জাতীয় সংসদে কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা. হামিদুল হক খন্দকারের এক প্রশ্নের জবাবে তিস্তা নদীপাড়ের দুঃখ লাঘবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক বক্তব্যে আশার আলো দেখছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। সংসদে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্বল্প সুদে চীনের কাছে ঋণ চাওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি সংসদে বলেছেন, ইআরডি’র বৈদেশিক সাহায্য অনুসন্ধান কমিটির ৫১তম সভায় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ঋণ পেতে চীন সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এতোদিন বিষয়টি ভূ-রাজনীতির নানা টানাপোড়েনে সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আটকে ছিল। 

সংসদে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে সব জট খুলে গেছে। প্রধানমন্ত্রী'র এই বক্তব্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকা রংপুর অঞ্চলের মানুষের মনে ঘুরপাক খাওয়া প্রশ্নের অবসান ঘটেছে বলে মনে করছেন তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।

জাতীয় সংসদে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করায় পরিষদের পক্ষ থেকে কুড়িগ্রাম-২ আসনের সাংসদ ডা. হামিদুল হক খন্দকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিও অন্তর্গত কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানিয়েছে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিকেলে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার তিস্তা পাড়ের গতিয়াশামের ভাঙনপীড়িত মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বক্তৃতায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী আশার আলো দেখিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হাক্কানী।  

মতবিনিময় সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ২১-২২ জুন নয়াদিল্লি ও ৯- ১২ জুলাই চীন সফরে যাবেন। আমরা আশাবাদী এই সফরের ভেতর দিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসবে। আগামী খরা মৌসুমেই নদী খনন ও পাড় সুরক্ষার কাজ শুরু হবে বলে আমরা আশাবাদী। 

গতিয়াশাম গ্রামের ভাঙনে সর্বস্বহারা আজিজুল ইসলাম বলেন, সংসদে শেখের বেটির কথা আমরা শুনেছি। তিস্তা পাড়ের মানুষ মহাখুশি। তিস্তা খনন, তিস্তা মহাপরিকল্পনার  কাজ শুরু করতে দেরি করলে তিস্তা পাড়ের গ্রাম একটাও থাকবে না। সবই তিস্তার পেটে চলে যাবে।আগে তিস্তা খনন করতে হবে তারপর পানি আনতে হবে। যার হাল-হাতিয়ার ভালো, নদী খনন ও শাসনে যারা ভালো কাজ জানে তাদেরকে দিয়েই তিস্তা ঠিক করতে হবে। তিনি বুকভরা আশা নিয়ে বলেন, শেখের বেটি যা কয় তা করেই ছাড়ে।

প্রসঙ্গত, বুধবার জাতীয় সংসদে মো. হামিদুল হক খন্দকারের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তরবঙ্গের তিস্তা নদীর পাড়ের মানুষের দুঃখ লাঘবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। 

বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষে চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় সমীক্ষা সম্পন্ন করে প্রায় ৮ হাজার ২১০ কোটি টাকার পিডিপিপি ২০২০ সালের আগস্টে ইআরডিতে দেওয়া হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইআরডির বৈদেশিক সাহায্য অনুসন্ধান কমিটির ৫১তম সভায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের স্বার্থে সহজ শর্তের ঋণ পেতে চীন সরকারকে অনুরোধ করার সিদ্ধান্ত হয়। ইআরডি থেকে ঢাকার চীনা দূতাবাসের মাধ্যমে চীনা সরকারকে সফট লোন সাহায্য প্রাপ্তির জন্য ২০২১ সালের মার্চ মাসে অনুরোধ জানানো হয়।

তিনি আরও বলেন, পিডিপিপির বিষয়ে চীন সরকার একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন গত বছরের ৫ মার্চে ইআরডিতে পাঠায়। ওই প্রতিবেদনে বড় আকারের ভূমি উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং নৌ চলাচল ব্যবস্থা উন্নয়নের বিষয়ে অধিকতর বিশ্লেষণ না থাকা ও বড় আকারের বিনিয়োগ বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। চীন সরকার প্রকল্পটি পর্যায়ভিত্তিক বাস্তবায়নের নিমিত্তে আরও বিশদ সমীক্ষার বিষয়ে পরামর্শ দেয়। পাওয়ার চায়না কর্তৃপক্ষ চীন সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক গত বছরের ২৭ আগস্টে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি রিপোর্ট সংশোধনের প্রস্তাব বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে পাঠিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস