তেল-গ্যাস ও বিদ্যুৎ ছাড়াই চলবে এমন ঝুঁকিমুক্ত নিরাপদ ‘কোয়াইড বাইক’ উদ্ভাবন করেছেন মাসুদ রানা নামের এক যুবক। নতুন এই বাইকটি সম্পূর্ণ ধোঁয়াহীন শতভাগ পরিবেশবান্ধব। ‘কোয়াইড বাইক’ এর চাকা ঘুরলেই ডায়নামোর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হবে ব্যাটারি। সেই ব্যাটারি রিজার্ভ হিসেবে কাজ করবে। ডায়নামো নষ্ট হলে কিংবা কোনো কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে ব্যাটারির মাধ্যমে চলবে বাইকটি।

দফায় দফায় যখন তেল-গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বাড়ছে, ঠিক তখন এমন অভাবনীয় ‘কোয়াইড বাইক’ উদ্ভাবন করে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন মাসুদ রানা। দেড় বছরের প্রচেষ্টা ও অধ্যবসায়ে মাসুদের উদ্ভাবিত কোয়াইড বাইকে করে কোনো ধরনের জ্বালানি খরচ ছাড়াই দেশের যেকোনো প্রান্তে যাওয়া যাবে। যার চলার গতি হবে ৬০ কিলোমিটারেরও বেশি। কোয়াইড বাইকটি তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টাকা।

ব্যতিক্রম ও সময়োপযোগী এই বাইকের উদ্ভাবক মাসুদ রানা রংপুর মহানগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের লাকিপাড়া উপশহর এলাকার বাসিন্দা। তিনি রংপুর নেসকো কোম্পানিতে চাকরি করছেন। মোটরসাইকেল চালিয়ে নিয়মিত অফিস করতেন মাসুদ। একদিন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। সে থেকে ঝুঁকিমুক্ত বাইকের কথা ভাবতে থাকেন তিনি। যা এখন ‘কোয়াইড বাইক’ তৈরির মধ্য দিয়ে বাস্তবে রূপ নিয়েছে।

নতুন ও আকর্ষণীয় ‘কোয়াইড বাইক’ তৈরির নেপথ্যের গল্প প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাসুদ রানা ঢাকা পোস্টকে জানান, অনেক সময় খুব সামান্য কারণে মোটরসাইকেল পিছলে পড়ে যায় এবং চালক বা আরোহী আহত হন। এই সামান্য কারণে যাতে মোটরসাইকেল পড়ে না যায়, কিংবা দুর্ঘটনা না ঘটে সেই চিন্তা থেকে ইউটিভি ও এটিভির আদলে চার চাকার মোটরসাইকেল উদ্ভাবনের চিন্তা করেন। সেই চিন্তা ও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিনিয়ত তেল-গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। তাই তেল-গ্যাস এবং বিদ্যুৎ ছাড়াই কীভাবে মোটরসাইকেল তৈরি করা যায়, সেই বিষয়ে মনোনিবেশ করেন তিনি। এক সময় ‘কোয়াইড বাইক’ তৈরি করার মধ্য দিয়ে সফলতার মুখ দেখেন।

মাসুদ রানা আরও বলেন, বাইকটি তৈরিতে অনেক কষ্ট হয়েছে। বাইকটির পার্টস বিভিন্ন লেদের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে। তৈরি করা পার্টস দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। কোয়াইড বাইকটি বাজারজাত করতে পারলে জ্বালানি সংকট অনেকটাই কমে আসবে। তাছাড়া বাইকটি চালকদের জন্য সাশ্রয়ী। এখানে কোনো তেল, গ্যাস এবং আলাদা করে বিদ্যুতের মাধ্যমে চার্জ দিতে হয় না। এই বাইক চালানোর সময় ঝুঁকিও কম। সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে বাণিজ্যিকভাবে এই বাইক উৎপাদন করার কথা জানান তিনি।

এদিকে মাসুদ রানার উদ্ভাবিত চার চাকার মোটরসাইকেলটি দেখতে প্রতিদিন উৎসুক লোকজন ভিড় করেন তার বাসা এবং অফিস প্রাঙ্গণে। এই বাইক দেখে খুশি তার সহকর্মী, স্থানীয় এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যরা। বর্তমান প্রজন্মের কাছে বাইকটি বেশ সাড়া ফেলেছে। অনেকেই এ ধরনের বাইক ব্যবহারে আগ্রহী বলেও জানান।

রেদওয়ান হিমেল নামের এক তরুণ উদ্যোক্তা ঢাকা পোস্টকে জানান, সড়কে নিরাপদভাবে চলতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে ‘কোয়াইড বাইক’। সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় এটি তেল-গ্যাস এবং বিদ্যুতের ঝামেলামুক্ত সাশ্রয়ী বাইক। সহজেই যে কেউ এটি চালাতে পারবে। এ ধরনের বাইক সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা গেলে দেশের সব প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।

রংপুর জেলা পরিষদ চত্বরে বাইকটি নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন মাসুদ রানা। তার চমকপ্রদ এই বাইকটি দেখে ভিড় জমান অনেকেই। সেখানে আব্দুর রহমান নামের এক ব্যক্তি বলেন, বাইকটি বেশ চমৎকার। সরকার অনুমোদন দিলে আমরা এ ধরনের বাইক ব্যবহার করতে পারব। এতে দেশের বিদ্যুৎ-গ্যাস-জ্বালানি সাশ্রয় হবে। ছোটখাটো দুর্ঘটনাও কমবে।

বাইকটি দেখতে আসা কবি ও সংগঠক রেজাউল করিম জানান, কোয়াইড বাইকটি তার দৃষ্টিতে অভাবনীয় উদ্ভাবন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখন মানুষ জিনিসপত্রের দাম বাড়ার খবর শুনতে শুনতে অভ্যস্ত। কিন্তু যখন তেল-গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়, তখন মানুষের মেজাজ ভালো থাকে না। মনে মনে ক্ষুব্ধ হন। এ রকম পরিস্থিতি প্রায়ই অনুভব করি। সেই অবস্থা থেকে এই বাইকটি একেবারেই সাশ্রয়ী এবং ব্যবহার উপযোগী। এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্ভাবন।

এ বিষয়ে কথা হয় বিআরটিএ অফিস, রংপুরের মোটরযান পরিদর্শক মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধান কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা এই বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন। এই বাইক বাজারজাত করলে সাধারণ মানুষের উপকার কতটুকু হবে? পাশাপাশি কতটা পরিবেশবান্ধব হিসেবে বাজারজাত করা যাবে। তবে আমাদের এসব বাইক অনুমোদনের জন্য টাইপ অনুমোদন শাখা রয়েছে। বাংলাদেশে কোনো ধরনের জ্বালানি ছাড়াই ব্যাটারিচালিত বাইক অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন আছে কি না, সেটি এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করতে গেলে অবশ্যই অনুমোদন নিতে হবে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের বাইক মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করছে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ