পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নাড়ির টানে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। এতে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) গভীর রাত থেকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে বেড়েছে যানবাহনের চাপ। শুক্রবার (১৪ জুন) সকাল থেকে এই চাপ বাড়ছেই। তবে গাড়ির চাপ বাড়লেও এই মহাসড়কের কোথাও কোনো ধীরগতি বা যানজটের মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। 

মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশ, ট্রাফিক বিভাগ ও হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রায় এক হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট ছাড়াও মোবাইল টিম, পেট্রল টিম ও কুইক রেসপন্স টিম হিসেবে কাজ করছেন। 

শুক্রবার (১৪ জুন) সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সিরাজগঞ্জে মহাসড়কের প্রায় ৪৫ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য সময়ের চেয়ে যানবাহন বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে অন্যান্য সময়ের মতোই একদম স্বাভাবিক গতিতে সকল যানবাহন চলাচল করছে। যার ফলে এখন পর্যন্ত এই মহাসড়কে কোনো ভোগান্তি নেই যাত্রী ও চালকদের। মহাসড়কে ট্রাফিক আইন মানাতে ও নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করতে তৎপর রয়েছে পুলিশ। তবে বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। 

খাদ্য বিভাগে চাকরি করা রাজশাহীর মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, যমুনা সেতুর পূর্বপাড়, এলেঙ্গা ও ঢাকার কিছু জায়গায় কিছুটা যানজট ছিল। সেখানে একটু কষ্ট হলেও সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে কোথায় যানজট নেই। এই মহাসড়কে ভোগান্তি ছাড়াই চলে এসেছি। 

কিশোরগঞ্জ থেকে ঈদ করতে প্রিয়জনদের কাছে ফিরছেন বেসরকারি চাকরিজীবী নাটোরের এসএম শান্ত। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এদিকে যানজট না থাকলেও টাঙ্গাইল ও ঢাকার কিছু জায়গায় যানজট ছিল। এছাড়াও বাসে ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে। আমি যেহেতু ভেঙে ভেঙে আসছি তাই সর্বশেষ গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত আসতে বাসে ভাড়া নিয়েছে ৬০০ টাকা। যেখানে অন্যান্য সময় সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা ভাড়া। এছাড়াও এখান থেকে নাটোরের ভাড়া চাইছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, যেখানে অন্যান্য সময়ের ভাড়া ১৫০ টাকা। 

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমএ ওয়াদুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ঈদযাত্রায় ঘরে ফেরা মানুষের ভোগান্তি এড়াতে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ সচেষ্ট রয়েছি। হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে এই মহাসড়কে প্রায় ২০০ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে মহাসড়ক মনিটরিং ছাড়াও পেট্রল টিমের পাশাপাশি রয়েছে কুইক রেসপন্স টিম, অ্যাম্বুলেন্স, রেকারসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, গতকাল রাত থেকে মহাসড়কে গাড়ির চাপ কিছুটা বেড়েছে। তবে মহাসড়কের কোথাও কোনো ভোগান্তি নেই। সব গাড়ি একদম নির্বিঘ্নে চলাচল করছে। আমরা ধারণা করছি রাতে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ আরও বাড়তে পারে। আশা করছি সে সময়েই মহাসড়কে যানজটের মতো কোনো অবস্থা সৃষ্টি হবে না। আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। 

সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) মো. জাফর উল্লাহ রুবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ধীরে ধীরে মহাসড়কে গাড়ির চাপ বাড়ছে। তবে যান চলাচল একদম স্বাভাবিক রয়েছে। আমরা জেলা পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে প্রায় ৮০০ পুলিশ সদস্য ২৪ ঘণ্টা কাজ করছি। চাপ আরও বাড়লেও ঈদুল ফিতরের মতো এবারও সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হবে না বলে আশা করছি। 

মহাসড়কের হাটিকুমরুল এলাকায় দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) মো. কামরুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল থেকে সময়ের ব্যবধানে যানবাহনের চাপ বাড়ছে। তবে এই মহাসড়কের কোথাও কোনো যানজট নেই। এছাড়াও মহাসড়কের পার্শ্ব রাস্তাগুলো আটকে দেওয়াসহ মহাসড়ক নিরাপদ ও ভোগান্তিমুক্ত রাখতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। 

শুভ কুমার ঘোষ/আরএআর