জমে উঠেছে পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে কোরবানি পশুর হাট। জেলার হাটগুলোতে বিভিন্ন জাতের গরু তোলা হলেও ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে পাহাড়ি দেশি গরু। যা ‘রেড চিটাগং’ হিসেবে পরিচিত। নজরকাড়া রঙে এই জাতের গরু দেখতে যেমন সুন্দর, চর্বিমুক্ত হওয়ায় এর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও কম। চমৎকার দৈহিক গঠনে কোরবানির হাটে ক্রেতাদের সহজেই চোখে পড়ে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কাপ্তাই হ্রদের বুক চিরে পাহাড়ি বিভিন্ন এলাকা থেকে ইঞ্জিনচালিত বোটে শহরের ট্রাক টার্মিনালের গরুর হাটে আনা হচ্ছে পাহাড়ি দেশি গরু। এই চিত্র এখন নিত্যদিনের। গরুগুলো সারা বছর পাহাড়ি এলাকায় চড়ে বেড়ায়। গোখাদ্য হিসেবে স্থানীয়ভাবে জন্মানো সবুজ ঘাস খাওয়ানোর ফলে গরুগুলোর দৈহিক গঠন যেমন সুন্দর, তেমনি এর মাংসে চর্বিও কম থাকে। ইনজেকশন কিংবা রাসায়নিক কোনও উপাদান এদের দেওয়া হয় না। যার ফলে কোরবানি হাটে এই গরুর চাহিদাও তুঙ্গে।

সুবলংয়ের বন্দুকভাঙা ইউনিয়ন থেকে গরু নিয়ে এসেছেন খামারি শংকর জ্যোতি চাকমা। তিনি বলেন, আমি সবসময় দেশি জাতের গরু লালন পালন করি এবং প্রতি বছর বোটে করে গরু এনে এই হাটে বিক্রি করি। এই গরুগুলোর চাহিদা ভালো থাকায় বেশ ভালো দামে বিক্রি করতে পারি।

আরেক খামারি বিশ্বজিৎ কর্মকার বলেন, অন্যান্য গরুর তুলনায় আমাদের পাহাড়ি গরুর চাহিদা বেশি। আমি ২৫টি গরু নিয়ে হাটে এসেছিলাম, একটি বিক্রি হয়ে গেছে। বাকিগুলোরও দরদাম চলছে। এই গরুগুলো বেশিরভাগই রাঙামাটির বাইরে চলে যাবে।

ঘাটে বোট ভিড়তেই বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যাপারীরা গরুর দরদাম করে নিয়ে যাচ্ছেন। কোরবান উপলক্ষ্যে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ ট্রাক পাহাড়ি গরু বিভিন্ন জেলায় নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয় হাটেও রয়েছে এই জাতের গরুর কদর। রেড চিটাগাং জনপ্রিয় হওয়ার একটি বিশেষ কারণ হল, এর মাংস খুবই সুস্বাদু এবং পাহাড়ের নির্মল পরিবেশে সম্পূর্ণ রাসায়নিকমুক্তভাবে বেড়ে উঠে। এদের মাংসের মধ্যে চর্বির পরিমাণ কম হওয়ায় স্বাস্থ্যের জন্য কম ক্ষতিকর। চমৎকার দৈহিক গঠনে কোরবানির হাটে ক্রেতাদের সহজেই চোখে পড়ে।

গরুর ব্যাপারী আমজাদ মিয়া বলেন, আমাদের ওখানে পাহাড়ি জাতের গরুগুলোর চাহিদা বেশি। তাই আমি প্রতি বছর রাঙামাটি থেকে গরু কিনে নিয়ে গিয়ে চট্টগ্রামে বিক্রি করি। ওখানে দামও ভালো পাই। আজ ১৩টি গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছি।

আরেক ব্যাপারী সবুজ তালুকদার বলেন, আমার বাড়ি জুরাছড়ি উপজেলায় হলেও আমি ওখান থেকে গরু কিনে নিয়ে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া উপজেলায় বিক্রি করি। এই গরুগুলো পাহাড়ে চড়ে স্বাভাবিক ঘাস লতাপাতা খেয়ে বড় হওয়াতে এগুলোতে চর্বিও থাকে না, আর এগুলোকে ইনজেকশনও দেওয়া হয় না। তাই এই গরুগুলোর চাহিদা সব জায়গায় বেশি।

ক্রেতাদের মধ্যেও রেড চিটাগাং নিয়ে উৎসাহটা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। ক্রেতা জসিম উদ্দিন বলেন, পাহাড়ি গরুর চাহিদা সবসময়ই বেশি থাকে। আমাদের রাঙামাটির বাইরের বন্ধুরা রাঙামাটি এসে এই গরু কিনে নিয়ে যায়। আমি একটি গরু দেখেছি, দামদরে ঠিকঠাক হলে নিয়ে নেব।

ক্রেতা সোবাহান সরদার বলেন, পাহাড়ি দেশি গরু কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর দামটা বেশি মনে হচ্ছে।

পাহাড়ি দেশি গরুর চাহিদার কারণে এলাকার চাহিদার মিটিয়ে বাইরেও নেওয়া হচ্ছে বলে জানান পশুর হাটের ইজারাদার মো. রুহুল আমীন। তিনি বলেন, রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলা থেকে যথেষ্ট পরিমাণ পাহাড়ি গরু হাটে এসেছে। এই গরুগুলোর চাহিদা বেশি থাকার কারণে চট্টগ্রাম, রাঙ্গুনীয়া, রাউজান, রাণীরহাটসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন গরু কিনতে আসছে। আশা করছি এই হাট আগামীকালের মধ্যে বেশ জমজমাট হয়ে উঠবে।

জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. একেএম ফজলুল হক বলেন, চর্বিমুক্ত হওয়ায় রেড চিটাগাং গরুর চাহিদা ও উৎপাদন পাহাড়ি এলাকায় বেশি। পাশাপাশি এর মাংসও যথেষ্ট সুস্বাদু। এসব গরু পাহাড়ে চড়ে বড় হয় বিধায় এদেরকে কৃত্রিমভাবে মোটাতাজাকরণ করা হয় না। তাই এসব গরু রাঙামাটি তো বটেই সারা দেশেই বেশ জনপ্রিয়।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, আসন্ন কোরবানিতে রাঙামাটিতে ১৯টি হাটের মাধ্যমে পশু কেনাবেচা হচ্ছে। এবছর জেলায় পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৯ হাজার ৯৫২টি। এর বিপরীতে বিভিন্ন খামারে ও ব্যক্তি উদ্যোগে কোরবানির পশু প্রস্তুত আছে ৬৪ হাজার ৯৯৮টি।

মিশু মল্লিক/পিএইচ