কৃষক মধু বিশ্বাস।

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের চর-আফড়া এলাকার বাসিন্দা কৃষক মধু বিশ্বাস (৫০)। গত শুক্রবার (২১ জুন) সকাল ১০টায় চর-আফড়া এলাকার পদ্মা নদীর চরে বাদাম তুলতে গেলে রাসেলস ভাইপার সাপ তাকে কামড় দেয়। পরে তাকে উদ্ধার করে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে অ্যান্টিভেনম দেওয়া হয়। এখন তিনি সুস্থ আছেন। 

কৃষক মধু বিশ্বাস পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের চরআফড়া গ্রামের মৃত আক্কেল বিশ্বাসের ছেলে।

জানা গেছে, কৃষক মধু বিশ্বাসসহ কয়েকজন কৃষক গত শুক্রবার সকালে চর-আফড়া এলাকার পদ্মা নদীর চরে বাদাম তুলতে যান। এ সময় মধু বিশ্বাসকে কামড় দেয় রাসেলস ভাইপার। তার চিৎকারে আশপাশের কৃষকরা এগিয়ে এসে সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন। পরে তাকে উদ্ধার করে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তাকে অ্যান্টিভেনম দেওয়া হয়।

কৃষক মধু বিশ্বাসের ভাইপো মোস্তফা কামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার চাচা মধু বিশ্বাসসহ আমরা কয়েকজন কৃষক গত শুক্রবার পদ্মার চরে বাদাম তুলতে যাই। তখন হঠাৎ আমার চাচা চিৎকার দিয়ে ওঠে। চাচার কাছে গিয়ে দেখি তার ডান হাতের কব্জির নিচে সাপ কামড় দিয়েছে। পরে আমরা লাঠিসোঁটা দিয়ে সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলি। এরপর মৃত সাপসহ চাচাকে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে যাই। চিকিৎসক সাপটিকে রাসেলস ভাইপার বলে চিহ্নিত করেন। পরে চিকিৎসক চাচাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে অ্যান্টিভেনম দেন। ওইদিন বিকালে আমরা চাচাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করি। চাচার শারীরিক অবস্থা এখন ভালো আছে। তার যে হাতে সাপ কামড় দিয়েছিল। সে হাত ধীরে ধীরে ফুলে যাচ্ছে। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছে, পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। 

পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শারমিন আহমদ তিথী ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত শুক্রবার মধু বিশ্বাস নামে এক কৃষককে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে তার শরীরে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা হয়। পরে তার পরিবার উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুরে নিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন,পাংশা উপজেলার পাশ দিয়ে পদ্মা নদী প্রবাহিত হয়েছে। আর রাসেলস ভাইপার সাপ চরাঞ্চলেই বেশি দেখা যাচ্ছে। সুতরাং সাপের কামড়ে কেউ আতঙ্কিত হয়ে ওঝার কাছে না গিয়ে সরাসরি হাসপাতালে আসতে হবে। পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিভেনম আছে। সাপের কামড়ে আক্রান্ত রোগী অ্যান্টিভেনম প্রয়োগে সুস্থ হয়।  

পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরি ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাসেল ভাইপার নামক সাপের কামড়ে আক্রান্ত কৃষক মধু বিশ্বাস সুস্থ আছেন। আমি সার্বক্ষণিক তার খোঁজ খবর রাখছি।

এ বিষয়ে রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহীম টিটন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পদ্মার চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপার সাপের উপদ্রব বেড়েছে। আমাদের প্রত্যেকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ও সিভিল সার্জন অফিসে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিভেনম মজুদ রয়েছে। কোনো ব্যক্তিকে সাপে কামড়ালে তাকে কবিরাজ বা ওঝার কাছে না নিয়ে গিয়ে সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।

তিনি আরও বলেন, রাসেলস ভাইপার ও অন্যান্য বিষধর সাপের অ্যান্টিভেনম একই। এই অ্যান্টিভেনম রোগীর শরীরে প্রবেশ করার একদিন পর্যন্ত রিঅ্যাকশন থাকে। পরে ঠিক হয়ে যায়। সাপে কাটা রোগীকে সঠিক সময়ে অ্যান্টিভেনম দিলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। 

মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এএএ