পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে ফরিদপুরে বড় বড় জাতের গরু লালন পালন করেছেন খামারিরা। এখন সেসব গরু তারা ক্রেতাদের সামনে আনছেন।

এরই মধ্যে সবার নজর কেড়েছে সদর উপজেলার একটি খামারের ৩২ মণ ওজনের একটি ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়। এর নাম রাখা হয়েছে ‘সুলতান’। ষাঁড়টি বিক্রির জন্য দাম চাওয়া হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা। তবে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ১৮ লাখ টাকা।

সুলতানকে লালন-পালন করা হয়েছে ফরিদপুর শহর থেকে অন্তত ৬ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের গেরদা গ্রামের তাহেরা এগ্রো ফার্মস লিমিটেড খামারে।

২০১৭ সালে তাহেরা এগ্রো ফার্মটির যাত্রা শুরু হয় ২৪টি গরু নিয়ে। ফার্মটি প্রতিষ্ঠা করেন গেরদা গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ নওশের আলী ও তাহেরা নওশের দম্পতির দুই ছেলে সৈয়দ আকিব নওশের ও সৈয়দ আবরার নওশের।

বর্তমানে সাড়ে চার বিঘা জমিতে সুবিশাল পাচটি টিনশেড ঘরে অন্তত আড়াই শতাধিক গরু লালন-পালন করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি সৌখিন খামারি দুই ভাই ঘোড়া, দুম্বা, খাসি ও বিদেশি জাতের কুকুরও লালন-পালন করছেন।

শুক্রবার (৭ জুন) বেলা ১১টার দিকে ওই খামারে গিয়ে দেখা যায়, এবার কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ১৭ থেকে ২০ মণ ওজনের ২২টি, ২৩ থেকে ২৫ মণ ওজনের তিনটিসহ বিভিন্ন ওজনের ১০০টি গরুকে প্রস্তুত করা হয়েছে। খামারের অন্তত ৮ জন শ্রমিক এসব গরুর যত্ন নিচ্ছে। 

এই খামারের সাড়ে চার বছর বয়সী কালো রঙের সুলতানের ওজন ৩২ মণ। উচ্চতা আনুমানিক ৭০ ইঞ্চি ও চওড়া ২০ থেকে ২২ ইঞ্চি। প্রতিদিন দুপুরে অন্তত তিনজন কর্মচারী তিনদিক থেকে দড়ি টানাটানি করে শেড থেকে বাইরে আনে গোসল করানোর জন্য। এরপর খেতে দেওয়া হয় সবুজ ঘাস।

ওই ফার্মের ব্যবস্থাপক আকবর হোসেন জানান, সুলতানকে প্রতিদিন অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ কেজি কাঁচা ঘাস খেতে দেওয়া হয়।পাশাপাশি নিজেদের প্রক্রিয়াজাতকৃত গম, ভুট্টা, ছোলা ও খেসারির ডালের ভুসি দিয়ে বানানো দানাদার খাবার খেতে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, আমরা শতভাগ প্রাকৃতিক খাবার খেতে দিই। আশপাশের কয়েকটি গ্রামে অন্তত ২০০ বিঘা জমিতে কাঁচা ঘাস লাগানো হয়েছে। এসব ঘাস কেটে এনে পশুদের খাওয়ানো হয়। এছাড়া অন্য কোনো বিশেষ খাবার বা ইনজেকশন পশুদের দেওয়া হয় না। তাই আমাদের খামারের গরুর চাহিদা বেশি। তাছাড়া মোটাতাজাকরণে কোনো ওষুধ বা স্টেরয়েড হরমোন দেওয়া হয় না বলে এক বছরের কোরবানির ঈদের জন্য প্রস্তুতকৃত গরু বিক্রি না হলে পরের বছর সেটি বিক্রি করতে পারি।

খামারের মালিক সৈয়দ আবরার নওশের বলেন, সুলতানের দাম আমরা ২৫ লাখ টাকা চেয়েছি। অনেক ক্রেতা এসে গরুটি দেখে বিভিন্ন দাম বলেছেন। সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ১৮ লাখ টাকা। ২০১৭ সালে বাণিজ্যিকভাবে খামার শুরুর পর বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েই ফার্ম পরিচালনা করেছি। এজন্য আমাদের লসের মধ্যে পড়তে হয়নি। গত বছর ফার্ম থেকে ৬৫টি এবং হাটে নিয়ে ১৫টিসহ ৮০টি বিভিন্ন সাইজের গরু বিক্রি করেছি।

তিনি বলেন, আমরা সাধারণত হাটে গিয়ে গরু বিক্রি করি না। আমাদের প্রতিষ্ঠানের নামে ফেসবুক পেজে প্রচারণা চালিয়ে আমরা ক্রেতা পেয়ে যাই। পাশাপাশি আগের বছর যারা গরু নেয় তারা পরের বছরও নেয়। ক্রেতারা এসে নিজ চোখে দেখে গরু পছন্দ করে টাকা দিয়ে যান। তাদের চাহিদামতো সময় ও স্থানে আমরা নিজস্ব পরিবহনে গরু ডেলিভারি দিয়ে থাকি।

এই ফার্মের আরেক পরিচালক সৈয়দ আকিব নওশের বলেন, আমরা সারাবছর খাইয়ে একেকটা গরু কোরবানির ঈদের বাজারকে টার্গেট করে প্রস্তুত করি। দেখা যায় এ সময় মায়ানমার ও ভার‍ত থেকে চোরাইপথে গরু দেশে আসে। এটা ঠেকাতে না পারলে দেশীয় খামারিদের টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। পাশাপাশি গোখাদ্যের দাম প্রতিনিয়ত যেভাবে বাড়ছে এর লাগাম টানতে না পারলে, কর্মচারী খরচ, খামার পরিচালনাসহ নানান ব্যয়ের চাপে খামার চালানো কঠিন হয়ে যাবে। সরকার একটু নজর দিলে আমরা দেশীয় খামারিরাই দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে মাংস রপ্তানি করতে পারব।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস বলেন, ফরিদপুরের খামারিরা যাতে গরু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর স্টেরয়েড হরমোন ব্যবহার না করে সে ব্যাপারে আমরা সারাবছর সচেতনতা বৃদ্ধি ও নজরদারি করেছি। পাশাপাশি বৈজ্ঞানিকভাবে গরু লালন-পালনের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। এ বছর ফরিদপুরে কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭৯৮টি। তবে জেলায় এর চেয়ে অনেক বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এসব পশু ফরিদপুর ও আশপাশের জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামের হাঁটে বিক্রি করা হবে।

জহির হোসেন/আরকে