ফেনীর দাগনভূঞায় আবদুল গফুর ভূঞা নামের এক গৃহকর্তাকে দাফনের ১০ দিন পর কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। বুধবার (১২ জুন) দুপুরের দিকে দাগনভূঞা সদর ইউনিয়নের জগতপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান থেকে হত্যা মামলার সুরতহাল প্রতিবেদনের জন্য মরদেহ উত্তোলন করা হয়।

এ সময় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুর রহমান, দাগনভূঞা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাশিম এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আসিফ ইনতেছার উপস্থিত ছিলেন। 

এর আগে গত মঙ্গলবার (৪ জুন) রাতে আদালতের আদেশ পেয়ে দাগনভূঞা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ২ জুন গৃহকর্তার বড় ছেলে রিয়াদ হোসেন রাজু বাদী হয়ে আদালতে মামলা করলে দাগনভূঞা আমলী আদালতের বিচারক ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা লোকমান এ আদেশ দেন। 

মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপুর ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন মামুনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- নির্মল সাহা (৫০), চয়ন সাহা (৩৫), দহন সাহা (৩০), আইয়ুব আলী (৪৫), ছেরাজুল হক প্রকাশ হকসাব (৫০) এবং ইকবাল।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কাতার প্রবাসী আবদুল গফুর ভূঞা প্রায় ১৫ বছর আগে দাগনভূঞা পৌর এলাকার হাসপাতাল রোডের পলাশ চন্দ্র সাহার কাছ থেকে ছয় শতক জায়গা ক্রয় করেন। ওই জায়গায় ২০১৩ সালে পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করেন। ২০২৩ সালে কাতার থেকে দেশে ফেরার পর পলাশ চন্দ্র সাহার ভাগ্নে সয়েল সাহা নিজেকে ওই জায়গার মালিক বলে দাবি করেন। তার কাছ থেকে জায়গাটির আমমোক্তারনামা নেন দাগনভূঞা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন মামুনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ইকবাল নামে এক ব্যক্তি।

গত ২৯ মে দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময়ে আবদুল গফুর ভূঞার বাসা ভূঞা ম্যানশনে ৪০-৫০ জন যুবক হামলা চালিয়ে জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। এ সময় তারা নিচতলায় দরজার বাইরে থেকে আটকিয়ে দ্বিতীয় তলায় গফুর ভূঞার বাসায় ঢুকে তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, পুত্রবধূ ও দেড় বছর বয়সী নাতনিকে মারধর করে। পরে ভবনের বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

মামলার বাদী রিয়াদ হোসেন রাজু বলেন, বাবা দীর্ঘ প্রবাসজীবন শেষে দেশে ফেরার পর ক্যান্সার আক্রান্ত হন। হামলার ঘটনার একদিন আগেও ভারতের চেন্নাই থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরেন।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে ভবন ও জায়গা দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজাপুর ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন মামুন বাড়ি ছেড়ে দিতে বারবার হুমকি দিয়েছেন। তার নির্দেশে এ হামলা হয়েছে। হামলাকারীরা বাবাকে এলোপাথাড়ি কিলঘুষি মারে। এ সময় তার শরীরের অস্ত্রোপচারের স্থানে আঘাত লাগে। এতে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বাবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১ জুন (শনিবার) সকালে ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। এদিন সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই পারিবারিক কবরস্থানে বাবাকে দাফন করা হয়েছিল। 

মরদেহ উত্তোলনের সময় নিহত গফুর ভূঞার ছেলে রিয়াদ হোসেন রাজু, রাকিব হোসেনসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। তারা এ ঘটনার ন্যায় বিচার দাবি করেন।  

দাগনভূঞা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাশিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

তারেক চৌধুরী/আরকে