তিস্তা নদীর ওপর রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় শেখ হাসিনা সেতু নির্মাণ করা হয়। সেই সেতু দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে একাধিক স্থানে কার্পেটিংয়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া সংস্কার হওয়ার এক মাসের মাথায় উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং। এতে ঈদে ঢাকা ফেরা যাত্রীসহ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রংপুর ও লালমনিরহাটের সাধারণ মানুষ। তবে সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা এটিকে সরাসরি ফাটল না বলে হেয়ার লাইন ক্র্যাক বলেছেন।

শুক্রবার (২১ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, ‘গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু’ উত্তর পার্শ্বে প্রায় ৭ ফিট কার্পেটিংয়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি স্থানে স্প্যানের ঢালাইয়ের কিছু অংশ উঠে গেছে।

জানা গেছে, তিস্তা নদীর ওপর রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় শেখ হাসিনা সেতুর উদ্বোধন হয়েছে ৭ বছর আগে। উদ্বোধনের পর থেকে সেতুর ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল সাড়ে তিন বছর। দেড় বছর আগে বাস-ট্রাক চলাচল শুরু হলেও সংযোগ সড়ক দুর্বল হয়ে পড়ায় এখন আবার তা বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন করে সড়ক সংস্কার ও নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। পরে ট্রাক শ্রমিকরা চাপ দিলে সেতুর উত্তর প্রান্তে প্রতিবন্ধক খুঁটি বসানো হয়। পরে গত মাসখানেক আগে রংপুর থেকে কাকিনা পর্যন্ত পুরো রাস্তা সংস্কার করে ঠিকাদার। কিন্তু সংস্কারের এক মাসেই পিচ ঢালাই উঠে যাচ্ছে। এছাড়া সেতুর বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে।

এতে করে লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলাসহ বুড়িমারী স্থলবন্দরের শত শত ট্রাক ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন। এছাড়া সড়কটি দিয়ে লালমনিরহাট থেকে রংপুর শহরে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে আসা-যাওয়া করে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। এই সড়ক দিয়ে রংপুর শহরে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করে ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ। প্রতিদিন ছোট-বড় সাড়ে তিন হাজারের বেশি মালবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যান চলাচল করে।

স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রংপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে বুড়িরহাট থেকে মহিপুর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। সে বছরের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে ৯টি গুচ্ছে প্রায় ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে দরপত্র করে পুরো সড়কের কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে তিনটি প্যাকেজে সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে মাটির কাজ ও ৬টি প্যাকেজে ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক পাকাকরণের কাজ রয়েছে।

রংপুর থেকে ঘুরতে আসা শাহাজান (৪০) জানান, একটু আগে একটি অটো এখানে উল্টে যেতে ধরেছিল। ফাটলের জায়গায় কোনো সতর্কতার চিহ্ন না থাকায় আমি একটা লাল কাপড় খুঁজে নিয়ে এসে গাছের ডাল ভেঙে স্থানটিতে পুঁতে দিলাম। জরুরি পদক্ষেপ না নিলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটি সংস্কার করা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রকৌশলী মজিদুল ইসলাম বলেন, ওখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে না। শনিবার মিস্ত্রি কাজ করবে।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহির ইমাম জানান, সেতুটির একটি স্থানে পিচ উঠে গেছে, এমন খবর পেয়েছি। গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তিনি বিষয়টি দেখছেন।

রংপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজাহান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মূলত ভারী যানবহর চলাচলের ফলে সেতুর ২ ইঞ্চির পিচ ঢালাই উঠে গেছে। এতে করে সেতুর কোনো ক্ষতি হয়নি। তবুও আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেছি তারা এক্সপার্ট টিম ঢাকা থেকে পাঠাছেন। দুই দিনের মধ্যে এসে সেতুর সব স্থানের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মেরামত করা হবে। 

প্রসঙ্গত, গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু রংপুর জেলার গংগাচড়া উপজেলায় লালমনিরহাট-রংপুর মহাসড়কে তিস্তা নদীর উপর অবস্থিত একটি সেতু। এটি মহিপুর সেতু নামেও পরিচিত। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের জন্য লালমনিরহাটের পাটগ্রামে অবস্থিত বুড়িমারী স্থলবন্দরের সঙ্গে রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার দূরত্ব কমিয়ে আনতে তিস্তা নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়।

২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর উদ্বোধন করেন। পরে এটির নামকরণ করা হয় শেখ হাসিনা সেতু। সেতুটি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর এলাকার সঙ্গে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারি ইউনিয়নের মহিপুর এলাকাকে সড়কপথে যুক্ত করেছে। 

১২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ফুটপাতসহ ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থের সেতুতে রয়েছে ১৬টি পিলার, ১৭টি স্প্যান, ৮৫টি গার্ডার রয়েছে।

এমজে