সংগৃহীত

সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় রাসেলস ভাইপার সাপ যেন এক নতুন আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে। বেশ কিছুদিন যাবৎ এই বিষধর সাপটি নিয়ে ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে নেতিবাচক খবর দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও এই সাপের কারণে মানুষ মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে চুয়াডাঙ্গায় রাসেলস ভাইপারের ছবিসহ ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। তবে চুয়াডাঙ্গায় এখনো রাসেল ভাইপারের সন্ধান মেলেনি বলে বিভিন্ন মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে। জেলার বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে বলা হচ্ছে দামুড়হুদার কামারপাড়ার রাসেল ভাইপারের কামড়ে শহিদুল ইসলাম নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এরপর সেই রাসেলস ভাইপার সাপটি পিটিয়ে মারার একটি ভিডিও জেলার বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি চুয়াডাঙ্গার নয়। দামুড়হুদার কামারপাড়ার যে সাপটি মারা হয়েছে সেই মৃত সাপটির নাম গোখরা বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার পরিবেশবাদী সংগঠন ‘পানকৌড়ি’র প্রতিষ্ঠাতা ও স্কুলশিক্ষক বখতিয়ার হামিদ।

এদিকে চুয়াডাঙ্গায় গত ১৯ দিনে অর্থাৎ ৩ জুন থেকে ২১ জুন বিকেল পর্যন্ত সাপের কামড়ে এক শিশু, স্কুল শিক্ষার্থীসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

জানা গেছে, ৩ জুন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের আড়িয়ার চক গ্রামের আহসান আলীর স্ত্রী সাজেদা বেগমকে (৪৫) মধ্যরাতে ঘুমন্ত অবস্থায় সাপ কামড় দেয়। পরে দুপুর ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

অপরদিকে চুয়াডাঙ্গার নুরনগর এলাকার আতিয়ার রহমানের ছেলে নবম শ্রেণির ছাত্র সিয়াম হোসেনকে (১৫) সাপের কামড়ে আহত অবস্থায় ৬ জুন সকাল ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে পরিবারের সদস্যরা। এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চিকিৎসারত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

অপরদিকে, মঙ্গলবার ১৮ জুন সকালে কৃষি কাজের সময় দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের কামারপাড়া গ্রামের মুনছুর আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪৫) সাপের কামড়ে আহত হয়। পরে পরিবারের লোকজন তাকে দ্রুত উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে কিছুক্ষণ পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

সর্বশেষ গত ২১ জুন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বড়বলদিয়া গ্রামের পশ্চিম পাড়ার কৃষক জাহিদুল ইসলামের ছেলে চার বছর বয়সী আজমির হোসেনের সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে থাকা ইঁদুরের গর্তে হাত দিলে সাপ কামড় দেয় শিশু আজমিরকে। পরে স্থানীয় ওঝা রবির কাছে নিলে তিনি সাপ নয়, ছুচোঁ কামড় দিয়েছে বলে জানান। কিছুক্ষণ পর শিশু আজমিরের শরীর কালো হতে থাকলে পরিবারের সদস্যরা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে শিশু আজমির।

এদিকে গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ সাপের বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম মজুদ আছে এবং সব হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিভেনম রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গায় সদর হাসপাতালে ১০০-১৫০ ডোজ (১০টায় ১টি ডোজ) অ্যান্টিভেনম মজুদ আছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

জেলার জীবননগর উপ‌জেলা স্বাস্থ্য ও প‌রিবার প‌রিকল্পনা অ‌ফিসার সাফাউল্লাহ নেওয়াজ বলেন, বেশ অ‌নেক দিন থে‌কে অ্যান্টিভেনমের চা‌হিদা দি‌য়ে এলেও আজ পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ তি‌নি পান‌নি।

আলমডাঙ্গা উপ‌জেলা স্বাস্থ্য ও প‌রিবার প‌রিকল্পনা অ‌ফিসার শার‌মিন আক্তার বলেন, আমাদের এখানে অ্যান্টিভেনম নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছে অ্যান্টিভেনম মজুদ রাখার। আগামী দুদিনের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে নিয়ে আসা হবে।

দামুড়হুদা উপ‌জেলা স্বাস্থ্য ও প‌রিবার প‌রিকল্পনা অ‌ফিসার হে‌লেনা আক্তার নিপা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমা‌দের স্বাস্থ্য কম‌প্লে‌ক্সে সা‌পে কাটা রোগীর অ্যান্টিভেনম মজুদ আ‌ছে। আ‌রও চা‌হিদা দেওয়া আ‌ছে। আশা কর‌ছি দ্রুত সম‌য়ে চা‌হিদা অনুযায়ী অ্যান্টিভেনম পে‌য়ে যা‌ব।

চুয়াডাঙ্গার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আউলিয়ার রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পর্যন্ত জেলায় রাসেল ভাইপার সাপে কেউ আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। যদি কেউ এই সাপে আক্রান্ত হয় দ্রুত নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে। আক্রান্ত কাউকে যেন ওঝার (কবিরাজ) কাছে নিয়ে কালক্ষেপণ না করা হয়।

তিনি আরও জানান, এছাড়া এই সাপের বিস্তার সম্পর্কে এখনো কোনো তথ্য মেলেনি। আমাদের পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম মজুত আছে। ঢাকায়ও অনেক আছে, প্রয়োজনে আমরা আরও নিয়ে আসব।

আফজালুল হক/আরকে