ফরিদপুরের নর্থ চ্যানেলের দুর্গম চরে বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে হোসেন ব্যাপারী (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (২১ জুন) বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। 

হোসেন ব্যাপারী ফরিদপুর সদর উপজেলার (কোতোয়ালি) নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পরেশউল্লা ব্যাপারীর ছেলে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তাকে সাপে কামড় দেয়। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

স্থানীয়রা জানান, হোসেন ব্যাপারী গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ জুন) দুপুর ২টার দিকে বাড়ির পাশের বাদাম ক্ষেতে কাজ করতে গিয়েছিলেন। সেখানে অসাবধানতার কারণে তাকে সাপে কামড় দেয়। এ সময় তার সঙ্গে কাজ করা অন্যরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। 

নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ২ নম্বর  ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে মাঠে কাজ করছিলেন হোসেন ব্যাপারী। এ সময় তাকে সাপে কামড় দেয়। কামড়ের ধরন দেখে আমরা বুঝতে পেরেছি এটি রাসেলস ভাইপারের কামড়। এজন্য দ্রুত তাকে ট্রলারে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে ঢাকায় নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। তার আগেই শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে মারা যান তিনি।

নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ওই লোক যখন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল তখন চিকিৎসকেরা তাদের পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছেন রাসেলস ভাইপার সাপে কামড় দিয়েছে। সেখান থেকেই বিষয়টা আমরা জেনেছি।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক হুমায়ুন কবিরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

এদিকে শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের চরধোলাইতে ক্ষেতে কাজ করার সময় একটি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখতে পান ডিক্রিরচর ইউনিয়নের আইজউদ্দীন মাতব্বরের ডাঙ্গি গ্রামের বাসিন্দা তোতা মোল্লার ছেলে মুরাদ মোল্লা (৪৫)। পরে তিনি সাপটি পিটিয়ে মেরে সিএন্ডবি ঘাট এলাকায় নিয়ে আসেন।

মুরাদ মোল্লা বলেন,  বাদামের জমিতে কাজ করার সময় সাপটি নজরে পড়ে। এরপর লাঠি এনে তিন-চারটি বাড়ি মেরে সাপটি মেরে ফেলি। 

ডিক্রির চর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ইউনিয়নের সিএন্ডবি ঘাট এলাকায় পদ্মা নদীর পাশে একটি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখে পিটিয়ে মারে এলাকাবাসী।

ডিক্রিরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, সম্প্রতি ওই এলাকায় রাসেলস ভাইপার সাপের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার  (২০ জুন) জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক  দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক প্রস্তুতি সভায় রাসেলস ভাইপার সাপের উপদ্রবে চরাঞ্চলের মানুষের উদ্বেগের বিষয়টি উল্লেখ করে রাসেলস ভাইপার সাপ মারতে পারলে পুরস্কার ঘোষণা করেন। 

তিনি বলেন, কেউ একটি রাসেলস ভাইপার সাপ মারতে পারলে তাকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। যতগুলো সাপ মারবে, ততবার এই পুরস্কার দেওয়া হবে। 

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এ ঘোষণা ছিল ২০১২ সালে প্রণীত বন্য প্রাণী সংসক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের লংঘন। কেননা ওই আইনে সরিসৃপ (সাপ জাতীয়) কোনো প্রাণী হত্যা আইনীত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করার কথা বলা হয়েছে।

শাহ মো. ইশতিয়াক তার অবস্থান পরিবর্তন করে শুক্রবার দুপুরে বলেছেন,  ওই ঘোষণা যখন দেওয়া হয় তখন এ সংক্রান্ত আইন সম্পর্কে তার জানা ছিল না। আর তাছাড়া ওই সভাটি কোনো পাবলিক জনসভা ছিল না, ছিল জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির ঘরোয়া সভা। তবে এ বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, রাসেলস ভাইপার জীবিত অবস্থায় ধরে বন বিভাগের কাছে সোপর্দ করা হলে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। পিটিয়ে মারা যাবে না। 

জহির হোসেন/আরএআর