চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার আন্দিপুরাণ কমিউনিটি ক্লিনিকে যাওয়ার রাস্তা ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন পাঁচ গ্রামের মানুষেরা। তীব্র গরমে গ্রামের এই ক্লিনিকটিতে বিদ্যুৎ না থাকায় ভোগান্তিতে সেবাগ্রহীতারা। স্বাস্থ্যসেবা চরম ব্যাহত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়িয়া ইউনিয়নের আন্দিপুর গ্রামে ৮ শতক জমির ওপর কমিউনিটি ক্লিনিকটি প্রতিষ্ঠা হয় এবং এর কার্যক্রম ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হয়। তখন থেকেই ক্লিনিকটিতে বৈদ্যুতিক সংযোগ ও যাতায়াতের রাস্তা নেই। জামবাড়িয়া ইউনিয়ন থেকে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রায় ২৫ কিলোমিটার এবং নিজ উপজেলা ভোলাহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় প্রতিদিন এখানকার পাঁচটি গ্রামের গড়ে ৭০-৮০ জন রোগী এই কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্দিপুর কমিউনিটি ক্লিনিকটি চালু থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। এমনকি ক্লিনিকটিতে যাওয়ার পাঁকা রাস্তার সংযোগও নেই। এতে করে অসুস্থ, প্রতিবন্ধী, মা ও শিশুদের সমস্যা বেশি হয়। প্রত্যাশিত সেবা পেলেও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা না থাকায় গরমে কষ্ট পেতে হয়।

চিকিৎসা সেবা নিতে আসা নাহিদা বেগম বলেন, তীব্র গরমের কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে গ্রামের এই ক্লিনিকটিতে রোগী চিকিৎসা নিতে এসে গরমে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

হেলাপিপুর গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রেবেকা বেগম (৫০) বলেন, এই ক্লিনিকে আসার জন্য নির্দিষ্ট কোনো যাতায়াতের রাস্তা নেই। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দিয়ে যাতায়াত করতে অনেক সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

ক্লিনিকে কর্মরত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) আলমগীর বলেন, প্রতিদিন ক্লিনিকে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী হয়। কিন্ত ক্লিনিকটিতে শুরু থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। হাঁসফাঁস গরমে রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে। এছাড়া যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় রোগীদের আসা-যাওয়া কষ্টকর হচ্ছে।

কমিনিউটি ক্লিনিকটির সভাপতি ও জামবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান বলেন, বৈদ্যুতিক সংযোগ না থাকায় সেবাগ্রহীতারা গরমে ছটপট করছে। এখন জরুরিভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রয়োজন।

এছাড়া তিনি আরও বলেন, ক্লিনিকটিতে যাতায়াতের জন্য নিজস্ব কোনো রাস্তা নেই। অন্যের জমির ওপর দিয়ে সেবাগ্রহীতারা ক্লিনিকে যাওয়া আসা করে। ক্লিনিকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য খুঁটি ও বৈদুত্যিক তারের লাইন টানতে হবে। কিন্ত জমির মালিক বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন করতে দিচ্ছে না। এমতঅবস্থায় আমরা জমির মালিকের সাথে কথা বলছি এবং জমির মালিককে বুঝিয়ে রাস্তার জন্য জমি ক্রয়ের চেষ্টা করছি।

ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহবুব আলম বলেন, কমিনিউটি ক্লিনিকটিতে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়ার জন্য স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগে আবেদন করেছি। বৈদুত্যিক খুঁটি থেকে কমিনিউটি ক্লিনিকের সংযোগ তারটি স্থানীয় একজনের বাড়ির ওপর দিয়ে যাওয়ার কারণে তিনি বাধা দিচ্ছেন। এই বিষয়টি আমি জেলা সিভিল সার্জন স্যারকে জানিয়েছি। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের মিটিং আলোচনা করেছি। সামনের মিটিং এ আবারও বিষয়টি তুলে ধরব।

ভোলাহাট জোনাল পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. রেজাউল করিম বলেন, কমিনিউটি ক্লিনিকটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য আমাদের ডিজাইন রেডি আছে। আমরা ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য জনবল পাঠিয়েছিলাম কিন্ত স্থানীয় লোকজনের বাধার কারণে বিদ্যুৎ লাইনটির সংযোগ দিতে পারিনি।

ভোলাহাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিদা আক্তার বলেন, আমি একমাস আগে এই উপজেলায় যোগদান করিছি। আন্দিপুরাণ কমিউনিটি ক্লিনিকের বিষয়টি আমার অবগত ছিল না। আমি কমিনিউটি ক্লিনিকটিতে সরজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আশিক আলী/আরকে