিল সেটা ট্রেনের সাথে মাপ ঠিক ছিল। কিন্তু এখন উচ্চতা বাড়ানোর পরে ট্রেনের সিঁড়িগুলো প্ল্যাটফর্মের নিচে চলে যায়। যার কারণে কেউ যদি চলন্ত অবস্থায় সিঁড়িতে পা রাখে তাহলে তার পা কেটে যেতে পারে। যেমন কিছুদিন আগে একজন মহিলা এভাবে ট্রেন থেকে নামার সময় সিঁড়িতে পা রাখা ছিল। তখন প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে ঘষা লেগে তার পা দুটো কেটে যায়। তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে এই অবস্থা হয়েছে তার। যদি কর্তৃপক্ষ বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে সমাধান করে তাহলে এখানে ট্রেনের যাত্রীসহ এলাকার লোকজন বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাবে।
লুৎফর রহমান বাবুল রেলওয়ের সাবেক কর্মী। তিনি জানান, স্টেশনে মূলত লাইনগুলো মূল জায়গা থেকে সরে গেছে। রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের কাজ ঠিক মতো হচ্ছে না। এখানে কিছু নতুন লোক আছে এরা কাজ বুঝে না। এখানে লাইনে লেভেলিংয়ে কিছু সমস্যা আছে। যার কারণে বিভিন্ন জায়গায় ঘর্ষণের ফলে টাইলস ভেঙে গেছে। ঘর্ষণের সঙ্গে আগুন জ্বলতে থাকে। আমরা আপনাদের মাধ্যমে এটার একটা সুন্দর সমাধান চাই। মানুষ যেন সুন্দরভাবে চলাফেরা করতে পারে, কোনো দুর্ঘটনা যেন না ঘটে।
পাপ্পু খান নামে রেলওয়ের এক নিরাপত্তা কর্মী জানান, স্টেশনে লাইনটা মূলত একপাশে একটু ঢালু থাকে। প্ল্যাটফর্মে যখন ট্রেন আসে তখন কিছু কিছু জায়গায় ঘর্ষণের ঘটনা ঘটছে। হয়তোবা এখানে লাইন কিছুটা নিচু হয়ে যাওয়ার এই সমস্যা হচ্ছে। অথবা ট্রেনের বগির স্প্রিং দুর্বল হয়ে এটা হতে পারে। সমস্যা মূলত কি এটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যারা আছেন, তারা তদন্ত করার পর তা বের হয়ে আসবে।
নেত্রকোণা রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্ল্যাটফর্মের সাথে ট্রেনের যে ঘর্ষণের ঘটনা ঘটছে, এটা সাধারণ জনগণ ও যাত্রীদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি। আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ আকারে কিছু বলেনি। আজকে কিছু যাত্রীর কাছ থেকে জানতে পারলাম মহুয়া কমিউটার ট্রেনের নির্দিষ্ট দুই-একটি বগিতে এই ধরনের সমস্যা হচ্ছে। আমরা এ বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। তারা এসে বিষয়টি পরিদর্শন করে সিদ্ধান্ত নেবেন। হয়তোবা নতুন বগি সংযোজন করবেন।
প্ল্যাটফর্মের কোনো সমস্যা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্ল্যাটফর্মে কোনো সমস্যা থাকার কথা না। রেলের উঁচু-নিচুর কারণে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। অথবা যাত্রীর চাপ যদি বেশি থাকে তখন বগির নিচের স্প্রিংগুলো চেপে যাওয়ার কারণে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। খুব দ্রতই আশা করছি এই সমস্যার সমাধান হবে।
চয়ন দেবনাথ মুন্না/আরএআর