লালমনিরহাটে গরু ব্যবসায়ীকে মারধর ও চাঁদাবাজির অভিযোগে জেলা ছাত্রলীগের সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি রাশেদ জামান বিলাসসহ ৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। শুক্রবার (১৪ জুন) দুপুর ১২টার দিকে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কের আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞাপ্তিতে অভিযুক্ত বিলাসকে স্বীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

মানববন্ধনে এলাকাবাসী তাদের বক্তব্যে জানান, লালমনিরহাট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ জামান বিলাস ছাত্রলীগের পদ পেয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে চাঁদাবাজি শুরু করেন। তার আচরণে অতিষ্ট এলাকার ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। গত ৯ জুন দুপুরে আদালত চত্বর থেকে বের হতেই আইয়ুব আলী নামে এক গরু ব্যবসায়ীকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে মারপিট করে আটকে রেখে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এরপর আড়াই লাখ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনায় সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েও মামলা নথিভুক্ত করেনি পুলিশ। সদ্য অব্যাহতি প্রাপ্ত জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ জামান বিলাসসহ চাঁদাবাজির ঘটনায় অভিযুক্ত ৬ নেতাকর্মীর গ্রেপ্তার দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।

ভুক্তভোগী গরু ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী বিলাস বাহিনীর নির্যাতন ও বন্দিদশার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন। এ সময় কিশামত চড়িতাবাড়ি গ্রামের তোতা মিয়া, শাহ আলম, আজিজার রহমান বক্তব্য রাখেন।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠন বিরোধী, শৃঙ্খলা পরিপন্থী, অপরাধমূলক এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে লালমনিরহাট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ জামান বিলাসকে স্বীয় পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।

এর আগে সোমবার (১০ জুন) রাতে লালমনিরহাট সদর থানায় সভাপতি বিলাসসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ দায়ের করেন একজন গরু ব্যবসায়ী। অভিযোগে দাবি করা হয়, তার হাত-পা বেঁধে আটকে রেখে আড়াই লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন লালমনিরহাট জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রাশেদ জামান বিলাসসহ অভিযুক্তরা।
 
থানায় করা অভিযোগসূত্রে জানা যায়, আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের তালুক দুলালী গ্রামের মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে গরু ব্যবসায়ী  আইয়ুব আলী রোববার (৯ জুন) লালমনিরহাট আদালতে একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে বের হচ্ছিলেন।

এসময় তিনটি মোটরসাইকেলে করে পাঁচ যুবক এসে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি বিলাসের কথা বলে তাকে মোটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে যান। তারা প্রথমে লালমনিরহাট মর্গের নির্জন এলাকায় নিয়ে ওই গরু ব্যবসায়ীকে মারধর করেন। সেখানে বিলাস ছিলেন। এ সময় মারপিট থেকে বাঁচতে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি বিলাসের পা ধরেও রক্ষা পাননি আইয়ুব। মারধরের পর তারা তার পকেটে থাকা ২০ হাজার টাকা কেড়ে নেন।  

এরপর তাকে বিজিবি ক্যান্টিন মোড়ে ছাত্রলীগ সভাপতি বিলাসের ব্যক্তিগত চেম্বারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার হাত-পা বেঁধে মারধর করে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। অবশেষে তা আড়াই লাখে সমাধান হলে গরু ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী তার স্ত্রীকে ফোন করে বিকেলে দুই লাখ ২০ হাজার আনিয়ে দিলে আইয়ুবকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নিলে বা কাউকে বললে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয় তাকে।  

সোমবার লালমনিরহাট সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী গরু ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী। বাকি অভিযুক্তরা হলেন, সৌরভ টেরা, রায়হান, রব্বানী, বাবু ও তুষার। তারা সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও বিলাসের সঙ্গী।  

এর আগেও রাজধানী ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি হুমাইয়ুন কবির হিরু'র ওপর হামলা চালিয়ে আলোচনায় আসেন লালমনিরহাট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ জামান বিলাস। এ ঘটনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিলাসের বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজির মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি হুমায়ুন কবির হিরু বলেন, অব্যাহতি পত্রের বিজ্ঞাপ্তিটি সঠিক। সাংগঠনিকভাবে জেলা কমিটিকে জানানো হয়েছে। তবে নতুন করে কে বা কারা ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব পালন করবেন তা জানানো হয়নি। সহ সভাপতির প্রায় সকলে বিবাহিত ও চাকরি করলেও মাত্র  দুইজন রয়েছেন অবিবাহিত।

লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগটি তদন্ত চলছে। এখন পর্যন্ত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়নি।

নিয়াজ আহমেদ সিপন/আরকে