লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৪ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া
বকেয়া ৪ কোটি ২১ লাখ ৪৫ হাজার ৯২৯ টাকা বিলের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ একাধিকবার চিঠি দিলেও পরিশোধ করেনি লক্ষ্মীপুর পৌরসভা। এতে অভিযান পরিচালনা করে একটি পানির পাম্প ও লক্ষ্মীপুর আধুনিক বিপনী বিতানের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় লক্ষ্মীপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
পরে প্রায় ২৭ লাখ টাকা পরিশোধ ও ১ মাসের মধ্যে পুরো বিল জমা দেওয়ার আশ্বাসে ৭ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সকালে লক্ষ্মীপুর বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল আমিনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বললে তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বিজ্ঞাপন
এদিকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় বিশুদ্ধ পানির ৪টি পাম্প রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাম্প হচ্ছে পৌর শহরের পুরাতন গোহাটা এলাকায়। এটি লক্ষ্মীপুর পৌরসভার প্রথম বিশুদ্ধ পানির পাম্প। ৩৮ হাজার গ্যালনের পানি সংরক্ষণের এ পাম্পের অধীনে প্রায় ৮ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা হারে (মিটারের বিল সংযুক্ত হয়) গ্রাহকরা বিল পরিশোধ করে আসছে। পানির বিল বকেয়া নেই বললেই চলে। এরপরও ৮৯ লাখ ৭ হাজার ১৮৪ টাকা বকেয়া বিলের কারণে পানির পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের ঘটনায় ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা।
অন্যদিকে লক্ষ্মীপুর স্থায়ী পৌর কার্যালয় ভেঙে কয়েক বছর আগে সেখানে বহুতল বিশিষ্ট আধুনিক বিপনী বিতান নির্মাণ করা হয়। তৃতীয় তলা পর্যন্ত দোকানগুলো চালু রয়েছে। কিন্তু সেখানে স্থান হয়নি পৌরসভা কার্যালয়ের। লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র প্রয়াত আবু তাহেরের আমলেই মার্কেটটি নির্মাণ করা হয়। পরে তিনি মার্কেটের সামনেই লক্ষ্মীপুর পৌর সুপার মার্কেটের চতুর্থ তলায় ভাড়া নিয়ে পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। সবশেষ মেয়র নির্বাচিত হয়ে মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া পৌরসভা কার্যালয় স্থানান্তরিত করেন। সেটাও ভাড়ায়। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি প্রয়াত আ ন ম ফজলুল করিমের মালিকানাধীন উত্তর তেমুহনী এলাকায় ইউনিক ভবনে। মাসে মোটা অংকের টাকা ভাড়া দিতে হয় ভবন মালিককে। এর মধ্যে নতুন মার্কেটটির বিদ্যুৎ বিল দোকান মালিকরা নির্দিষ্ট সময়েই দিয়ে আসছে বলে জানা গেছে। এরপরও ১৮ লাখ ৯০ হাজার ২৯৭ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার ঘটনায় মার্কেটের সংযোগ বিচ্ছিন্নের ঘটনায় ব্যবসায়ীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
আরও পড়ুন
লক্ষ্মীপুর বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ জানায়, গত মে মাস পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর বিদুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৪ কোটি ৭৯ লাখ ১ হাজার ৩৮ টাকা বিল বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ৪ কোটি ২১ লাখ ৪৫ হাজার ৯২৯ টাকা বকেয়া আছে। এছাড়া সরকারি কয়েকটি দপ্তরে ৪৬ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ ও বেসরকারি পর্যায়ে ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৫৮ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন লক্ষ্মীপুর পৌরসভার আওতাধীন পানির পাম্প, নগর পাম্প, আধুনিক বিপনি বিতান, পৌর সুপার মার্কেট, পুরাতন পৌরসভা অফিস, রাস্তার বাতিসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অফিসের বকেয়া বিল পরিশোধ করা হচ্ছে না। সবশেষ গত ২৬ মে ও ১ জুন বকেয়া পরিশোধের জন্য লক্ষ্মীপুর পৌরসভাকে নোটিশ দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। কিন্তু বিল পরিশোধ করেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। এজন্য মঙ্গলবার (২৫ জুন) বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের প্রকৌশলীরা গিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুরাতন গোহাটা পানির পাম্প ও লক্ষ্মীপুর আধুনিক বিপনী বিতানের সংযোগ কেটে দেন। তাৎক্ষণিক ২৭ লাখ টাকা পরিশোধ এবং এক মাসের মধ্যে বিল পরিশোধের নিশ্চয়তা পাওয়ার পর বিকেল ৫টার দিকে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়। এছাড়া লক্ষ্মীপুর পৌর সুপার মার্কেটে প্রায় ৪০ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে।
পৌরশহরের সমসেরাবাদ এলাকার বাসিন্দা তারেক হোসেন, আজগর হোসেন ও আহমেদ ফারুক জানায়, পুরাতন গোহাটার পাম্পের পানি সবচেয়ে ভালো। এ পাম্পে গ্রাহকও বেশি। লোডশেডিংয়ের কারণ দেখিয়ে অধিকাংশ সময় পানি দেওয়া হয় না। মানুষ পানি নিয়ে কষ্ট করে আসছে। তবুও গ্রাহকরা পানির বিল নিয়মিত পরিশোধ করে আসছে। এরপরও পৌরসভার বকেয়া বিলের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের ঘটনা হতাশাজনক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চক বাজার, লক্ষ্মীপুর পৌর সুপার মার্কেট ও লক্ষ্মীপুর আধুনিক বিপনী বিতানের ৫ জন ব্যবসায়ী জানায়, লক্ষ্মীপুর একটি স্থায়ী পৌরসভা কার্যালয় ছিল। কিন্তু এখন সেখানে একটি অত্যাধুনিক মার্কেট। আর পৌরসভা চলে ভাড়া ভবনে। বেচাকেনায় যাই হোক বিদ্যুৎ বিল নিয়মিত পরিশোধ করে আসছে দোকানিরা। মার্কেট পরিচালনাকারীরা ওই টাকা উত্তোলন করে। কিন্তু কী কারণে পৌরসভা বিল পরিশোধ করে না? তা বোধগম্য হচ্ছে না। জবাবদিহিতা নেই বলেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ওয়াটার সুপার মো. শামছুদ্দিন বলেন, বকেয়া বিলের কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরে ১ ঘণ্টার বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। পুরাতন গোহাটা সড়কের পানির পাম্পে প্রায় ৮ হাজার গ্রাহক রয়েছে।
বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া বলেছেন, এর আগে যিনি মেয়র ছিলেন তার আমলেই বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে। আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর বকেয়া বিলগুলো পরিশোধ করে আসছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকি বিল পরিশোধ করা হবে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের ঘটনায় ব্যবসায়ী ও পৌরবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি।
লক্ষ্মীপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল আমিন বলেন, একাধিকবার বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিল পরিশোধ করা হয়নি। এতে সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করতে হয়েছে। বিল পরিশোধের নিশ্চয়তা দেওয়ায় সংযোগ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বকেয়া বিলের জন্য একইদিন আমরা আরও ৯ জন গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি। পরে তারাও ১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ৪৯৭ টাকা বিল পরিশোধ করেছে।
হাসান মাহমুদ শাকিল/আরকে