গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বুধবার (১৯ জুন) রাত থেকে নতুন কিছু এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) দুপুর পর্যন্ত উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৬৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

গ্রামীণ রাস্তা, পুকুর, ঘরবাড়ি ও বিদ্যালয় প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এলাকাবাসী আশঙ্কা করছেন, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় বসতঘরে পানি উঠে যেতে পারে।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত উপদাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন বলছে, বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

জেলার ধনু, কংশ, সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার খুব কাছাকাছি রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান। এ ছাড়া জেলার প্রধান সবকটি নদীর পানিই বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে বলে জানিয়েছেন পাউবোর এই নির্বাহী প্রকৌশলী।

এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পূর্বধলা উপজেলার কংশ নদীর জারিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার, খালিয়াজুড়ি উপজেলার ধনু নদীর পানি ২৩ সেন্টিমিটার এবং দূর্গাপুর উপজেলার সোমেশ্বরী নদীর পানি দূর্গাপুর পয়েন্টে হ্রাস পেয়ে ১.৫৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কলমাকান্দা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাওর বেষ্টিত কলমাকান্দা সদর, বড়খাপন ও পোগলা ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রাম জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। উপজেলায় মোট ৬৫টি গ্রাম জলাবদ্ধ অবস্থায় আছে। হাওরের যে গ্রামগুলো বা বাড়ি আছে তাদের বাড়ির আঙিনায় পানি প্রবেশ করেছে, কিন্তু এখনো ঘরে পানি ওঠেনি। যে কারণে তাদেরকে এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে সরানোর প্রয়োজনীয়তা মনে করছি না। তবে আমাদের ৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। আমরা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছি, প্রয়োজন হলে আমরা যেকোনো সময় তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসব এবং আশ্রয়কেন্দ্রে যারা আসবেন তাদের জন্য প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার বা লজিস্টিক সাপোর্ট আমাদের প্রস্তুত আছে। ইতোমধ্যে পাঁচটি পরিবারের ২০-২৫ জন মানুষ বিশরপাশা প্রাইমারি স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।

জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, আমরা জেলা প্রশাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কমিটি গতকাল বুধবার মিটিং করেছি। সেখানে ইউএনও থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি সবাই ছিলেন। তাদের সঙ্গে বসে আমরা ঠিক করেছি কোথায় কোথায় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। আর আমরা আজকে কলমাকান্দা এসেছি। এখানে বেশকিছু জায়গা প্লাবিত হয়েছে, পাশাপাশি কিছু রাস্তা পানির নিচে চলে গেছে। খালিয়াজুরীতে কিছুটা বন্যার অবস্থা তৈরি হয়েছে। সেখানে কিছু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন তাদের খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আমরা সার্বিকভাবে নজরদারি রাখছি। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে মানুষের পাশে সব সময় আছি।

চয়ন দেবনাথ মুন্না/এমজেইউ