যশোরে জমতে শুরু করেছে পশুর হাট, নেই ক্রেতা
পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে যশোরের পশুর হাটগুলো জমতে শুরু করেছে। তবে কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ বিক্রেতাদের। কঠোর পরিশ্রমে উৎপাদন করা কোরবানির পশু কম দামে বিক্রি করে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। গতকাল রোববার (৯ জুন) যশোরের চৌগাছা উপজেলার সীমান্তবর্তী পুড়োপাড়া পশুর হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
হাটে গিয়ে দেখা যায়, যশোর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়ার বিভিন্ন উপজেলা থেকে গরু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারী ও খামারিরা। কোরবানির গরুতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে পুরো পশুর হাট। পশু নিয়ে ক্রেতাদের অপেক্ষায় বসে আছেন বিক্রেতারা। হাঁক-ডাক দিয়েও ক্রেতা মিলছে না। হাটে রয়েছে মাঝারি থেকে বড় আকৃতির গরু। বেশিরভাগ খামারি এবং বিক্রেতারা ট্রাক, ট্রলিতে করে একসঙ্গে ৫ থেকে ১০টি বা তার অধিক গরু নিয়ে এসেছেন পুড়োপাড়া হাটে।
বিজ্ঞাপন
বিক্রেতারা বলছেন, পশু বেশি আসলেও হাটে ক্রেতার সংকট। অতিরিক্ত গরম এবং জায়গা বিশেষ হাটের অব্যবস্থাপনার কারণে হাট থেকে পশু ক্রয় করতে অনীহা রয়েছে ক্রেতাদের। একসঙ্গে একাধিক পশু এনে বিক্রি না হওয়ায় পুনরায় অন্য হাটে বা খামারে ফেরত নিয়ে যেতে হচ্ছে। ফলে পরিবহন খরচও লাগছে বিক্রেতা ও ব্যাপারীদের।
ঝিনাইদহের মহেশপুর থেকে ৫টি গরু নিয়ে পুড়োপাড়া পশুর হাটে আসেন খামারি সানোয়ার হোসেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার খামারে আমি ৫টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছি। এর আগে মহেশপুরের খালিশপুর পশুর হাটে উঠিয়েছিলাম, সেখানে দাম পাইনি। আজ এ হাটে নিয়ে এসেছি। একটা গরু বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকায়। বাকি গরুগুলো কাঙ্ক্ষিত বা ন্যায্য দামে বিক্রি করতে না পারলে চালান ধরেই লস হয়ে যাবে।
মহেশপুরের কুলশাডাঙা থেকে তিনটি গরু নিয়ে এসেছেন মনিরুল ইসলাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুই হাট ঘুরেছি, কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছি না। বিক্রেতারা যে দাম বলে তাতে গরু দিয়ে দিলে লস। এই হাটে আসলাম। এখানে গরু বেশি, কিন্তু ক্রেতা কম।
আমির হোসেন নামে এক ব্যাপারী বলেন, আমি ২০টা গরু নিয়ে এসেছি। প্রত্যেকটা গরুর দাম ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা কম বলছেন ক্রেতারা। ৩-৪টা গরু বিক্রি করেছি। সবগুলোতে ১৫-২০ হাজার টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
লিটন হোসেম নামে এক ব্যাপারী অভিযোগ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুড়োপাড়া হাটটি অনেক ভেতরে। যে কারণে এখানে ক্রেতারা টাকা-পয়সা নিয়ে আসার সাহস পান না। তারপর রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা নেই। বিক্রেতারা কষ্ট করে হাটে পশু উঠালেও ক্রেতারা হাটে আসছেন না। অতিরিক্ত গরমের কারণে হাট ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ছে।
ঝিনাইদহ থেকে পশু কিনতে এসেছেন ফরহাদ হোসেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাটে প্রচুর পশু উঠেছে। ভালো ভালো আকর্ষনীয় পশু উঠেছে। তবে হাটের ব্যবস্থাপনা আরও ভালো হলে ক্রেতাদের জন্য ভালো হতো।
যশোর থেকে পশু কিনতে এসেছেন রাসেল হোসেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, অতিরিক্ত গরমে হাটে ঘুরে ঘুরে পশু দেখার মতো পরিবেশ নেই। অনেক পশু দেখেছি। দাম মোটামুটি ক্রেতাদের জন্য ভালোই। তবে হাটে ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম।
পুড়োপাড়া পশুর হাটের মালিক মো. নাসির উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাটে প্রচুর পশুর সরবরাহ আছে। পশু আনা নেওয়ার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করেছি।
তিনি বলেন, হাটটা বাজারের মধ্যে হওয়ায় একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা টহল রয়েছে। অতিরিক্ত গরমের কারণে ক্রেতার সংখ্যা কম। তবে আশা করি আস্তে আস্তে ক্রেতাদের সংখ্যা বাড়বে।
এ্যান্টনি দাস অপু/আরএআর