কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন বরগুনার কামার শিল্পীরা। পশু কোরবানিতে ব্যবহৃত দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিতে প্রতিটি দোকান সাজিয়েছেন এসব কামার মালিকরা। তবে এ বছর ক্রেতাদের আনাগোনা কম থাকায় বিক্রি কমে লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন এসব দোকানের ব্যবসায়ীরা। 

কোরবানির ঈদের অপেক্ষায় বছরজুড়ে একপ্রকার ঝিমিয়ে পার করেন আধুনিকতার ছোঁয়ায় অস্তিত্ব সংকটে ভুগতে থাকা বরগুনার কামার শিল্পীরা। কোরবানির ঈদে অসংখ্য মানুষ পশু জবাই করতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি কিনতে ভিড় করেন কামারদের বিভিন্ন দোকানে। ফলে এ সময় বিক্রি ভালো হওয়ায় সে টাকায় সারাবছরের ধারদেনা পরিশোধ করেন ঝিমিয়ে থাকা এসব কামাররা। তবে এ বছর ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন উপকূলের বাসিন্দারা। এতে বরগুনার অনেকেই এ বছর পশু কোরবানি থেকে বিরত থাকায় পশু জবাইয়ের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বিক্রি কমেছে। এছাড়া বিগত বছরের তুলনায় প্রতিটি যন্ত্রপাতির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন ক্রয় না করে কম টাকা খরচে পুরানো যন্ত্রপাতি মেরামত করছেন অধিকাংশ ক্রেতারা।

সরেজমিনে, বরগুনা পৌরসভার পৌর মার্কেটের পিছনে নির্ধারিত কামার শিল্পীদের দোকান ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানে কয়লা দিয়ে জ্বালানো চুলার আগুনে লোহা গরম করে পিটিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরি করছেন কামাররা। তবে নতুন তৈরির থেকে পুরাতন যন্ত্রপাতি মেরামতের কাজই বেশি। এছাড়া দোকানে তৈরি করে রাখা বিভিন্ন ধরনের নতুন যন্ত্রপাতির দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় কিনতে এসে ফিরেও যাচ্ছেন অনেক ক্রেতারা। 

কোরবানি উপলক্ষ্যে নতুন দা কিনতে আসা মনিরুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতবছর যে টাকায় দা বানিয়েছি তার তুলনায় এ বছর দাম অনেক বেশি। এতে বাধ্য হয়েই গতবছরের পুরানো দা মেরামত করেছি। বর্তমানে আমাদের আয়ের থেকে খরচের পরিমাণ বেশি হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে চলতেই এখন কষ্ট হয়। 

মীর গোলাম সরোয়ার নামে আরেকজন ক্রেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোরবানি উপলক্ষ্যে ছুরি কিনতে বাজারে এসে দেখি দাম বেশি। বাজারে সবকিছুরই দাম বেশি তাই ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। 

বরগুনা ইসলামীয়া মাদরাসা শিক্ষক মোস্তফা কামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা মাদরাসায় প্রতিবছর কোরবানি উপলক্ষ্যে ৩০ থেকে ৩৫টি ছুরি মেরামত করি। গত বছর ৮০ টাকা করে প্রতিটি ছুরি মেরামত করলেও এ বছর তা মেরামত করতে ১১০ টাকা করে খরচ হয়েছে।  

কোরবানি উপলক্ষ্যে কামারদের তৈরি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে ধ্রুব কর্মকার নামে এক ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর নতুন কিছুর তেমন বিক্রি নেই। তবে পুরাতন কিছু কাজ বেড়েছে। ঈদে বিক্রির আশায় তৈরি করা নতুন যন্ত্রপাতি তেমন বিক্রি না হওয়া আমরা এখন চিন্তিত। দা বঁটি যা আছে সেগুলো সারাবছরই টুকটাক বিক্রি হয়। তবে পশু কোরবানিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি শুধু কোরবানির সময়েই বিক্রি হয়। 

অরুণ কর্মকার নামের আরেক ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর আমাদের তেমন কোনো কাজ নেই। এছাড়া ক্রেতাদের নতুন যন্ত্রপাতির চাহিদাও কম। অনেকেই বসে থেকে সময় পার করছি। কেউ যদি আমাদের থেকে না কেনে তাহলে কারো কাছে তো আর জোর করে বিক্রি করা যাবে না। আমরা সারাবছর ধরে শুধু কোরবানির ঈদের অপেক্ষায় থাকি। তবে এ বছর তৈরি করা যন্ত্রপাতি যদি বিক্রি না করতে পারি তাহলে আগামী বছরের জন্য সব রেখে দিতে হবে। এছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই। 

এ বিষয়ে বরগুনা কামার শিল্পী সমিতির সভাপতি হরিদাস কর্মকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এ বছর তেমন কোনো বেচা বিক্রি নেই বললেই চলে। গত বছরের তুলনায় এ বছর তিন ভাগের এক ভাগ বিক্রিও নেই। এদিকে সব মালামালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, অপরদিকে মানুষের পকেটে বাড়তি টাকা নেই। এখন আমাদের দোকানে কর্মচারীদের বেতন দিয়ে টিকে থাকার মতো অবস্থা নেই। এছাড়া ভবিষ্যতে কামার শিল্প ও এ পেশায় যুক্ত কামারদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেরও দাবি জানান তিনি।

এ বছর বিক্রি কম হওয়ার বিষয়ে সভাপতি আরও বলেন, সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সংসার খরচের পর অনেকের কাছে কোরবানির জন্য পশু কেনার বাড়তি টাকা নেই। এ কারণেই এ বছর আমাদের তৈরি করা কোরবানির যন্ত্রপাতি বিক্রি কমেছে। 

আব্দুল আলীম/আরকে