পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার পশ্চিম চর বানিয়ারী গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার শেখ। ২২ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে তিন মাস হয়েছে দেশে এসেছেন। প্রবাসে থাকাকালে তার স্ত্রী সাবানা বেগম প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে ফ্রিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড় গরু সন্তানের মতো পালন করেছেন। দেখতে সাদাকালো আর শান্ত স্বভাবের জন্য নাম রেখেছেন ‘কালাবাবু’। তার খামারে ‘কালাবাবু’সহ গরুর সংখ্যা আটটি। চারটি ষাঁড়, দুটি গাভি ও দুটি বাছুর। এর মধ্যে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন ‘কালাবাবু’কে।

ছয় ফুট উচ্চতা, আট ফুট লম্বা ও তিন বছর ছয় মাস বয়সের ‘কালাবাবু’র ওজন আনুমানিক ২০ মণ। দাম হাঁকা হচ্ছে ছয় লাখ টাকা। বিশাল আকৃতির ষাঁড়টি দেখতে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা ও ব্যবসায়ীরা। ষাঁড়টির মালিক আনোয়ারের দাবি, এটি জেলার সবচেয়ে বড় গরু। 

আনোয়ার শেখ বলেন, শখের কারণে ষাঁড়টি লালনপালন করেছি। আমার আগে থেকেই গরু পালার শখ ছিল। আমি প্রবাসে থেকে স্ত্রী আর সন্তানদের মধ্যমে দেশে গরুর খামার গড়ে তুলি। আমার স্ত্রী যত্ন করে ষাঁড়টি বড় করেছে। এটি দেখতে সাদাকালো এবং শান্ত স্বভাবের হওয়ায় শখ করে নাম দিয়েছি ‘কালাবাবু’। ওজন হবে ২০ মণের মতো। ষাঁড়টি বিক্রির জন্য দাম চেয়েছি ছয় লাখ টাকা। কোরবানির ঈদে গরুটিকে ভালো দামে বিক্রি করব।

তার স্ত্রী সাবানা বেগম বলেন, ষাঁড়টিকে অনেক যত্নে সন্তানের মতো লালনপালন করেছি। আড়াই বছর আগে ৬০ হাজার টাকায় স্থানীয় দীঘিরজান বাজার থেকে ষাঁড়টি কিনে এনেছিলাম। খৈল, ভুসি, ভুট্টা আর কাঁচা ঘাসের পাশাপাশি পাকা কলা ‘কালাবাবু’র খুব প্রিয়। দৈনিক প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি পাকা কলা খায়। গরমের সময় দিন-রাত ফ্যান চালিয়ে রাখতে হয়। বিশালাকার ওই ষাঁড়টি কিনতে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা আসছেন। কাঙ্ক্ষিত দাম পেলেই ষাঁড়টি ছেড়ে দেব।  

আনোয়ার শেখের জামাতা মো. রাসেল খান বলেন, নিজেদের জমির ঘাস খাওয়ানোর বাইরেও ষাঁড়টির পেছনে দৈনিক এক হাজার টাকার মতো খরচ হচ্ছে। এই প্রচন্ড গরমে ষাঁড়টিকে প্রতিদিন ৫-৬ বার গোসল করাতে হয়। ষাঁড়টির মাথার ওপর সবসময় বৈদ্যুতিক ফ্যান চালিয়ে রাখতে হয়। ‘কালাবাবু’সহ খামারের বাকি ষাঁড়গুলোকে খৈল, ভুসি, ভুট্টা, ঘাস ও পাকা কলা খাওয়ানো হয়। খাবারের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

আনোয়ার শেখের প্রতিবেশী আদম আলী বলেন, ‘কালাবাবু’কে দেখতে প্রতিদিনই উৎসুক জনতা ভিড় জমায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছে তাদের বাড়িতে। অনেকে আবার ‘কালাবাবু’র সঙ্গে ছবি তুলছে। ষাঁড়টি দেখতে ভিড় বেড়েই চলেছে।

নাজিরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, আমরা ষাঁড়টির খোঁজখবর রাখছি। ফ্রিজিয়ান জাতের এমন গরু পালনে স্থানীয়দের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আনোয়ার শেখের বাড়িসহ এর আশপাশে আরও বাড়িতে কিছু গরু পালন করা হচ্ছে।

পিরোজপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রানা মিয়া বলেন, এ বছর এ জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৪০ হাজার ২৫০টি। পশু প্রস্তুত রয়েছে ৪৬ হাজার ৪৮৭টি। বাড়তি পশু রয়েছে প্রায় ছয় হাজার ২৩৭টি, যা এ জেলার চাহিদা মিটিয়ে আশেপাশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, এ জেলায় নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত মিলিয়ে ছোট-বড় প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি খামার থেকে এ বছর ৪৬ হাজার ৪৮৭টি কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর মধ্যে গরু ২৬ হাজার ৮৫৭টি, ছাগল ১৭ হাজার ৪৭২টি, মহিষ ২৭৬টি এবং ভেড়া ১৮৮২টি। 

শাফিউল মিল্লাত/কেএ