ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভা ও আশপাশের অন্তত ৯টি গ্রামের মানুষকে নগরকান্দা উপজেলা সদরে যেতে নৌকায় পারাপার হতে হয়। নৌকায় নদ পারি দিতে অতিরিক্ত টাকা খরচসহ নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে ওই গ্রামগুলোর অন্তত আড়াই হাজার মানুষকে।

কুমার নদের পাড় ঘেঁষে ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌর এলাকায় অবস্থিত। নদের উত্তরে নগরকান্দা পৌরসভার  চৌমুখা ও দক্ষিণে গাঙ্গজগদিয়া মহল্লা অবস্থিত।

স্থানীয় কয়েকজন ব্যাক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১০ সালে পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের চৌমুখা ও সাত নম্বর ওয়ার্ডের গাঙ্গজগদিয়া এলাকায় কুমার নদের ওপর প্রায় ৯০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ২ মিটার প্রস্থের একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। সাড়ে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সাঁকোটি তৈরি করে নগরকান্দা পৌরসভা। পৌরসভার জুংগুরদী, শশা, সলিথা, গাঙ্গজগদিয়া, নগরকান্দা, কলেজ বালিয়া, মিনার গ্রামসহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম ও মহল্লার অন্তত আড়াই হাজার মানুষ এই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করত।

বিশেষত নগরকান্দা সরকারি মহেন্দ্র নারায়ণ একাডেমি, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আকরামুন্নেসা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, নগরকান্দা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আইডিয়াল হাইস্কুল, ইসলামী আদর্শ শিশু শিক্ষালয়, নগরকান্দা সরকারি মহাবিদ্যালয়, থানা, উপজেলা পরিষদ, সাবরেজিস্ট্রি অফিস, নগরকান্দা বাজারসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদের দক্ষিণে অবস্থিত।

এ জন্য নদের উত্তর দিকে অবস্থিত গ্রাম ও মহল্লার লোকজন ওই পথ ব্যবহার করে। ওই সাঁকো দিয়ে হাঁটার পাশাপাশি বাইসাইকেল নিয়েও যাতায়াত করা যেত। সংস্কার ও মেরামতের অভাবে ২০১৯ সালে সাঁকোটি ব্যাবহারের অনুপোযোগী হয়ে যায়।এরপর থেকেই নদের দুই পাড়ের মানুষদের যাতায়াতের জন্য একটি খেয়া নৌকা রয়েছে। এই নৌকা দিয়েই তাদের নদ পার হতে হয়। এই পথ দিয়ে না গেলে তাদের দুই কিলোমিটার দূরে তালমা- জয়বাংলা আঞ্চলিক সড়কের জুংগুরদি এলাকার বেইলি সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। ফলে ওই এলাকার মানুষের প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার পথ বেশি ঘুরতে হচ্ছে। প্রতিবার খেয়া পার হওয়ার জন্য জনপ্রতি ৫ টাকা করে দিতে হয়।

স্থানীয়রা আরও জানান, চৌমুখা ও জুংগুরদী গ্রামে বসবাসত বাসিন্দাদের অধিকাংশ লোকই ব্যবসায়ী। তাদের নগরকান্দা বাজারে বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এজন্য প্রতিদিন সকালে এসব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সময় এবং কারবার শেষ করে বাড়িতে ফেরার সময় খেয়া ঘাটে ভীড় লেগে যায়। এছাড়া সকালে স্কুল-কলেজে যাওয়া এবং ছুটির পর ভীড় বেড়ে যায় কয়েকগুণ।

নগরকান্দা বাজারের অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবসায়ী অয়ন মুন্না (২৫) বলেন, যখন এখানে আমাদের পারাপারের জন্য সাঁকো ছিল তখন আমরা ধরেই নিয়েছিলাম এই সাঁকোর পরেই এখানে সেতু হবে। সাঁকো ভেঙ্গে গেছে প্রায় পাঁচ বছর হল।এরপর থেকে খেয়া নৌকায়ই চলাচল করছি। সেতু আর হয়নি।

চৌমুখা মহল্লার বাসিন্দা বিচিত্রা সরকার (২৪) বলেন, আমাদের নগরকান্দা বাজারে যেতে হলে এইখানে ব্রিজ বা সাঁকো না থাকার কারণে অন্য জায়গা দিয়ে ঘুরে গেলে ২০ টাকা বা খেয়া পার হয়ে গেলে যাওয়া-আসা মিলিয়ে ১০ টাকা অতিরিক্ত গুণতে হয়। পৌরসভার বাসিন্দা হয়ে এখনও নৌকায় পার হওয়ার বিষয়টি ভাবতেও পারি না।

তিনি বলেন, অনেকসময় আমাদের এমন অনেক জরুরি প্রয়োজন থাকে তখন ঘাটে খেয়া থাকলেও মাঝি থাকে না। তখন বিড়ম্বনার শেষ থাকে না। এর থেকে কবে মুক্তি পাব আমরা জানি না।

নগরকান্দা পৌরসভার তিন নম্বর  ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রবীণ মাছ ব্যবসায়ী বন্ধুদাস মালো (৬২) বলেন, আমাদের এখানে যখন বাঁশের সাঁকো ছিল তখন আমরা মাছের ঝাঁকা মাথা নিয়ে সরাসরি বাজারে চলে যেতাম। এখন আমাদের ভ্যানে করে দুই কিরোমিটার ঘুরে বেশি টাকা খরচ করে মাছ নিয়ে বাজারে যেতে হয়। এতে সময় ও খরচ এই দুইয়ের অপচয় বেড়েছে। পৌরসভার মেয়রের কাছে আমাদের দীর্ঘদিনের দাবী ছিল একটা আরসিসি সেতু নির্মাণের। তা কবে চোখে দেখে যেতে পারব কী না জানি না।

এখানে পাঁচ বছর ধরে খেয়া নৌকায় মানুষ পারাপার করছেন চৌমুখা গ্রামের বাসিন্দা দিলীপ কুমার দাস (৫৬)। তিনি বলেন, খেয়া নৌকায় প্রতিবারে দশ থেকে বারো জন করে প্রতিদিন সহস্রাধিক লোক পার করা হয়। এদের বেশির ভাগই স্কুল-কলেজর শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, রাতে এবং দুপুরের খাবারের সময়সহ অনেক সময় আমি ঘাটে থাকতে পারি না। তখন এখানের মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না। 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নগরকান্দা উপজেলা প্রকৌশলী মো. মোশাররফ হোসেন বলেন,যেহেতু জায়গাটি পৌরসভার আওতাধীন এজন্য সেখানে সেতু করা সম্ভব কী না এর সম্ভাব্যতা পৌর কর্তৃপক্ষকেই নিরুপণ করতে হবে। সাময়িক চলাচলের জন্য ওখানে আগের মত বাঁশের সাঁকোর ব্যাবস্থার কথা তারা ভেবে দেখতে পারেন।

জানতে চাইলে নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র নিমাই চন্দ্র সরকার বলেন, আমি তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর থাকাকালীন সময়ে বেশ কয়েকবছর আগে ওখানে একটি আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়াত সংসদ সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ডিও লেটার নিয়ে  স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগে যোগাযোগ করেছিলাম। সেখান থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি।তবে বর্তমানে পৌরসভার সীমানার মধ্যে তাদের এসব কাজ করার সুযোগও কম। ওই নয় গ্রামের মানুষদের পারাপারের জন্য খুবই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এখানে একটি সেতু নির্মাণ করার ব্যাপারে পুনরায় উদ্যোগ নেব।

জহির হোসেন/আরকে