পেনশনের টাকা আটকে থাকা শিক্ষক নজরুল ইসলামের স্ত্রী তোহরা খাতুনের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনায় এখন শোকাহত পুরো পরিবার। বিনা চিকিৎসায় স্ত্রীর এমন মৃত্যুতে নিজেকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন শিক্ষক নজরুল। মানসিক অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে শঙ্কিত তিনি।

শুক্রবার (১৪ জুন) সকালে শিক্ষক নজরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ করছেন তার মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ে রুমা খাতুন (২৫)। মা না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে এ বিষয়টি যেন তার বোঝার ক্ষমতা নেই। রুমা খাতুন গত চার বছর ধরে মানসিক রোগে ভুগছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষক নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বুধবার (১২ জুন) আমার স্ত্রী তোহরা খাতুন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওইদিন রাতে যশোর জেনারেল হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মারা যান। 

তিনি আরও বলেন, চার বছর ধরে পেনশনের টাকার জন্য হন্য হয়ে ছোটাছুটি করেছি। ঢাকায় কয়েকবার গিয়েছি। তিনবেলা খাবার জোগাড় করার মতো সামর্থ্যও নেই এখন আমার, এজন্য আর ঢাকায় যেতে পারিনি। সবশেষ ফেসবুকে লাইভে এসে অসহায়ত্বের কথা জানালেও কেউ পাশে দাঁড়ায়নি, শেষমেশ পেনশনের টাকাটাও পেলাম না। অবশেষে বিনা চিকিৎসায় আমার স্ত্রী মারা গেলেন। এখন আমার মেয়ে মানসিক রোগী, তাকে সামলানোও আমার জন্য কষ্টসাধ্য। আমার পেনশনের টাকাটা পেলে মেয়েকে চিকিৎসা করাতে পারব, আমি আমার মেয়েকে হারাতে চাই না।

বিভিন্ন দপ্তরে ধর্না দিয়েও পেনশনের টাকা থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং বিনা চিকিৎসায় শিক্ষক নজরুলের স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্বজন ও এলাকাবাসীরা। তাদের দাবি দ্রুত শিক্ষক নজরুলের পেনশনের টাকা মুক্ত করে তার অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসায় সহযোগিতা করা হোক। 

নজরুল ইসলামের ছেলের বউ তানজিলা বেগম বলেন, আমার শাশুড়ি পচন রোগে ভুগতে ভুগতে বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন। আমরা গরিব মানুষ, আমার শশুরও গরিব। তার পেনশনের টাকাটা আটকে থাকায় তিনি আমার শাশুড়িকে চিকিৎসা করাতে পারেনি। এখন আমার ননদ (নজরুল ইসলামের মেয়ে) তিনিও অসুস্থ। পেনশনের টাকাটা পেলে আমার শ্বশুর আমার ননদকে চিকিৎসা করাতে পারতেন।

শিক্ষক নজরুল ইসলামের প্রতিবেশী শফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক নজরুল ইসলাম একজন নামকরা শিক্ষক। তিনি একটা এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করে অবসরে গেছেন। অবসরে যাওয়ার পর পেনশনের টাকা পাওয়াটা তার অধিকার। কিন্তু তিনি তা পাননি। আমরা চাই নজরুল তার পেনশনের টাকা দ্রুত পান এবং এ বিষয়ে আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

এদিকে খানপুর দাখিল মাদরাসার সহকারী সুপার খাইরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষক নজরুল ইসলামের অবসরের সকল কাগজপত্র একাধিকবার ঢাকার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তবে ঊর্ধ্বতন দপ্তরের গাফিলতির কারণে পেনশনের টাকা পেতে বেগ পেতে হচ্ছে শিক্ষক নজরুলকে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের বিভিন্ন নীতিমালা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো সঠিকভাবে না মানায় এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ শিক্ষকদের অবসরে যাওয়ার পর এমন ভোগান্তি পোহাতে হয়।

প্রসঙ্গত, শিক্ষক নজরুল ইসলাম যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি এমপিওভুক্ত খানপুর দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তিনি দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে শিক্ষকতা করেন। ২০২০ সালের ২১ জুন অবসর গ্রহণ করেন শিক্ষক নজরুল। অবসরে যাওয়ার পর কল্যাণ তহবিলের ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা পেলেও আজ পর্যন্ত পেনশনের একটি টাকাও পাননি তিনি।

এ্যান্টনি দাস অপু/এএএ