রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আরসিসিআই) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু হেনা রেজাউল করিম|

প্রস্তাবিত বাজেটে আয়-ব্যয়ের বিশাল ঘাটতি পূরণে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নেওয়ার যে পরিকল্পনা করছে এর ফলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান আরও সংকুচিত হবে বলে রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি (আরসিসিআই) আশঙ্কা প্রকাশ করছে। এ ছাড়া লক্ষ্য করা যায় যে, বাজেটে আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বাড়ার ফলে রাজস্ব আদায়ের চাপ বাড়বে ব্যবসায়ীদের ওপর। তাই প্রস্তাবিত বাজেটকে ব্যবসায়ীদের চাপের বাজেট বলেও আখ্যায়িত করেছেন আরসিসিআই।

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আরসিসিআই) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু হেনা রেজাউল করিম এই প্রতিক্রিয়া জানান।

আরসিসিআই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু হেনা মো. রেজওয়ানুল করিম বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিতকরণ, অযৌক্তিক ব্যয় কমানোর দিক-নির্দেশনা, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তরুণ-তরুণী ও যুবসমাজকে প্রস্তুত করতে বিশেষ বরাদ্দ, সবার জন্য খাদ্য, পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়ন, দেশীয় শিল্প সুরক্ষা, প্রবৃদ্ধি অর্জন, প্রতিটি গ্রামকে আধুনিকায়নকরণ, ডিজিটাল স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, ফাস্ট ট্র্যাক অবকাঠামো প্রকল্প গুরুত্ব দেওয়া, জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলা এবং বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণ, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দিক-নির্দেশনা, দারিদ্র বিমোচনসহ সামাজিক সুরক্ষা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এ বাজেট ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। জাতীয় সংসদে ৬ জুন অর্থমন্ত্রী কর্তৃক উত্থাপিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বিষয়ে এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার বিদেশি ঋণ, সুদ ও ভর্তুকির মতো ব্যয় মেটাতে কর অব্যাহতি ও শুল্ক-করে ছাড় কমিয়ে রাজস্ব আয়ের যে কৌশল গ্রহণ করেছে এর ফলে শুধু মধ্যবিত্ত নয়, নিম্ন ও উচ্চবিত্তদের ওপরেও নানা ক্ষেত্রে করের চাপ বাড়বে এবং বেসরকারি বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে বলে রংপুর চেম্বার মনে করে।

প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংকে রাখা টাকার ওপর আবগারি শুল্কের হার বাড়ানোর ফলে সাধারণ মানুষ ব্যাংকে আমানত রাখতে নিরুৎসাহিত হওয়ার পাশাপাশি বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা না বাড়ানোয় করদাতারা নতুন করে মূল্যস্ফীতির বাড়তি চাপে পড়বে এবং বেশকিছু পণ্যের ওপর স্থানীয় পর্যায়ে ও আমদানিতে শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক ও রেগুলেটরি ডিউটি বাড়ানোর প্রস্তাব করার ফলে পণ্য মূল্য অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং সাধারণ জনগণের কষ্ট আরও বাড়বে বলে রংপুর চেম্বার মনে করে। প্রস্তাবিত বাজেটে মেডিক্যাল যন্ত্রপাতির সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক বৃদ্ধি করায় অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় আরও বেড়ে যাবে বলে রংপুর চেম্বার আশঙ্কা প্রকাশ করছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে অনৈতিক ও অসাংবিধানিক। কেননা বৈধ আয়ের ওপর ৩০% আর অবৈধ আয়ের ওপর ১৫% কর। তাই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না দিয়ে বরং এদের কঠোর হস্তে আইনের মাধ্যমে দমন করা উচিত বলে রংপুর চেম্বার মনে করে। এতে বৈধ করদাতারা নিরুৎসাহিত ও ক্ষুব্ধ হবেন। তাই সংশোধিত বাজেটে এটা রহিত করা দরকার।

তবে রংপুর চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু হেনা মো. রেজওয়ানুল করিম প্রস্তাবিত বাজেটে বিড়ির ওপর মাত্রাতিরিক্ত করারোপ করায় বিড়ি শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হবে বলে মনে করেন। তাই কর না বাড়িয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে ব্যান্ডরোল বিহীন নকল বিড়ি বাজারজাত করতে না পারে সে দিকে নজর দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন। ব্যান্ডরোলবিহীন বিড়ির কারণে সরকার বিড়ি খাত থেকে প্রতি বছর ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে বলে রংপুর চেম্বার মনে করে। তাই রংপুর চেম্বার সংশোধিত বাজেটে বিড়ি শিল্পের ওপর যৌক্তিক কর নির্ধারণপূর্বক ব্যান্ডরোল বিহীন নকল বিড়ি উৎপাদন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

এ ছাড়া তিনি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে প্রবৃদ্ধির পথ যাতে সংকুচিত না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার পাশাপাশি চাপে থাকা সামষ্টিক অর্থনীতি ও বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বেসরকারি বিনিয়োগে কীভাবে প্রাণ ফেরানো যায় সে ব্যাপারে সংশোধিত বাজেট পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। এ ছাড়া তিনি ব্যবসা সহজীকরণ সূচক, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ব্যাংক ঋণ ও গ্যাস-বিদ্যুতের সহজলভ্যতার বিষয়গুলো মেটাতে না পারলে বিনিয়োগ কখনোই বাড়বে না বলে মতামত ব্যক্ত করেন।

এ ছাড়া তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ভিত্তি মজবুত না হলে অর্থনীতি কোনোদিন টেকসই হবে না। তাই তিনি সংশোধিত বাজেটে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তার জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখার আহ্বান জানান। সামান্য ছাড় দিয়ে ব্যবসায়ীদের উৎসাহ দিলে চলবে না- আর শুধুমাত্র অর্থ বরাদ্দ রাখলেই হবে না, বরাদ্দকৃত অর্থ যাতে সুষ্ঠু ও সুষমভাবে বণ্টন হয় সেদিকে নজরদারি ও সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রাখা অত্যন্ত জরুরি বলে রংপুর চেম্বার মনে করে।

প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া রংপুর অঞ্চলের দারিদ্র নিরসন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য রংপুরে প্রস্তাবিত স্পেশাল ইকোনমিক জোন স্থাপনসহ  উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নের স্বার্থে ‘‘নর্থ বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট মিনিস্ট্রি’’ গঠন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, রংপুর বিভাগের শিল্পায়নের জন্য ট্যাক্স হলি ডের মেয়াদ ১৫ বছর করা ও ‘‘আলাদা বাজেট বরাদ্দ’’-এর বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত ছিল বলে রংপুর চেম্বার মনে করে। তাই রংপুর চেম্বার সংশোধিত বাজেটে রংপুর অঞ্চলের দারিদ্র্য নিরসন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বৃহৎ শিল্প-কলকারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে দ্রুত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখার দাবি জানান। প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায় সে ব্যাপারে অর্থের সুষম বণ্টন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক কর্মসূচি ও কৌশল এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে যাতে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র বিমোচনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক সুফল বয়ে আনতে পারে রংপুর চেম্বার সে কামনা করে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএএ