‘বাজার মাইর খাইছে, ৭০০ টাকায় চামড়া কিনে বিক্রি করছি ২৫০’
চামড়া সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাভারের ট্যানারি মালিকরা। এ ছাড়া ট্যানারিতে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে কাঁচা চামড়া। এতে সাভারের ট্যানারি পল্লীতে ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য। কাজের চাপ বেশি থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রমিক নিয়ে লবণ দেওয়ার কাজ করাচ্ছে ট্যানারি মালিকরা। তবে চামড়ার দাম নিয়ে ট্যানারি মালিকরা সন্তুষ্ট থাকলেও মৌসুমি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা হতাশার কথা বলছেন।
মঙ্গলবার (১৮ জুন) দুপুরে সাভার হরিণধারা এলাকায় বিসিক চামড়া শিল্প নগরীতে ঘুরে মালিক,আড়তদার ও শ্রমিকদের চামড়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। তবে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা চামড়ার গুণগত মান ঠিক থাকলেও দাম নিয়ে হতাশার কথা বলছেন।
বিজ্ঞাপন
মন্সিগঞ্জের বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসা থেকে চামড়া ক্রয় করে সাভারের মুসলিম ট্যানারিতে নিয়ে আসেন মৌসুমি ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মিজান। তিনি বলেন, মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসা থেকে ৭ হাজার পিস চামড়া সাভারের ট্যানারিতে নিয়ে এসেছি। আকারভেদে ৭৫০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকা দরে চামড়া ক্রয় করে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু ট্যানারিতে এখনো দাম নির্ধারণ করা হয়নি। লবণজাতকরণের পরে ট্যানারি মালিক দাম নির্ধারণ করবে।
আরও পড়ুন
অন্যদিকে রাজধানীর দক্ষিণখান থেকে চামড়া নিয়ে ট্যানারিতে এসেছেন ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন। দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ৩০৬ পিস চামড়া কিনেছি সাড়ে ৭০০ টাকা করে। কিন্তু আজকে বাজার মাইর খাইয়া গেছে। এখন আড়াইশ টাকা করে চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে। বাজার খুব খারাপ, প্রচুর টাকা লস হয়ে গেল আমাদের।’
আড়তদার হাজী মোহাম্মদ মোতাহার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা এখন নামধারী ব্যবসায়ী। পুঁজি ভেঙে খাচ্ছি। সরকার লবণযুক্ত চামড়ার দাম ১২০০ টাকা করেছে। কিন্তু কাঁচা চামড়া ৫০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে। তাও ব্যবসায় লোকসান গুনতে হচ্ছে।’
অপরদিকে ট্যানারি মালিক পক্ষের দাবি, সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া ক্রয় করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এ বছরের চামড়ার গুণগত মান ঠিক রয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে চামড়া ক্রয় করছেন ট্যানারি মালিকরা।
ইসলামীয়া ট্যানারি সুপারভাইজার আমানউল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা মৌসুমি ব্যবসায়ী এবং আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ করছি। ঈদের দিন গতকাল ও আজ সাড়ে চার হাজার চামড়া ক্রয় করেছি। এগুলো শ্রমিকদের মাধ্যমে লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ঢাকার বাইরের চামড়াগুলো সপ্তাহখানেক পরে সংরক্ষণ করা হবে।
অন্যদিকে এশিয়া ট্যানারির ব্যবস্থাপক ফারুক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার আবহাওয়া ভালো ছিল। কিন্তু কিছু কিছু অদক্ষ কারিগরের জন্য চামড়া সামান্য নষ্ট হয়েছে। এখনো ঢাকার বাইরের চামড়া আসেনি। আমাদের চাহিদা ২০-৩০ হাজার, কিন্তু মাল আসছে মাত্র দুই হাজার। চাহিদামতো এখনো চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তবে চামড়া দামের ক্ষেত্রে দুইটি গ্রেডে ভাগ করেছি। বড় চামড়াগুলো ‘এ’ গ্রেডে নেওয়া হয়েছে আর ছোট চামড়াগুলো ‘বি’ গ্রেডে। ‘এ’ গ্রেডের চামড়াগুলো ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে ক্রয় করা হচ্ছে এবং ‘বি’ গ্রেডের চামড়া সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দাম দেওয়া হয়েছে ।
লোটন আচার্য্য/এমজে