৯ জন নিহতের পর বন্ধ করে দেওয়া হলো সেই সেতু
বরগুনার আমতলী উপজেলায় সেতু ভেঙে ৯ জন নিহতের পর সেতুর পাশে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে। ভাঙা সেতুতে আবারও যেন কোনো গাড়ি উঠে না পড়ে সেজন্য প্রবেশমুখে পুঁতে দেওয়া হয়েছে পিলার। মঙ্গলবার (২৫ জুন) এ সাইনবোর্ড ও পিলার পুঁতে দিয়েছে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ।
এছাড়াও আগামী শনিবারের মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ২০ থেকে ২৫টি ঝুঁকিপূর্ণ সেতুতে সাইনবোর্ড ও ব্যারিকেড দেওয়া হবে বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন আমতলী উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী মো. নিজাম উদ্দিন।
বিজ্ঞাপন
এর আগে গত ২১ জুন আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের উত্তর তক্তাবুনিয়া নামক এলাকার বাসিন্দা মাসুম বিল্লাহর মেয়ে হুমায়রা আক্তারের সঙ্গে একই উপজেলার পৌর শহরের বাসিন্দা সেলিম মাহমুদের ছেলে জিএম সাইফুর রহমান সোহাগের বিয়ে হয়। পরে ২২ জুন দুপুরে বরের বাড়িতে বউ ভাত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কনের পক্ষের লোকজন একটি মাইক্রোবাস ও একটি ইজিবাইক নিয়ে ওই বউ ভাত অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পরে বেলা দেড়টার দিকে তক্তাবুনিয়া-হলদিয়াহাট এলাকায় চাওড়া নদীর সেতু পার হওয়ার সময় সেতুটির মাঝের অংশ ভেঙে যায়। এতে মাইক্রোবাস ও ইজিবাইকটি নদীতে পড়ে ডুবে যায়।
এ সময় ইজিবাইকে থাকা যাত্রীরা সাঁতরে নদীর কিনারে উঠলেও মাইক্রোবাসের যাত্রীরা নদীতে ডুবে যান। পরে স্থানীয় লোকজন, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের দুটি দল দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ডুবে যাওয়া যাত্রীদের উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কনেপক্ষের ৯ জন যাত্রীকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হালকা যান নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে ৮৫ মিটার দৈর্ঘ্যের হলদিয়াহাট সেতুটি নির্মাণের জন্য ২০০৮ সালের ৩১ অক্টোবর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। সেতুটি নির্মাণের ৫ বছরের মধ্যেই এটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছরে সেতুটির আর কোনো সংস্কার কাজ করা হয়নি। তবে ঝুঁকি এড়াতে সেতুর পাশে ঝুঁকিপূর্ণ লেখা একটি সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি যান চলাচল রোধে সেতুর মুখে গাছ পুঁতে দেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে সেই গাছ তুলে যান চলাচল অব্যাহত থাকলেও আর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আমতলী উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ।
শুধু ওই একটি সেতুই নয়, হলদিয়া ইউনিয়নের ওই খালের ওপর নির্মিত প্রায় সবগুলো সেতুই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ইউনিয়নে আরও অনেকগুলো ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে। এসব সেতু দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। না হলে আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে আমার ইউনিয়নের বাসিন্দারা আমতলী উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
আমতলী উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী মো. নিজাম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভেঙে যাওয়া সেতুটিতে নতুন করে কোনো দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে এ কারণেই সেতুর পাশে ঝুঁকিপূর্ণ সাইনবোর্ড ও প্রবেশমুখে পিলার পুঁতে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আরও প্রায় ২০ থেকে ২৫টি ঝুঁকিপূর্ণ সেতুতে আগামী শনিবারের মধ্যে সাইনবোর্ড এবং ঝুঁকি বিবেচনায় প্রয়োজন হলে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বরগুনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকা থেকে আমাদেরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, আমরাও প্রয়োজন জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। শুধু আমতলী না জেলার সব সেতুর তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। যে সব সেতু একদমই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে সেগুলোতে সাইনবোর্ড সাঁটানোর পাশাপাশি সম্পূর্ণ আটকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বিশেষ করে আয়রন ব্রিজ স্টিল দিয়ে তৈরি করায় ওপর থেকে দেখে ভালো মনে হলেও পানির নিচে কি অবস্থায় আছে তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। পরবর্তীতে যেগুলো কম ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলোতে সাইনবোর্ড দেওয়ার পাশাপাশি যাতে সাইকেল রিকশা ছাড়া ভারী কোনো যান উঠতে না পারে সে ব্যবস্থা করা হবে।
আব্দুল আলীম/আরএআর