মেহেরপুরে অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও চাহিদার দ্বিগুণ কোরবানি উপযোগী গবাদিপশু মজুত থাকলেও বিক্রি না থাকায় হতাশায় দিন পার করছেন খামারিরা। পশু পালনে প্রতিনিয়িত খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লেও এ বছর গরুর দাম কম। বাইরের ব্যবসায়ীরাও আসছেন না পশুর হাটে। জেলার বাড়িতে বাড়িতে বিক্রিযোগ্য গরু থাকলেও নেই ক্রেতা। ফলে লোকসানের শঙ্কা করছেন খামারিরা। তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, এখনো সময় আছে। খামারিদের হতাশার কিছু নেই। লাভবান হবেন তারা।

আর মাত্র ১০ দিন পরই কোরবানির ঈদ। এ উপলক্ষে মেহেরপুরের কোরবানির পশুর হাটে বিভিন্ন জাতের ছোট বড় গরু উঠতে শুরু করেছে। জেলার পারিবারিক খামারিদের গোয়ালেও রয়েছে ছোট, বড় ও মাঝারি আকৃতির গরু। এ বছর কোরবানির জন্য গরুর চেয়ে ছাগলের চাহিদা বেশি । রাজধানীসহ সারাদেশ থেকে আসছেন গরুর বেপারীরা। হাটে পর্যাপ্ত পশু আমদানি হচ্ছে। ক্রেতারাও ভিড় করছেন। তবে এখনই বেচাকেনা জমে উঠেনি। ক্রেতারা আসছেন দেখছেন আর চলে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি বুঝে দুয়েকজন কিনছেন। তবে আরো কয়েকদিন পর বেচাকেনা পুরোদমে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বেপারীরা। 

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, তিনটি উপজেলায় হৃষ্ট, পুষ্টকরণ কোরবানিযোগ্য মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ১ লাখ ৯০ হাজার ৮৩৮টি। এর মধ্যে গরু ৫৯ হজার ২২০টি, মহিষ রয়েছে ৫৪৪টি, ছাগল ১ লাখ ২৮ হাজার ৮০টি এবং ভেড়া রয়েছে ২ হাজার ৯২৯টি। যার মধ্যে জেলায় জন্য প্রয়োজন হবে ৯০ হাজার পশু। উদ্বৃত্ত থাকবে লক্ষাধিক গবাদিপশু। উদ্বৃত্ত এসব গবাদিপশু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে।

জেলার বড় গরুর খামারি গাংনী পৌরসভার মেয়র আহমেদ আলী। তিনি বলেন, আমার খামারে দেড় শতাধিক গরু বিক্রিযোগ্য হয়েছে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে গরু লালন-পালন করেছি। খড়, ভুসি, ছোলা, কাঁচা ঘাস ও কলাইয়ের খোসা খাওয়ানো হয়। প্রতিদিন খামারে গরুর পরিচর্যায় রাখা হয়েছে ৯ জন শ্রমিক। অন্যান্য বছরে কোরবানির আগে গরু বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে কিছু টাকা লাভ হয়। কিন্তু এ বছর গরুর চাহিদা কম। দামেও পোষাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত একটি গরুও বিক্রি করতে পারিনি।

ভাটপাড়া গ্রামের খামারি আমিরুল ইসলাম বলেন, আমি একটি ফ্রিজিয়ান জাতের বাছুর গরু কিনে ছিলাম দুই বছর আগে। ধানের বিচালি, খড়, গমের ভুসি, ছোলা, কাঁচা ঘাস ইত্যাদি খাইয়ে গরুটিকে মোটাতাজা করেছিলাম। গরুটি মোটাতাজা করতে বিভিন্ন দোকান থেকে ধার দেনা করতে হয়েছে। সামনে কোরবানির ঈদ। দোকানের বাকি পরিশোধ করতে হবে। গরুটি বিক্রি করবো বলে মনোস্থির করে ক্রেতা পাচ্ছিলাম না। অবশেষে অল্প দামেই গরুটি বিক্রি করতে হয়েছে। খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয়নি।

আরেক খামারি হাফিজুল ইসলাম বলেন, আমার বাড়িতে দুটি মোটা গরু রয়েছে। বিক্রি করার চেষ্টা করেও বিক্রি করতে পারিনি।

গৃহবধূ হানুফা খাতুন বলেন, ঈদের বাজারে লাভে বিক্রি করব বলে গরু মোটাতাজা করেছি। এখন পর্যন্ত বেপারী বা দালাল পাইনি। দু-একজন বেপারী এসে তাদের মনগড়া দাম বলে চলে যাচ্ছেন। বেপারীদের হাঁকা দামে গরু বিক্রি করে খরচের টাকায় উঠবে না।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম বড় পশুর হাটের একটি হচ্ছে বামুন্দি পশুর হাট। সরেজমিনে মেহেরপুরের সবচেয়ে বড়  বামুন্দি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, মেহেরপুর জেলাসহ আশপাশের জেলা থেকেও গরু নিয়ে বাজারে এসেছেন পারিবারিক খামারিসহ বেপারীরা। গরু নিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছেন তারা। কয়েকজন আসছেন আর দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। তবে বিক্রি নেই। 

গরু ব্যবসায়ী কুষ্টিয়ার আমলা সদরপুরের লাল খান বলেন, বর্তমানে হাটে গরু আছে পর্যাপ্ত কিন্তু ক্রেতা নেই। অন্যান্য বছরে বিভিন্ন জেলা থেকে গরু কিনতে বড়বড় ব্যবসায়ীরা আসতেন। গরু কিনে ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে যেতেন। কিন্তু এ বছর সেই বেপারীরা এখন পর্যন্ত আসেননি। আমরা হাটে কয়েকটি গরু নিয়ে আসছি ,বিক্রি করতে না পেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। 

স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী হেলালা খান ও মহিবুল,মোয়াজ্জেম আলী বলেন, আমরা গ্রামে গ্রামে পারিবারিক খামার থেকে গরু কিনে এনেছি। ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম ও বরিশালের বড় বড় ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ থেকে শত শত গরু কিনে নিয়ে যান। কিন্তু এ বছরে গরু কিনে রেখে আর বিক্রি করতে পারছি না। দু-একজন বড় ব্যবসায়ী পাচ্ছি কিন্তু দামে অনেক কম হওয়ায় বিক্রি করতে পারছি না।

মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হারিছুল আবিদ বলেন, মেহেরপুর একটি প্রাণিসম্পদ সমৃদ্ধ জেলা। জেলার খামারিরা প্রাকৃতিক খাবার যেমন ধানের খড়, গমের ভুসি, ছোলা এবং কাঁচা ঘাস খাইয়ে গবাদি পশু বড় করে থাকেন। মেহেরপুর জেলার গবাদিপশুর চাহিদা দেশজুড়ে। জেলায় প্রায় দুই লক্ষাধিক গবাদি পশু কোরবানিযোগ্য হয়েছে। যা জেলার চাহিদার দ্বিগুণ। আশা করছি খামারিরা তাদের পালনকৃত পশুর ন্যায্যমূল্য পাবেন। 

আকতারুজ্জামান/আরএআর