সীমান্ত দিয়ে গরু না ঢুকলে লাভবান হবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খামারিরা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবার কোরবানির পশুর ঘাটতি নেই। তবে শেষ মুহূর্তে চাহিদা বাড়লে সংকট তৈরি হতে পারে বলে জানিয়েছেন খামারিরা। এ বছর কোরবানির জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ লাখ ২৭ হাজার ১৪টি পশু প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে বর্তমানে চাহিদা ও যোগান কাছাকাছি।
খামারিরা বলছেন, গত বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোরবানির জন্য ১ লাখ ১০ হাজার পশু প্রয়োজন ছিল। এবার ১৭ হাজার পশুর চাহিদা বেড়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রস্তুত থাকা পশু থেকে প্রায় ১৪০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে। কিন্তু পশুর দাম বেশি চাওয়ায় ক্রেতাদের আগ্রহ এখনো তেমন দেখা যাচ্ছে না। খাদ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় পশুর দাম বেশি।
বিজ্ঞাপন
প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৪টি। এর মধ্যে ৯৩ হাজার ১৭৪টি গরু, ১২ হাজার ২৩৪ মহিষ, ১৪ হাজার ৮৩২টি ছাগল, ভেড়া ৬ হাজার ৬৮৮টি ও অন্যান্য পশু ৭৪টি। এর বিপরীতে কোরবানির জন্য পশু মজুত রয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ২টি। ফলে পুরো জেলায় ১২টি পশুর ঘাটতি রয়েছে।
প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সূত্র বলছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খামারগুলো থেকে স্থানীয় চাহিদা পূরণ হবে। জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৪ হাজার ২৫৬টি খামার রয়েছে। কয়েক বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া গরুর খামারের বেশ বিস্তার ঘটেছে। লাভজনক ব্যবসা মনে করে অনেকেই ঝুঁকছেন এই ব্যবসার দিকে। শুধু তাই নয়, বেকারত্ব দূর করতে বহু শিক্ষিত যুবক এখন গরুর খামার করছেন।
ইতোমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন উপজেলায় পশুর হাট বসেছে। তবে হাটগুলোতে ক্রেতাদের তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। ক্রেতাদের অভিযোগ- এবার পশুর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। সেক্ষেত্রে হাটে বেচাকেনা কম হলে লোকসান গুনতে হবে বিক্রেতা ও ইজারাদারদের।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মো. সাইফুদ্দিন খান শুভ্র বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চাহিদা পূরণের জন্য খামারিরা সক্ষম। খামারের মোটাতাজা হওয়া পশু দিয়ে কোরবানির চাহিদা পূরণ হবে। এরপরও কোরবানির বাজার নিয়ে একটি চক্র সব সময় সক্রিয় থাকে। তারা বিদেশ থেকে পশু আমদানি এবং চোরাপথে পশু এনে দেশের খামারিদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। তাছাড়া খরচের ওপর নির্ভর করে পশুর দাম হয়। পশুর খাবারের দাম ক্রমেই বাড়ছে। সেক্ষেত্রে এবারও স্বাভাবিকভাবে পশুর দাম বাড়বে। পশু খাদ্যের দাম কমিয়ে উৎপাদন বাড়ানো গেলে তখনই স্বাভাবিকভাবে কম দামে পশু ক্রয়-বিক্রয় হতে পারে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রিন্স ডেইরি ফার্মের মালিক মো. ফোরকান উদ্দিন বলেন, গত বছরের উদ্বৃত্ত ও বর্তমান বছর মিলিয়ে খামারে ১৫০টি গরু ছিল। তার মধ্যে অনেক গরুই অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। এখন আরও ৯৮টি গরু বিক্রি বাকি রয়েছে। তবে গরুর বাজার নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কারণ সীমান্ত দিয়ে অনেক গরু ঢুকছে। এতে খামারিদের লোকসান পোহাতে হবে। অনেক খামারি রয়েছে যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা করছেন। কিন্তু ভারত থেকে গরু ঢুকলে খামারের বড় ও মোটাতাজা গরুর দাম পড়ে যায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তফা কামাল চৌধুরী বলেন, এবার কোরবানির ঈদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ লাখ ২৭ হাজার ১৪টি পশু প্রয়োজন। সেখানে ১ লাখ ২৭ হাজার ২টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। পাশের কুমিল্লা-ভৈরব-কিশোরগঞ্জ এলাকার পশু থেকে ঘাটতি পূরণ হবে। তাছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে কোরবানির পশু সীমান্ত দিয়ে যেন ঢুকতে না পারে সেজন্য জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করা হয়েছে। কোরবানির ঈদকে ঘিরে খামারি ও বাজারে আসা ব্যবসায়ীরা কোনো রকম ঝামেলা ছাড়া যাতে পশু বিক্রি করতে পারেন এবং ক্রেতারা কিনতে পারেন সেজন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর তৎপর রয়েছে।
মাজহারুল করিম অভি/আরএআর