গত কয়েক দিন ধরে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে গত তিন দিন ধরে পানি বাড়ার হার বেশি হওয়ায় যমুনা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে বন্যা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এতে ছোট থেকে মাঝারি আকারের বন্যা হতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

পাশাপাশি বন্যার আগে থেকেই ভাঙন শুরু হয় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর এলাকায়। সম্প্রতি পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন আরও বেড়েছে। ইতোমধ্যেই বিলীন হয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি। তবে সেখানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে কর্তৃপক্ষ। 

শুক্রবার (২১ জুন) সকালে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রঞ্জিত কুমার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ সকাল ৯টায় সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৯৭ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ২০ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৯০ মিটার)। 

অন্যদিকে কাজিপুরের মেঘাই পয়েন্টে একই সময়ে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৭১ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ২৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৯ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১৪ দশমিক ৮০ মিটার)। 

পাউবো সূত্রে জানা যায়, জুন মাসের শুরুতে যমুনায় পানি বাড়তে শুরু করে। ৩ জুন থেকে অস্বাভাবিকভাবে পানি বাড়লেও এক সপ্তাহ পর কমতে থাকে। এরপর ১৮ জুন থেকে আবারও বাড়ছে যমুনার পানি। এদিকে হু হু করে পানি বাড়ায় যমুনার অভ্যন্তরে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে চরাঞ্চলের ফসলি জমি। এতে বন্যা আতঙ্ক বিরাজ করছে চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে। 

অন্যদিকে শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর, খুকনী ও কৈজুরী ইউনিয়নের যমুনা অধ্যুষিত এলাকায় কয়েক বছর ধরেই ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি গ্রামের দেড় শতাধিক বাড়িঘর ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। বাস্তুহারা ও নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন ভাঙনকবলিত অসংখ্য মানুষ। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব এলাকায় ভাঙনও বেড়েছে। 

জালালপুর গ্রামের বাসিন্দা ও জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য মোছা. লাইলী বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে প্রত্যেক বছরেই ভাঙে। এবার বর্ষার আগে থেকেই ভাঙছে। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ভাঙন কবলিত মানুষগুলোর কষ্ট দেখলে নিজেরই খুব কষ্ট লাগে। কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারি না। আমাদের কাছে তেমন কোনো অনুদানও আসে না। সব ফসলি জমিতো আগেই ভেঙেছে, এ পর্যন্ত শতাধিক বাড়িঘরও নদীগর্ভে চলে গেছে। 

এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আরও দুই-তিন দিন যমুনায় পানি বাড়বে। এ সময় বিপৎসীমা অতিক্রম করে ছোট থেকে মাঝারি বন্যা হতে পারে। তবে এরপর পানি আবার কমবে। 

তিনি বলেন, নদীর তীর এলাকার কোথাও না কোথাও ভাঙবেই। জালালপুর এলাকায় নদী ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে। তবে ঈদের ছুটি থাকায় ভাঙন রোধে কোনো কাজ করা সম্ভব হয়নি। আপাতত ওই ভাঙন কবলিত এলাকায় জিও টিউব ফেলা শুরু করা হবে। 

তিনি আরও বলেন, এছাড়াও শাহজাদপুরে আমাদের একটি প্রকল্প অব্যাহত রয়েছে। যেটি জুন ২০২৪-এ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে কাজ শেষ না হওয়ায় আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এ প্রকল্পে সাড়ে ছয় কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ কাজ রয়েছে। যেটি এনায়েতপুর স্পার থেকে হাট পাঁচিল পর্যন্ত বিস্তৃত। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ার পরে অত্র এলাকার ভাঙন পুরোদমে রোধ করা যাবে।

শুভ কুমার ঘোষ/আরএআর