আপত্তিকর ছবি তুলে রেখে কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ১১ দিন পর মামলা
ফরিদপুরের মধুখালীতে আপত্তিকর ছবি তুলে ফাঁদে ফেলে এক কিশোরীকে (১৬) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে মধুখালী থানায় মামলা করেছেন। মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে মোট পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
ঘটনার ১১দিন পর গত ১১ জুন মধুখালী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এ মামলাটি করা হলেও গত তিন দিনেও কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। পাশাপাশি ওই কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে শুক্রবার (১৪ জুন) পর্যন্তও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
বিজ্ঞাপন
মামলার এজাহারভুক্ত তিন আসামি হলেন- উপজেলার সদরের রেলগেট এলাকার অন্তর জামান অন্তু (২৬), গোন্দারদিয়া গ্রামের সোহান শাহ (২৭) ও গারাখোলা এলাকার তুহিন বিশ্বাস (৩৪)।
ওই কিশোরী জানায়, প্রায় দেড় মাস আগে সে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য গেলে একপর্যায়ে অন্তর জামান অন্তু এবং তুহিন বিশ্বাস নামে দুই ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির সঙ্গেু পরিচয় হয়। তারা দুজন ওই কিশোরীকে সাহায্যের নামে সখ্যতা গড়ে তোলে। এরপর ওই কিশোরীকে ঘুরতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে আপত্তিকর ছবি তুলে রাখে। ধর্ষণের ওই ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার নাম করে দীর্ঘদিন অন্তু এবং তুহিন কিশোরীকে জিম্মি করে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করতে থাকে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্তু এবং তুহিন ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করলেও তারা মাদকসেবী। সে সূত্রে মাদক কেনাবেচার সময় মাদককারবারি সোহান শাহের কাছ থেকে ফ্রি মাদক পেতে ভুক্তভোগী কিশোরীর আপত্তিকর অবস্থার ছবি সোহানকে দেয় অন্তু এবং তুহিন। এরপর মাদক ব্যবসায়ী সোহান কিশোরীকে ওই ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করে আসছিল। এর আগে সোহান ইয়াবাসহ মধুখালী থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল।
গত ৩১ মে রাতে ভুক্তভোগী কিশোরীকে উপজেলার মরিচ বাজার সংলগ্ন সোহানের ভাতিজার বাড়িতে নিয়ে যান অন্তু এবং তুহিন। সেখানে অন্তু, তুহিন ও সোহান ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই কিশোরীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৩টার দিকে ওই কিশোরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসে পেটে ব্যথার জন্য চিকিৎসা নিতে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক ইমরান হোসেন তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু ধর্ষণকারীরা স্থানীয়ভাবে ক্ষমতাশালী হওয়ায় অসহায় কৃষক পরিবারের ওই কিশোরী বাড়ি ফিরে আসে। এরপর থেকে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ধর্ষণকারীরা কিশোরীর পরিবারকে নানা ভয়ভীতি ও চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।
মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ইমরান হোসাইন বলেন, সেদিন (১৩ মে) রাত ৩টার পরে মেয়েটি হাসপাতালে আসে। মেয়েটি প্রথমে জানায় তার পেটে ব্যথা হয়েছে। পরে সে ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে জানায়। তখন আমি আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ব্যবস্থা না থাকায় তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠিয়ে দেই।
এরপর মেয়েটির চাচার মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে বিষয়টি দফারফা করা হয় বলে জানা গেছে। এ কারণে ওই কিশোরীর পরিবার ধর্ষণের বিষয়টি কাউকে জানায়নি। ওই সময় কিশোরীর চাচা দাবি করেছিল, তার ভাতিজি ধর্ষণের শিকার হয়নি।
গত ৯ জুন ওই কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে এ রকম একটি ভিডিও সাক্ষাৎকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে ওই কিশোরী জানায়, পূর্ব পরিচিতির সূত্র ধরে সে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। পরে তার আপত্তিকর ছবি তুলে ওই ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তাকে ক্রমাগত ধর্ষণ করা হয়। এরপর কিশোরী তার সাথে ঘটে যাওয়া সব দুঃসহ ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনিয়ে হইচই শুরু হয়। এ প্রেক্ষাপটে গত ১১ জুন ওই কিশোরীর বাবা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে থানায় মামলা করেন।
মধুখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজ হোসেন বলেন, এ ঘটনাটি আমরা বেশ কিছুদিন ধরেই শুনছিলাম। মেয়ের বাবাকে থানায় ডেকেও আনা হয়। কিন্তু তিনি মেয়ের ধর্ষণ হওয়ার কথা অস্বীকার করেন। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেয়ের বক্তব্য ভাইরাল হওয়ার পর গত ১১ জুন তার বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে তিনজনের নাম উল্লেখ করে পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন।
ওসি বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তবে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। ওই কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষা এখনো পুলিশের উদ্যোগে করা হয়নি। ঘটনার পরপরই মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওই কিশোরী এবং চিকিৎসকের বক্তব্য আমাদের কাছে রয়েছে। যা প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা প্রমাণ করেছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রুত শারিরিক পরীক্ষা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
জহির হোসেন/আরএআর