ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে বাগেরহাটে জমে উঠেছে পশুর হাট। পরম যত্নে লালন-পালন করা কোরবানির পশু ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম হাটগুলো। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে কোরবানির জন্য পশু কিনতে হাটে আসছে নানা বয়সী মানুষ। দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিন্ন মত থাকলেও বিক্রি বেড়েছে।

বাগেরহাটে স্থায়ী-অস্থায়ী ৩০টি হাটে এবার কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। জেলার সব থেকে বড় পশুর হাট ফকিরহাটের বেতাগা হাট। শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেলে এই হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। বিক্রিও হয়েছে ভালো। এই হাটে বিকেল পর্যন্ত দুই হাজার পশু বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইজারাদার। 

হাট থেকে গরু কিনতে আসা খুলনার দাকোপ উপজেলার বাজুয়া এলাকার মো. নয়ন বলেন, অনেকক্ষণ ঘুরে একটা গরু কিনলাম। সাথে বাচ্চারা ছিল, সবার পছন্দ হয়েছে। তবে দামটা একটু বেশি মনে হয়েছে।

মেয়েকে নিয়ে গরু কিনতে আসা মানজুরুল করিম বলেন, আগে তিনটি হাট দেখেছি, চাহিদামতো গরু দামে না হওয়ায় কিনতে পারিনি। অপেক্ষা করছি, মোটামুটি সাধ্যের মধ্যে কিনে নিয়ে যাব।

কেউ কেউ অপেক্ষা করছেন শেষ দিনের হাটের জন্য। কারণ গরু কিনে বাড়িতে নিয়ে দুই-একদিন রাখাও বেশ কষ্টসাধ্য। শামীমুর রহমান নামে এক ব্যক্তি বলেন, কোরবানি উপলক্ষ্যে হাটে হাটে ঘুরতেছি, গরু দেখতেছি। তবে গরু কিনব রোববার, কারণ গরু বাড়িতে নিয়ে দুই-একদিন রাখাটা অনেক কষ্টের।

এদিকে খামারি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সারা বছরই গোখাদ্যের দাম বেশি ছিল। যার কারণে গরু বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া উপায় নেই, কাঙিক্ষত দামে বিক্রি করতে না পারলে লোকসান গুনতে হবে।

যশোর থেকে ২৩টি গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ী জয়নাল শেখ বলেন, ২৩টি গরু নিয়ে আসছিলাম। ১৬টি বিক্রি করেছি, সামান্য লাভ হয়েছে। এখনও ৭টি আছে, অপেক্ষা করছি। আজকে না হলে ঈদের আগে লস হলেও ছেড়ে দিতে হবে।

রামপালের চাকশ্রী এলাকার গরুর ব্যবসায়ী দিদারুল ইসলাম বলেন, ভুসি, খৈল, পালিশ, ভুট্টা ও গরুর বিভিন্ন ওষুদের প্রচুর দাম। এখন এমন অবস্থা গেল বারের থেকে ১০-২০ হাজার টাকা বেশি না বেচলে চালান বাঁচবে না। গরুর পাশাপাশি এই হাটে ছাগল এবং মহিষও আনা হয়েছে বিক্রির জন্য।

হাটের ইজারাদার আনন্দ দাস বলেন, সারা বছর সপ্তাহে দুই দিন অর্থ্যাৎ শুক্রবার ও সোমবার এই হাট বসে। দূর-দূরান্ত থেকে খামারি ও ব্যবসায়ীরা যেমন গরু নিয়ে আসেন, তেমনি বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারাও আসেন এখানে গরু কিনতে। ঈদ উপলক্ষ্যে হাটটি আরও জমজমাট হয়ে উঠেছে। আজকে দুই হাজারের বেশি গরু বিক্রি হয়েছে। শনিবার ও রোববারও হাট চলবে।  

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এবার বাগেরহাটে ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে স্থায়ী-অস্থায়ী ২৩টি পশুর হাট বসেছে। প্রকৃতপক্ষে হাটের সংখ্যা ৩০টির বেশি। এসব হাটে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী আড়াই শতাংশ খাজনা নেওয়ার কথা থাকলেও, ইজারাদারদের বিরুদ্ধে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫ থেকে ৭ শতাংশ খাজনা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেব আলী বলেন, এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ১ লাখ ১২  হাজার ৪১৩টি পশু প্রস্তুত রয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় প্রায় ১০ হাজার বেশি। এসব গরু ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য স্থায়ী অস্থায়ী ২৩টি পশুর হাট বসেছে। এর পাশাপাশি অনলাইনে এবং খামার থেকে সরাসরি পশু বিক্রি করা হচ্ছে। তবে অনলাইনে বেচা-বিক্রিতে তেমন সাড়া নেই।  

শেখ আবু তালেব/আরএআর