লোকসানেই চামড়া বিক্রি করে বাড়ি ফিরছেন ব্যবসায়ীরা
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটে ঈদ পরবর্তী প্রথম হাটে চামড়ার কেনা-বেচা জমেনি। মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাইরের জেলাগুলো থেকে বড় ব্যবসায়ী ও চামড়ার ক্রেতারা না আসায় প্রায় ক্রেতাশূন্য ছিল এ হাট। তবে কিছু সংখ্যক স্থানীয় ক্রেতা এ হাটে চামড়া কিনতে এসেছেন। তারা বলছেন, ট্যানারি মালিকরা চামড়ার টাকা বাকি রাখায় এবং বেশির ভাগ চামড়া বাতিল বলে ফিরিয়ে দেওয়ায় চামড়া কেনাবেচার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
যশোরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চামড়া সংগ্রহ করে বিক্রি করতে আসা ব্যাপারীদের অভিযোগ, সরকার ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও খোলা বাজারে সেই দামের সঙ্গে কোনো মিল নেই।
যশোরের কেশবপুর থেকে সাতটি ছাগলের চামড়া নিয়ে এসেছেন চন্দর দাস। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাতটি চামড়া খরচসহ কেনা দাম পড়েছে ৭৮০ টাকা। বিক্রি করতে এলে ক্রেতারা সাতটি চামড়ার দাম বলছে ১৫০ টাকা।
মনিরামপুর থেকে ১৪০ পিস ছাগলের চামড়া নিয়ে এসেছেন সঞ্জয় কুমার। তিনি বলেন, ১৪০ পিস চামড়ায় কেনা খরচসহ ২৫০০ টাকা গেছে। প্রতি পিস চামড়ার দাম বলছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। লোকসান গুনেই চামড়া বিক্রি করে দিতে হচ্ছে।
যশোর শহরের তালতলা এলাকার চামড়া ব্যাপারী সুবদ দাস বলেন, আমি গতকাল ১৭ পিস কোরবানির গরুর চামড়া ১১০০ টাকা করে কিনেছি। বিক্রি করতে এলে ক্রেতারা দাম বলছে ৯০০, সর্বোচ্চ ৯৫০ টাকা। আমরা চামড়া ব্যাপারীরা এবার শেষ।
মনিরামপুর উপজেলার চামড়া ব্যাপারী সজন দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৬পিস গরুর চামড়া ৮০০ টাকা করে কেনা। ৪ পিস বাতিল হয়েছে। এ চালানে ১৫০০ টাকা লস।
তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বছর বাইরের জেলা থেকে ৫০-১০০ জন ক্রেতা ও বড় বড় ব্যবসায়ী আসে। এ বছর বাইরের জেলা থেকে বড় ব্যবসায়ীরা না আসায় ঈদ পরবর্তী আজ প্রথম হাটে চামড়ার দাম কম। তাছাড়া বর্তমানে সবাই মাদরাসায় চামড়া দান করে দেন। এজন্য কেউ গরজ করে চামড়া ছাড়ায় না, চামড়া ছাড়াতে গিয়ে চামড়ায় ফুটো করে ফেলে যার কারণে অধিকাংশ চামড়া বাতিল বলে ফিরিয়ে দেয় ক্রেতারা।
উদয় সরকার নামের এক চামড়া ব্যাপারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, চামড়ার এ হাটে দাম কম, তার জন্য যে সামনের হাটের জন্য রেখে দেব সেই উপায়ও নেই। রেখে দিলে লবণ খরচ বেশি লাগবে। এজন্য লোকসান হলেও বিক্রি করেই বাড়ি ফিরতে হবে।
স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ী ও ক্রেতা প্রদীপ দাস বলেন, ট্যানারি মালিকরা আমাদের অনেক টাকা আটকে রেখেছে। তাছাড়া তারা অনেক চামড়া ফিরিয়ে দেয়। ফলে আমাদেরও লোকসানে পড়তে হয়। এজন্য চামড়ার দাম কম।
আরেক ক্রেতা শিবপদ দাস বলেন, আমরা স্থানীয় ব্যবসায়ী। চামড়া কিনে ঢাকায় পাঠাই, আমাদের বহন খরচ আছে। তারপরও আমাদের অনেক চামড়া তারা বাতিল বলে ফিরিয়ে দেয়। লবণের দাম বেশি, চামড়া সংরক্ষণে খরচ বেশি। তাছাড়া ট্যানারি মালিকরা আমাদের টাকা বাকি রাখায় আমরা ব্যাপারীদের কাছ থেকে ভালো দামে চামড়া কিনতে পারি না।
রাজারহাট চামড়া মোকামের ব্যবসায়ী নেতা আমিনুর পলাশ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজকে ঈদ পরবর্তী প্রথম হাটে চামড়ার দাম কম। বাইরের জেলা থেকে ক্রেতারা আসেনি। অনান্যবার নাটোর, পাবনা, ঢাকা, কুষ্টিয়া থেকে ক্রেতারা আসে। আমরা তারপরও চেষ্টা করছি সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে চামড়া কিনে ঢাকায় সরবরাহ করতে। আশা করি আগামী শনিবার সামনের হাটে বাজার জমজমাট হবে।
এ্যান্টনি দাস অপু/এমজেইউ