গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ঈদগাঁ ময়দান সংলগ্ন এলাকায় বানার নদের পাড় ভেঙে ধসে পড়েছে ৬টি বাড়ি। ধসে পড়ার আশঙ্কায় এখন আতঙ্কে দিন কাটছে আরও ২০ পরিবারের। আতঙ্কিত হয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশীর বাড়িতে।

ঈদুল আজহার আগের দিন ১৬ জুন থেকে বাড়িগুলো ধসে পড়তে থাকে। শনিবার (২২ জুন) পর্যন্ত সেখানে নদের পাড় ভেঙে ধসে গেছে ৬টি বাড়ি। বাড়িঘর হারিয়ে ওই পরিবারগুলোর ১৮ সদস্যের মানবেতর দিন কাটছে এখন।

স্থানীয়রা জানান, বানার নদের ফকির মজনু শাহ সেতুর ২শ মিটার পশ্চিমে কাপাসিয়া-শ্রীপুর সড়কের পাশে একটি মাদরাসা ও মসজিদ অবস্থিত। এছাড়া নদের পাড়ের কাছে প্রায় ৩শ মানুষের বসতি। তাদের মধ্যে বাবুল মিয়া, মো. রফিকুল ইসলাম, হেনা বেগম, কিরণ মিয়া, লিটন মিয়া ও সাবানা বেগমের বাড়ি ধসে নদের পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। ঘরের ভেতর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাদের নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র। একটি টিউবওয়েল দড়ি দিয়ে বেঁধে কোনোমতে রক্ষা করে রেখেছেন বাসিন্দারা। যেসব ঘর টিকে আছে সেগুলোর মেঝেতেও দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল।

সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রোববার মধ্যরাতে হঠাৎ ধস শুরু হয়। তারা সবাই ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। ভয়ে চিৎকার করে উঠে দেখেন ধসে পড়ছে ঘরবাড়ি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ অজ্ঞাত ব্যক্তিরা রাতের আঁধারে তাদের বসতি লাগোয়া এলাকায় বালু উত্তোলন করায় এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন তারা।

স্থানীয় বাবুল মিয়া জানান, হঠাৎ তার ঘরটি ধসে পড়ে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোনোমতে বেঁচে গেছেন। তবে সব হারিয়ে এখন তারা নিঃস্ব গৃহহীন। এক বছর আগে তাদের এলাকায় ২টি ঘর আংশিক ধসেছিল। এছাড়া সেখানে আগে কখনো এমন ধসের ঘটনা ঘটেনি। 

ধসে পড়া একটি ঘরে মো. রফিকুল ইসলাম থাকতেন তার পরিবারের ৯ সদস্যকে নিয়ে। তার ঘরটিও নদে ধসে গেছে। তিনি বলেন, নদে রাতের আধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে এমন ঘটনা ঘটছে। তবে কারা বালু উত্তোলন করেছে তা তিনি জানাতে পারেননি। 

হেনা বেগম নামের অপর এক নারী বলেন, স্বামী-স্ত্রীসহ আমরা ছয়জন একটি ঘরে থাকতাম। সেটি ভেঙে ধসে পড়েছে। তাদের মাথা গোঁজার অবশিষ্ট আর কিছু নেই।

জামিলা বেগম নামের এক বাসিন্দা বলেন, তার ঘর ধসে পড়েনি। তবে ঘরের মেঝেতে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। যে কোনো সময় সেটি ভেঙে পড়তে পারে। তিনি দ্রুত সমস্যা সমাধান করতে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা করতে অনুরোধ জানান।

পাখি বেগম বলেন, এক বছর ধরে বালু উত্তোলন বন্ধ আছে। তবে এর আগে বালু তুলে নেওয়ার ফলে নদের নিচে বালুর ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এখন আমাদের ঘর হারিয়ে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে।

কাপাসিয়া ঈদগাঁ মাঠ ও মসজিদ কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, নদের ভাঙন রোধে খুব দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ঈদগাহ ও মসজিদও ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল কালাম লুৎফর রহমান বলেন, স্থানীয় বসতি টিকিয়ে রাখতে এখানে বাঁধ দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছে।

শিহাব খান/আরকে