জয়পুরহাট জেলা শহরের নতুনহাটে কোরবানির পশুর হাট বেশ জমে উঠেছে। শনিবার (৮ জুন) কোরবানির পশুর হাটে দেশি গরুর পাশাপাশি ভারতীয় বোল্ডার জাতের গরু উঠেছে অনেক। কোরবানির পশু বেচাকেনাও হচ্ছে। তবে হাট ইজারাদার ও তার নিয়োজিত লোকজনেরা নিয়ম বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত হাসিল আদায় করছেন বলে পশু ক্রেতা-বিক্রেতারা অভিযোগ করেছেন।

এদিকে কোরবানির পশুরহাটে ভারতীয় গরু আমদানি ও নিয়ম বহির্ভূত হাসিল আদায়ের কারণ জানতে চাওয়ায় হাট ইজারাদার ও জয়পুরহাট পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কালীচরণ আগরওয়ালা ঢাকা পোস্টের সাংবাদিক চম্পক কুমারের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তার মোবাইল কেড়ে নেন। শনিবার (৮ জুন) বিকেল সাড়ে ৩টায় হাট ইজারাদারের কক্ষে এ ঘটনা ঘটেছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি সপ্তাহে শনিবার ও বুধবার জয়পুরহাটের নতুনহাট বারের দিন। আর শুধু শনিবারেই গরুর হাট বসে। ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে আগামী বুধবারেও পশুরহাট বসবে।

 সাংবাদিকের প্রশ্নে মেজাজ হারিয়ে ফেলে চটে ওঠেন হাট ইজারাদার ও জয়পুরহাট পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কালীচরণ আগরওয়ালা।

হাটে গিয়ে দেখা গেছে, হাঁসফাঁস গরমে কোরবানির পশুরহাটে প্রচুর দেশি গরুর আমদানি হয়েছে। পাশাপাশি ভারতীয় বোল্ডার জাতের অনেক গরু আমদানি হয়েছে। গরু কেনা-বেচা ভালো হচ্ছে। তবে দেশি বড় গরুর দাম তুলনামূলক কম। বাইরের ব্যাপারীদের ভারতীয় বোল্ডার গরু বেশি পছন্দ করছেন ও কিনছেন।

কোরবানির পশুর হাটের ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, হাট ইজারাদার ও তার নিয়োজিত লোকজনেরা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছে হাসিল আদায় করছেন। ক্রেতার কাছে ৬৫০ টাকা ও বিক্রেতার কাছে একশ টাকা করে হাসিল আদায় করা হচ্ছে। হাটের হাসিল আদায়ের রসিদে হাসিলের টাকার অঙ্ক উল্লেখ করা হচ্ছে না।

তবে জয়পুরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক সরকার মোহাম্মদ রায়হানের গত ৪ এপ্রিল স্বাক্ষরিত জয়পুরহাটের উপজেলা পৌরসভার হাট-বাজারের ১৪৩১ অনুমোদিত টোল আদায়ের তালিকা বলা আছে, প্রতিটি গরু-মহিষ, ঘোড়া ও উটের হাসিল ৫৫০ টাকা। ক্রেতা-বিক্রেতা যে কোনো একপক্ষের কাছে হাসিল আদায় করতে হবে। কিন্তু নিয়ম বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত  হাসিল আদায় করছেন হাট ইজারাদার ও জয়পুরহাট পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কালীচরণ আগরওয়ালা।

হাটে আসা জহুরুল ইসলাম নামের একজন বলেন, যারা ইজারার হাসিল লিখছে তার জন্য বিক্রেতার কাছ থেকে একশ টাকা নিচ্ছে। আর ক্রেতার কাছ থেকে ৬৫০ টাকা নিচ্ছে। রসিদে হাসিলের টাকা উল্লেখ করা হয়নি। পাঁচবিবির সালপাড়া বাজার এলাকা থেকে আসা আরেক বিক্রেতা মো. মজনু বলেন, আমদানি বেশি, ব্যাপারী আসছে না। খালি সাদা বোল্ডার কিনছে।

গাজীপুর থেকে আসা ব্যাপারী মো. রাজু বলেন, ১০টি ভারতীয় বোল্ডার জাতের গরু কেনা হবে। দেশি ষাঁড় কেনার টার্গেট নেই। এর মধ্যে ৮টি গরু কেনা হয়েছে। দাম পড়েছে প্রায় ২৩ লাখ টাকা। আর দুটি বোল্ডার গরু কিনে চলে যাব।

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থেকে দুটি ভারতীয় বোল্ডার জাতের ‍গরু বিক্রি জন্য নিয়ে এসেছেন সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রায় ৬ মাস আগে দুটি গরু সাড়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। আজকে দাম চাচ্ছি সাড়ে ৪ লাখ। কিন্তু ৪ লাখ দাম বলে। এ দামে বিক্রি করলে লাভ হবে না।

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর থেকে আসা গরু বিক্রেতা হিরো সরদার বলেন, ৪টি বড় ষাঁড় গরু এনেছিলাম। দুটি বিক্রি করেছি ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে। বাড়িতে এগুলো ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা বলেছিল। এখানে এনে আরও কম টাকা পেলাম। আর দুটি গরু বিক্রি হয়নি। এই দুটির দাম চেয়েছিলাম ৪ লাখের উপর। বাড়িতে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা বলেছিল। কিন্তু হাটে এসে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বলছে।

হাটে ভারতীয় বোল্ডার গরু প্রসঙ্গে জানতে হাট ইজারাদার কালীচরণ আগরওয়ালা বলেন, আমাদের এ এলাকায় ভ্যাকসিনের মাধ্যমে ছোট বাছুরকে বোল্ডারে রূপান্তর করে বিক্রি করা হয়। এখানে একেকজন খামারি চার-পাঁচ বছর থেকে গরুগুলো লালন-পালন করে বিক্রি করছে। জয়পুরহাটের আশপাশের কোনো সীমান্ত এলাকা দিয়ে গরু ঢোকার ব্যবস্থা নেই।

হাটে অতিরিক্ত হাসিল আদায় সম্পর্কে জানতে চাইলে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন হাট ইজারাদার কালীচরণ আগরওয়ালা। মোবাইলে ভিডিও বক্তব্য নেওয়ার সময় ঢাকা পোস্টের এই প্রতিনিধির সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে মোবাইল কেড়ে নেন তিনি। পরে সেখান থেকে মোবাইল নিয়ে চলে আসেন এই সাংবাদিক। এ সময় কালীচরণ আগরওয়ালা বলেন, আমাদের খরচ নাই? প্রশাসন টাকা নেয় না?

নতুনহাট জয়পুরহাট পৌরসভার নিয়ন্ত্রণাধীন। এ বিষয়ে জয়পুরহাট পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমানের মোবাইল বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

চম্পক কুমার/এএএ