মিম ও আল আমিন দম্পত্তির বিয়ের মাত্র ৭ মাস। মিম স্বামীর কাছে একটি বাটন মোবাইল ফোন, নতুন শাড়ি, গহনাসহ কিছু জিনিসপত্র কিনে চেয়েছিলেন। তবে এসব কিনে দিতে রাজি ছিলেন না আল আমিন। এ নিয়ে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন স্বামী আল আমিন। হত্যার পর স্ত্রীর মরদেহ ঘরে রেখে পালিয়ে যান, পরে র‍্যাব অভিযান চালিয়ে জামালপুর থেকে আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেন।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় র‌্যাব-১ গাজীপুর পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার জুন্নুরাইন বিন আলম এসব তথ্য জানান। 

আল আমিন (২৪) টাঙ্গাইলের কালিহাতি থানার কালাই গ্রামের আমিরুল ইসলামের ছেলে। নিহত মিম আক্তার (২২) সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার ছোটবেড়া খারুয়া গ্রামের মো. ইউসুফ আলী খানের মেয়ে।

র‌্যাব কমান্ডার জুন্নুরাইন বিন আলম জানান, বুধবার গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের একটি ভবন থেকে ২২ বছর বয়সী মিম আক্তার নামে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৫ জুন) দিবাগত রাতে আল আমিন তার স্ত্রী মিম আক্তারের গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যা করেন। এরপর মরদেহ রুমের ভেতর রেখে দরজায় তালা দিয়ে পালিয়ে যান। 

এদিকে গৃহবধূর মরদেহের পাশে পাঁচ পৃষ্ঠার একটি চিঠি পেয়েছে পুলিশ। ওই চিঠি গৃহবধূর স্বামী আল আমিন তার মায়ের কাছে লিখেছেন। চিঠিতে তিনি তার স্ত্রীকে হত্যার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে ওই চিঠি আল আমিনের লেখা কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

মৃত্যুর আগে মায়ের কাছে লেখা সেই চিঠিতে আল আমিন বলেন, ‌‘মা আমারে মাফ কইরা দিয়ো। অনেক স্বপ্ন ছিল তোমারে কোনোদিন কষ্ট দিব না। কিন্তু এমন একজন মানুষ তুমি আমারে আইনা দিছো, যার অত্যাচার থেকে বাঁচতে এই সিদ্ধান্ত নিলাম। তিলে তিলে মরার চাইতে একবারে মরে গেলাম। সবাই আমারে মাফ কইরা দিয়ো। সে আমারে কয়েক মাসের মধ্যে মানসিক রোগী বানাইয়া ফেলছে। পরিশেষে সবার জন্য দোয়া করে গেলাম। এমন বউ জানি কারো কপালে না জুটে।” এরপর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বাকী টাকা পরিশোধের কথা জানিয়ে চিঠিটির শেষে আল আমিন লেখেন, নিজে একাই মইরা যাইতাম। কিন্তু এরে যদি বাচাইয়া রাইখা যাই, এ আরো অনেক মানুষের জীবন নষ্ট করবো, তাই মাইরা ফেললাম। অনেক স্বপ্ন ছিল রাসুলের সব সুন্নাহ গুলি আমার জীবনে বাস্তবায়িত করমু, কিন্তু পারলাম না!’ আল আমিন তার মায়ের মোবাইল নম্বর ও নিহত মীমের নানার মোবাইল নম্বর লিখে দিয়েছিলেন সেই চিঠিতে। 

এ ঘটনায় ২৬ জুন রাতে নিহত মিমের বাবা মো. ইউসুফ আলী খান আল আমিনকে প্রধান আসামি করে শ্রীপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর তদন্তে নামে র‌্যাব। তদন্তের এক পর্যায়ে র‌্যাব জানতে পারে, আল আমিন জামালপুরের সদর থানার ফৌজদারি মোড় এলাকায় আত্মগোপনে আছে। তাৎক্ষণিভাবে র‌্যাব-১ পোড়া বাড়ি ক্যাম্প ও র‌্যাব-১৪ জামালপুর ক্যাম্পের যৌথ অভিযানে আল আমিনকে বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গ্রেপ্তার করে। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাবের কাছে আল আমিন তার স্ত্রী মিম আক্তারের গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।

র‌্যাব কমান্ডার বলেন, পারিবারিক সম্মতিতে ৭ মাস আগে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তাদের মধ্যে ছোট ছোট বিষয় নিয়ে কলহ লেগে থাকতো। স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে মিম একটি বাটন মোবাইল কিনে চান তার স্বামীর কাছে। সঙ্গে নতুন কাপড়, স্বর্ণের গয়না ও আংটিও চেয়েছিলেন। এসব নিয়ে তাদের মধ্যে কলহ আরও বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে বিয়ের সাত মাস পর গত ২৫ জুন স্ত্রীর গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যা করেন আল আমিন।

শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা জানান, এ ঘটনায় থানায় মামলা রুজু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুর ৩টার দিকে আল আমিনকে থানায় আনা হয়েছে। তাকে আগামীকাল (শুক্রবার) আদালতে পাঠানো হবে।

শিহাব খান/এএএ