বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ক্রোনী গ্রুপের আওতাধীন ক্রোনী অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিকেল ৩টার দিকে তারা দাবি আদায়ে সড়কে নেমে আসেন। এতে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিকে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। এর আগে সকাল থেকে কর্মবিরতি দিয়ে কাশীপুর ইউনিয়নের হাটখোলা এলাকায় অবস্থিত কারখানাটির ভেতরে বিক্ষোভ করেন।

গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে কারখানার মালিক বেতন পরিশোধ নিয়ে গড়িমসি করছেন বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। প্রত্যেক শ্রমিক ও কর্মীর কমপক্ষে দুই থেকে ছয় মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে বলেও জানান তারা। ঈদুল আজহার বোনাসও এখনো পরিশোধ করা হয়নি বলে জানা যায়।

প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিক ইলিয়াস ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শ্রম দিই, কোনো কোনো সময় মধ্যরাত পর্যন্ত ওভারটাইম করি বাড়তি কয়টা টাকার জন্য। কিন্তু প্রতি মাসেই বেতনের জন্য রাস্তায় নামতে হয়। দোকানদার এখন আর বাকি দিতে চায় না, বাড়িওয়ালা খারাপ ব্যবহার করে। এভাবে চললে আমরা বাঁচবো কীভাবে!

শ্রমিক নাসিমা বলেন, ‘মেয়েটারে ফালায়া ওর বাপে চইলা গেছে। এখন মেয়েটার বয়স চার বছর। গত ঈদে মেয়েটা লাল জামার আবদার করছিলো, সময়মতো বেতন-বোনাস না পাওয়ায় দিতে পারি নাই। এইবারও মনে হয় দিতে পারুম না। ঠিকমতো চলতেই তো পারি না, মেয়ের শখ পূরণ করুম কীভাবে!’

অন্যদিকে ফতুল্লার বিসিক শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত ক্রোনী গ্রুপের আরেকটি পোশাক কারখানা অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেডের শ্রমিকরাও বকেয়া বেতনের দাবিতে কর্মবিরতি দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন বলে জানান শিল্প পুলিশ-৪ নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, দুটি কারখানায় অন্তত ১৩ হাজার শ্রমিক ও কর্মী রয়েছেন। তারা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। হাটখোলা এলাকার কারখানাটির সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা।

তবে আজ সন্ধ্যা ৬টার দিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন পাওয়া শুরু করলে শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে দেন বলে জানান শিল্প পুলিশ-৪ এর জালকুড়ি পুলিশ লাইনসের ইনচার্জ পরিদর্শক নাজির আলম।

এদিকে, অবরোধে যানজটে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কে চলাচল করা যাত্রী ও পরিবহন চালকরা। অনেক যাত্রীকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।

শ্রমিকদের নিয়মিত বেতন পরিশোধ না করায় গত ২৭ মে ক্রোনী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএইচ আসলাম সানির বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করে শ্রম মন্ত্রণালয়।

যোগাযোগ করা হলে আসলাম সানি বলেন, আমি নিজেও চাই ঈদের আগেই শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বেতন দিতে কিছুটা দেরি হয়েছে। আমি নির্দেশনা দিয়েছি, আজকেই তাদের বেতন দেওয়া হবে। সবার বেতন নিজ নিজ মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে।

শিপন সিকদার/এমজেইউ