সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের রিসোর্ট তদারকির জন্য আদালতের আদেশে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক ও জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালককে সদস্য সচিব করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে দুদক। এছাড়াও রিসোর্টে রাতের আঁধারে চুরির অভিযোগে সদর থানায় মামলা করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক নুর-ই-আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলমকে আহ্বায়ক, জেলা দুদকের উপ-পরিচালক মশিউর রহমানকে সদস্য সচিব ও জেলা পুলিশ সুপার আল-বেলী আফিফা, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেবপ্রসাদ পাল, গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান এবং আনসার ও ভিডিপির জেলা কমান্ড্যান্ট মো. ফজলে রাব্বিকে সদস্য করে ছয় সদস্যের এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গোপালগঞ্জের সাভানা ইকো রিসোর্ট ও ন্যাচারাল পার্কের আওতাধীন সকল সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম তদারকি ও রিসিভারগণ কর্তৃক পার্কের সামগ্রিক কার্যক্রমসহ যাবতীয় বিষয়াদি যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ ও তদারকির লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ এর ১৮গ (৩) বিধি অনুযায়ী বর্ণিত কর্মকর্তাগণের সমন্বয়ে কমিশন কর্তৃক কমিটি গঠন করা হয়। এমতাবস্থায় উক্ত কমিটিকে বর্ণিত রিসোর্ট ও পার্কের সকল সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম তদারকি এবং রিসিভারগণ কর্তৃক পার্কের সামগ্রিক কার্যক্রমসহ যাবতীয় বিষয়াদি যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ ও তদারকির জন্য নিদের্শক্রমে অনুরোধ করা হলো। কমিটি তাদের কার্যক্রম নিয়মিতভাবে কমিশনকে অবহিত করবে।

এদিকে একই দিন সকালে সাভানা ইকো রিসোর্ট ও ন্যাচারাল পার্কে চুরির অভিযোগে রিসোর্টের ম্যানেজার সরোয়ার হোসেন বাদী হয়ে স্থানীয় পাঁচজনসহ অজ্ঞাতানামা বেশ কয়েকজনকে আসামি করে গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেছেন

আসামিরা হলেন- মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার নাটাখোলা গ্রামের ক্ষেপা মজুমদারের ছেলে সজীব মজুমদার, গনেশ রায়ের ছেলে সুরত রায় সুনিল সেনের ছেলে অনিমেষ সেন ও গোপালগঞ্জ সদরের বৈরাগীরটোল এলাকার বিপ্লব বল ও সঞ্জয় বলসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন। 

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ১২ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমি আমার অফিসের যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করে আমার শয়ন কক্ষে এসে রাতের খাবার শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ি। ১৩ জুন সকাল ৯টায় প্রতিদিনের মতো গোপালগঞ্জ সদর থানাধীন সাহাপুর ইউনিয়নস্থ বৈরাগীতলা গ্রামে সাভানা ইকো রিসোর্ট ও ন্যাচারাল পার্কে আমার অফিসে যাই। অফিসে গিয়ে দেখি আমার অফিস কক্ষ এলোমেলো এবং অফিসে থাকা জিনিসপত্রের মধ্যে তিনটি সিপিইউ ও ১টি মনিটর নেই। যার আনুমানিক মূল্য দুই লাখ টাকা। পরবর্তীতে বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজন কুমার নন্দীকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অবহিত করি। তিনিসহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক  আব্দুল কাদের ও দুদক কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করেন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় যে, তিনজন লোক উক্ত প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষে প্রবেশ কের মালামাল চুরি করছে। আশপাশের এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে জানা যায় যে, ঘটনার সময় উপরোক্ত ব্যক্তিরাসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন রাতের যে কোনো সময় সু-কৌশলে আমার অফিস কক্ষে থাকা উক্ত মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শক্রমে থানায় এজাহার দায়ের করি। 

এ বিষয়ে মামলার বাদী রিসোর্টের ম্যানেজার সরোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সকালে মামলা করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। 

দুদকের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, সকালে রিসোর্ট থেকে জানানো হয় রিসোর্টে চুরি হয়েছে। পরে দুদকের একটি টিম রিসোর্টে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে মামলার জন্য রিসোর্টের ম্যানেজারকে পরামর্শ দেয়। অন্যদিকে রিসোর্টটি সচল ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং তদারকির  জন্য আমাকে সদস্য সচিব করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে দুদক।

আরএআর