‘আমার মেয়েকে নিয়ে কত আশা ছিল সব শেষ হয়ে গেল। মেয়ে সকালে আমাকে কল করে বলল, মা আমি রংপুরে এসেছি বাড়িতে আসতেছি। তুমি কোথাও যাইও না বাড়িতে থাকো, আমার আসতে বেশিক্ষণ সময় লাগবে না। কিন্তু মেয়ে যে কিছুসময় পর একেবারে চলে যাবে তা তো বুঝতে পারিনি।’

এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের গংগাচড়ায় ভিন্নজগত সড়কের চেয়ারম্যান মোড় বটেরতল এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও থ্রি-হুইলারের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী আজমুদা আক্তার রিমুর মা আজমিরা বেগম। একই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন একজন আনসার সদস্য ও একজন কলেজ শিক্ষকা। আহত হয়েছেন আরও চারজন থ্রি-হুইলারের যাত্রী।

আজমুদা আক্তার রিমু নীলফামারী কিশোরগঞ্জের পুটিমারি ইউনিয়নের হাজিরহাট এলাকার আব্দুল আলিমের মেয়ে। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ালেখা করতেন। 

জানা যায়, রিমু স্থানীয় কিশোরগঞ্জ বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি ও রংপুর সরকারি কলেজ থেকে ২০২১ সালে এইচএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরিবারের চাওয়া আর নিজের স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করবেন তিনি। তবে অল্পের জন্য মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। এবার ঈদুল আজহার ছুটি পেয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যক্রমে বাড়ির কাছাকাছি এসে সড়কেই ঝড়ল এই মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রাণ। মেয়েকে হারিয়ে শোকের ছায়া নেমেছে তার পরিবারে।

রিমুর বাড়িতে দেখা যায়, তার মা আহাজারি করছেন। তার মৃত্যুর খবরে তার বাড়িতে এসে ভিড় করেছেন পাড়া-প্রতিবেশীরা।

রিমুর মা আজমিরা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আমার মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমার মেয়ে বড় হবে, সে বড় হয়ে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করবে। আল্লাহ এ কি করল? আমার মেয়েকে নিয়ে গেল। আমি এখন কী নিয়ে বাঁচব আর কাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখব। আমার মেয়েকে আমি ছোট থেকে আদর দিয়ে বড় করেছি। আমার মেয়ের এভাবে মৃত্যু হবে আমি কখনো কল্পনা করিনি। আমার আর তার বাবার স্বপ্ন পরিশ্রম সব শেষ হয়ে গেল। আমার মেয়ে কোথায় গেল? আমার মেয়েকে ছাড়া আমি বাঁচব কিভাবে। আল্লাহ আমার মেয়েকে তুমি ফিরিয়ে দাও। 

এদিকে এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আমাদের শিক্ষার্থী আজমুদা আক্তার রিমু মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ঘটনায় আমরা সবাই মর্মাহত। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা শোক প্রকাশ করছি এবং পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, শনিবার (৮ জুন) দুপুরের দিকে রংপুরের গঞ্জিপুর ভিন্নজগত সড়কের চেয়ারম্যান মোড় বটেরতল এলাকায় যাত্রীবাস ও থ্রি-হুইলারের (সিএনজি) মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসের গার্ড মেহেরুল ইসলাম নামের একজন আনসার সদস্য নিহত হন। ওই ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশ আহতদের উদ্ধার করেন। পরে দুর্ঘটনাস্থল থেকে আহত চারজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজমুদা আক্তার রিমু ও দিপা রানী সরকার নামের এক কলেজ শিক্ষিকা মারা যান। 

শরিফুল ইসলাম/আরকে