নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর গ্রামের মো. আবু বক্কর সিদ্দিক রতন পেশায় একজন কৃষক। সাড়ে তিন বছর আগে বাড়ির গাভির পেট থেকে ফ্রিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড় গরুর জন্ম হয়। নিজের সন্তানের মতো যত্ন করে গরুটিকে লালন-পালন করায় ছেলে জুবায়েরের নাম অনুসারে গরুটির নাম রাখেন যুবরাজ। সাড়ে তিন বছর পর যুবরাজ এখন সুঠাম দেহের অধিকারী। যুবরাজের সুঠাম দেহের প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। ফলে আসন্ন কোরবানির ঈদে যুবরাজকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন আবু বক্কর সিদ্দিক।

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছরই দেশের বড় বড় খামারগুলো ছোট-বড় নানা আকারের ভিন্ন ভিন্ন জাতের গরু লালন-পালন করে। তবে শুধু বড় খামারগুলোতেই নয়, পারিবারিক খামারগুলোতেও এই ঈদকে কেন্দ্র করে গরু মোটাতাজা বা প্রস্তুত করা হয়। প্রতি বছরই আলোচনায় আসে সবচেয়ে বড় আকারের গরুগুলোর নাম। এবার নাটোরের নলডাঙ্গার আবু বক্কর সিদ্দিক রতন যুবরাজ নামে বিশাল এই ষাড় গরু প্রস্তুত করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

কৃষকের দাবি- প্রচলিত পদ্ধতির পরিমাপে গরুটির বর্তমান ওজন ৩০ মণ (১২০০ কেজি)। যুবরাজের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সে কোনো ধরনের বাসি খাবার সে খায় না। মাথার ওপর সব সময় ঘুরতে হয় একটি ফ্যান। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততো বেশি মানুষ বিভিন্ন জায়গা থেকে উপজেলার মাধনগর গ্রামে আসছেন যুবরাজকে দেখতে। 

আবু বক্কর সিদ্দিক রতন বলেন, আমি ও আমার পরিবার ষাঁড় গরুটিকে সন্তানের মতো লালন-পালন করে বড় করেছি। এখন যুবরাজের বয়স প্রায় সাড়ে তিন বছর।  অনেক যত্ন ও ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছি। তাই দাম চাওয়াটা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তারপরও প্রাথমিকভাবে আমরা একটি দাম প্রকাশ করেছি। যুবরাজের জন্য ১৫ লাখ টাকা দাম চেয়েছি। এক্ষেত্রে ক্রেতাদের আলোচনার সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।

যুবরাজকে কী ধরনের খাবার খাওয়ানো হয়- জানতে চাইলে তিনি বলেন, গরুটি স্বাভাবিক খাবার খাইয়ে বড় করা হয়েছে। প্রতিদিন ভূষি, খেসারির ডাল, ছোলা, ভুট্টা ভাঙানোর সাথে কাঁচা ঘাস বেশি খাওয়ানো হয় যুবরাজকে। ঘরের মধ্যে ফ্যান চালাতে হয় সব সময় ও গোসল করাতে হয় নিয়মিত। কোনো ধরনের বাসি খাবার যুবরাজ খায় না। তার জন্য সব সময় তরতাজা খাবার প্রস্তুত রাখতে হয়। গরুটি মোটাতাজা করতে কোনো ধরনের মেডিসিন ব্যবহার করা হয়নি বলে দাবি করেন রতন। 

যুবরাজকে দেখতে আসা ফজলে রাব্বী বলেন, এলাকায় বাড়িতে ও খামারে অনেকেই গরু লালন-পালন করেন। তাদের মুখ থেকে যুবরাজের কথা শুনে দেখতে এসেছি। জীবনে অনেক গরু দেখেছি এমন বড় গরু খুব একটা চোখে পড়েনি। বাড়িওয়ালা নিজের সন্তানের মতো করে গরুটির যত্ন নিয়েছেন। তিনি তার পরিশ্রমের ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে আশা করি। 

কৃষি উদ্যোক্তা সাকিব হাসান বলেন, বাড়িতে এ রকম বড় গরু তৈরি করে তিনি অন্য পারিবারিক খামারিদেরকে উৎসাহ যুগিয়েছেন। তাকে দেখে অনেকেই গরু পালনে উদ্বুদ্ধ হবে। ফলে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে পরিবার ও রাষ্ট্র। 

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পবিত্র কুমার বলেন, যুবরাজ উপজেলার সবচেয়ে বড় গরু। আমরা সবসময় প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে ওই খামারিকে সহযোগিতা করছি। আমরা খামারিদেরকে পরামর্শ দিয়ে আসছি। গরুটিকে অনেক যত্ন করে লালন-পালন করেছেন খামারি। তিনি গরুটির প্রাপ্য দাম পাবেন বলে বিশ্বাস করি।

আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে উপজেলায় ৭ হাজার গরুসহ মোট ৫৩ হাজার ১৮৪টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

গোলাম রাব্বানী/আরএআর