গ্রামীণ ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ছিলেন বিলকিছ আক্তার। ১৮ বছর পর নিজ থেকেই চাকরি ছেড়ে দেন। ২০২১ সালে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণে ২ লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে দুইটি গাভী ক্রয় করেন তিনি। তারপর থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। 

বর্তমানে বিলকিছ আক্তারের খামারে ১৭টি গরু রয়েছে। এই খামারকে কেন্দ্র করে তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় অর্ধকোটি টাকা। বিলকিছ আক্তারের এ সাফল্যে পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা ফেরার পাশাপাশি তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

বিলকিছ আক্তার নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার কবিরহাট পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের ঘোষবাগ গ্রামের আলি আজম মুন্সী বাড়ির মো. আব্দুর রবের স্ত্রী। স্বামী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তার সংসার। 

সম্প্রতি সরেজমিনে বিলকিছের খামারে গিয়ে দেখা যায়, খামারটি তার বসতঘরের পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে। খামারের ভেতরে তার বড় মেয়ে সায়মা রহমান ও ছেলে ফজলুল হক সিয়াম কাজ করছেন। কেউ গাভীর পরিচর্যা করছেন, কেউ আবার খাবার খাইয়ে দিচ্ছেন। পাশে দাঁড়িয়ে বিলকিছ আক্তার দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

বিলকিছ আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ফেনীর সোনাগাজীতে গ্রামীণ ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ছিলাম। আমার স্বামীও ব্যাংকার। আমি প্রায় ১৮ বছর চাকরি করেছি। আমার চাকরির আরও ১৭ বছর ছিল। আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণে ২ লাখ টাকা দিয়ে বাছুরসহ দুইটা গাভী ক্রয় করি। তারপর থেকে আমার খামারে গরু বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে আমার খামারে ১৭টি গরু ও বাছুর আছে। যাদের আনুমানিক দাম ২৫ লাখ টাকার ওপরে। এ বছর কোরবানিতে ৫টি গরু সাত লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। আলহামদুলিল্লাহ ভালো টাকা লাভ হয়েছে। 

তবে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে খামারি হওয়ার পথটা সহজ ছিল না বিলকিছ আক্তারের। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি শুরুর দিকে দুধ বিক্রি করতাম। ধীরে ধীরে আমার খামার দ্রুত বড় হতে থাকে। দুধের পাশাপাশি গরুও বিক্রি করতে শুরু করি। আয় বাড়লে নতুন গরু কিনি। শুরুতে অনেকেই ভালোভাবে নিয়েছেন আবার অনেকেই নেননি। তবে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আমির হোসেন আমাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেছেন। চার বছরে তিনি আমাকে অভিভাবকের মতো সহযোগিতা করেছেন।

বিলকিছ আক্তার আরও বলেন, আমার খামারে শ্রমিক আছে। পাশাপাশি আমার ছেলে সিয়াম ও মেয়ে সায়মা পড়াশোনার পাশাপাশি আমাকে সময় দেয়। আমি সকাল ৭টার দিকে খামারে আসি তারপর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তাদের খাবার দিয়ে নিজের সংসারের কাজ করি। আমি চাই সবাই যেন প্রতিষ্ঠিত হয়, সে পুরুষ হোক বা মহিলা। কাউকে অন্যের ওপর যেন নির্ভরশীল হতে না হয়। আমি মহিলা হয়েও ব্যবসা করে আত্মনির্ভরশীল হয়েছি। এটাই আমার ভালো লাগা। আমার দেখাদেখি অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন।

বিলকিছ আক্তারের ছেলে ফজলুল হক সিয়াম ও মেয়ে সায়মা রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি আমরা মাকে সহযোগিতা করি। আমার মা যেভাবে গরুকে আদর যত্ন করে আমরাও তাই করি। আমার মা সফল হয়েছেন আমরা এই সফলতা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করব।

 

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আমির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিলকিছ আক্তার একজন সফল খামারি। তাকে দেখে এলাকার অনেকেই খামার করতে উৎসাহী হচ্ছেন। শুরুতে বেশ কিছু সমস্যা হয়েছে। আমি চেষ্টা করেছি সহযোগিতা করার জন্য। তিনি আমাকে ফোন দিলে আমি শত ব্যস্ততার ভেতরেও ফোন ব্যাক করেছি। খবর নিয়েছি। আমার চোখের সামনে তার খামারের বেড়ে ওঠা। তিনি চেষ্টা করেছেন এবং সফল হয়েছেন। নারীরা পারে না এমন বলার সুযোগ নেই। এভাবে আত্মনির্ভরশীল হলে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাবে। 

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রাণিসম্পদে দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে নারীরা পিছিয়ে নেই। একটা দুইটা গাভী দিয়ে তারা বিশাল খামার করে ফেলছেন। এতে অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়। বিলকিছ আক্তার তেমনি একজন। আমরা তার সফলতা কামনা করি। এমন খামারীদের পাশে আমাদের প্রাণিসম্পদ বিভাগ রয়েছে। প্রাণিসম্পদে দেশ পরিপূর্ণ হলেই স্বপ্নের সোনার বাংলা ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে।

হাসিব আল আমিন/আরকে