শারীরিক প্রতিবন্ধী জালাল উদ্দিন। ৫৫ বছরের জীবনে গৃহহীন এবং ঠিকানাবিহীন মানুষ হিসেবে কখনো রেলস্টেশন কিংবা কখনো রাস্তায় কাটিয়েছেন দিনরাত্রি। শীতের কুয়াশা, বর্ষার পানি আর গ্রীষ্মের গরম মাথা পেতে মেনে নিয়েছেন ভাগ্যের লিখন হিসেবে। ভেবেছিলেন, ছিন্নমূল কিংবা গৃহহীন হিসেবেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবেন। তবে সে ধারণা উবে গিয়েছে কর্পূরের মতো। ভূমিহীন, ছিন্নমূল এবং ঠিকানা বিহীন জালাল উদ্দিন এখন দলিলমূলে ২ শতাংশ জমির মালিক। সাথে পেয়েছেন পাকা ঘর, বিনামূল্যের বিদ্যুৎ, গভীর নলকূপের পানি আর স্বনির্ভর হওয়ার সহযোগিতা।

জালাল উদ্দীন বলেন, ‘মোর জীবন ম্যাজিকের মতো পাল্টে গেইছে। শেখ হাসিনা মোর মাও লাগে। বাড়িঘর আমার হবে সেটি জীবনে কল্পনাও করিনি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর জন্য মন খুলে দুয়া করি।’

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ থানার মহিষামুড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৮৭৫ জন গৃহহীন-ভূমিহীন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর-জমি বুঝে পেয়েছেন। আর সব মিলিয়ে সারাদেশে মোট ১৮ হাজার ৫৬৬ জন ঘর-জমি বুঝে পেয়েছেন।

মঙ্গলবার (১১ জুন) আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে ৫ম পর্যায়ের ২য় ধাপে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের মাঝে এসব জমি ও ঘর হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ, কক্সবাজারের ঈদগাঁও এবং ভোলার চরফ্যাশনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তিনি। ওই সময় লালমনিরহাটের দুই সুবিধাভোগীর সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের একজন ঝাঁলমুড়ি বিক্রেতা বাবুল ও ৭০ বছরের বৃদ্ধা সাহেরুন নেছা।

সাহেরুন নেছা বলেন, ‘কেম আছেন বাহে? ভালো আছেন। হামরা ভালো আছি, তোমার ঘর প্যায়া শান্তিতে এখন ঘুমাই। তোমাক খুব দেখির মন চায়, তোমা আসলে জরে ধরি কোলায় রাখমো মা। তোমরা কোনদিন আসমে মা।’

এ সময় লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে নির্মিত ১ হাজার ২৮২টি পাকাবাড়ি পাওয়া সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আজকে আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে ১৮ হাজার ২৬৬টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর হস্তান্তর করছি। যারা ঘর পাচ্ছে তাদের আমি অভিনন্দন জানাই। সেইসঙ্গে আমি আরেকটি কথা বলবো, সেটা হচ্ছে  যে ঘরগুলো আমরা করে দিচ্ছি সেগুলো এখন আপনার সম্পত্তি। যে নিচ্ছেন বা পাচ্ছেন সেটি আপনার নিজের সম্পত্তি। কাজেই এই ঘরগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং যত্ন করার দায়িত্ব আপনার। এখানে বিদ্যুৎ ব্যবহারে অবশ্যই সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যে জিনিস আপনি পাচ্ছেন তার জন্য কোনো অর্থ খরচ করতে হচ্ছে না। কিন্তু নিজের সম্পদ হিসেবে আপনাকেই যত্ন নিতে হবে। পরে প্রধানমন্ত্রী এই জেলাকে (লালমনিরহাট) শতভাগ ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা দেন।

অপরদিকে সকাল থেকে সরেজমিনে মহিষামুড়ি আশ্রয়ণ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভূমি-ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকাজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। নানা রঙের পতাকা দিয়ে সাজানো হয়েছে অনুষ্ঠানস্থল।

কমেলা বেগম নামের এক সুবিধাভোগী বলেন, স্বামী নিয়ে রেললাইনের পাশে খোলা আকাশের নিচে ঘুমিয়েছি। একটা স্থায়ী ঠিকানা ও নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য মানুষের কাছে অনেক ঘুরেছি। তবুও মাথার ওপর মেলেনি ছাউনি। এখন ঘরবাড়ি পেয়েছি। অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আজকের এই কার্যক্রমের মধ্যদিয়ে ভূমিহীন এবং গৃহহীনমুক্ত হয়েছে দেশের আরও ৭০টি উপজেলা। এখন দেশের ৫৮টি জেলার সর্বোমোট ৪৬৪টি উপজেলার শতভাগ ভূমিহীন-গৃহহীনদের পুনর্বাসন সম্পন্ন হয়েছে।

আরএআর