লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল ৫৩ বছর পরেও সবখানে পৌঁছায়নি। জনগণের মৌলিক অধিকারগুলো আজও নিশ্চিত হয়নি। দেশ পাকিস্তানের শাসকদের হাত থেকে মুক্ত হলেও দেশীয় দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। সংবিধানের প্রয়োগিক অনুশীলন করে দল-মত, গোষ্ঠী ও ধর্মনির্বিশেষে সবার জন্য দুর্নীতিমুক্ত ভারসাম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থার প্রত্যাশায় সকলকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায় সামাজিক সংগঠন 'কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ'। 

গতকাল শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কেআইবি) মিলনায়তনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সমন্বিত সৎ সমাজের উদ্যোগ-শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।


 
অনুষ্ঠানে হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, দুর্নীতিবাজরা সুযোগ পেলে সিংহের মতো গলায় কামড় দিয়ে ধরে। তবে সংসদ সদস্য ও রাজনীতিবিদরা সৎ হলে এসব দুর্নীতিবাজকে সহজে নির্মূল করা যাবে। 

সাবেক কন্ট্রলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মাসুদ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি কামাল উদ্দিন ও ড. রেজা কিবরিয়া। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লে. কর্নেল আবু ইউসুফ যোবায়ের উল্লাহ্ পি এসসি (অবঃ)। 

সূচনা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ও কাঙ্খিত বাংলাদেশের যুগ্ম সম্পাদক আহমেদ আলী শেখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালক ও সমন্বয়কারী ছিলেন কর কমিশনার (অবঃ) মো. আসাদুজ্জামান। সেমিনারে দুর্নীতি দমন মামলার জন্য আলাদা আদালত গঠনসহ তিনটি সুপারিশমালা প্রদান করা হয়। 

প্রবন্ধ উপস্থাপনায় লে. কর্নেল আবু ইউসুফ যোবায়ের উল্লাহ্ পি এসসি (অবঃ) দেশের বর্তমান বিচার ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ ও সমস্যার দিকে আলোকপাত করে বলেন, বর্তমানে দেশে ৪২ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে, যার জন্য রয়েছেন মাত্র ২১শ বিচারক ও ৯১ হাজার আইনজীবী। এই অসমতা দূর করতে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আরও কর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। 

সেমিনারে বক্তারা বলেন, বিচার বিভাগের এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি শুধুমাত্র বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগই বাড়াচ্ছে না, বরং এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যকেও বিঘ্নিত করছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের জন্য কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরে। প্রথমত, বিচার বিভাগের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বিচারক ও আইনজীবীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা। দ্বিতীয়ত, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনা। তৃতীয়ত, জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইনি শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।

কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ'র নেতারা বলেন, দুর্নীতি আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাসা বেঁধেছে। এটি দূর করতে হলে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। বিচার বিভাগের সংস্কার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি এবং সুশাসনের প্রতিষ্ঠা এ ক্ষেত্রে অপরিহার্য।

সেমিনার শেষে 'কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ' এর পক্ষ থেকে একটি প্রতিজ্ঞাপত্র গ্রহণ করা হয়, যেখানে সকলেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন।

এমএএস