মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার নয়ানগর গ্রামের মেঘনার তীরের থ্রি-অ্যাঙ্গেল শিপইয়ার্ড থেকে ৭ কোটি টাকা মূল্যের একটি জাহাজ গায়েব হয়ে গেছে। জাহাজটি ওই শিপইয়ার্ডে মেরামত করতে দেওয়া হয়েছিল। এতে ওই শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জাহাজটি সরিয়ে ফেলার অভিযোগ করেছে জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষ। জাহাজটি বেঙ্গল ইলেকট্রিক লিমিটেডের।  

এ ঘটনায় গত ৩০ মে গজারিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বেঙ্গল ইলেকট্রিক লিমিটেডের কর্মকর্তা মহিউদ্দিন। তবে এ বিষয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে দুই পক্ষই। মহিউদ্দিনের লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, তিনি ঢাকার বনানীস্থ বেঙ্গল ইলেকট্রিক লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোত্তাকিন সালামের ব্যক্তিগত সহকারী। ২০২৩ সালের ২৩ মে বেঙ্গল ইলেকট্রিক লিমিটেডের মালিকানাধীন টেকনাফ নামের অয়েল ট্যাংকার জাহাজটি মেরামতের জন্য থ্রি অ্যাঙ্গেল শিপইয়ার্ডে নিয়ে যান প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. আবুল রশিদ ও মো. থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. আমিনুল ইসলাম, পরিচালক এমএ রহমান আনসার, পরিচালক শেখ মাহমুদ হাসান, জিএম অপারেশন  মোজাম্মেল হক, ব্যবস্থাপক বেলাল হোসেন, হিসাবরক্ষক হুমায়ন কবির ও ফোরম্যান আলামিন। 

পরে শিপইয়ার্ডের ফোরম্যান ২০২৩ সালের ১৯ অক্টোবর ও ২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারি তাদের প্রতিষ্ঠানের স্টাফ রবিউল হক ওরফে রফিকের মাধ্যমে মেরামতের বিল পাঠান। পরে তারা মেরামতের বিল পেয়ে বিল পরিশোধ করে জাহাজটি নিয়ে আসার জন্য তাদের প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক সঞ্জয় কুমার সাহা এবং ব্যবস্থাপক প্রশাসন খালেকুজ্জামান রায়হানকে গত ২৯ মে থ্রি অ্যাঙ্গেল শিপইয়ার্ডে পাঠান। তারা শিপইয়ার্ডে গিয়ে জাহাজ দেখতে না পেয়ে শিপইয়ার্ড শ্রমিকদের জাহাজের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন জাহাজটি কয়েকদিন আগে শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছে। এই কথা শুনে তাদের কর্মকর্তাগণ শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষের কাছে জাহাজটির বিষয়ে জানতে চান।

এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮ সালের নভেম্বরে স্ক্রাব হিসেবে সাতটি জাহাজ মেসার্স মাল্টিপল ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডকে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। সেখান থেকে টি. টেকনাফ নামে পুরোনো একটি অয়েল ট্যাংকার মেরামতের উদ্দেশে প্রায় এক বছর আগে গজারিয়া উপজেলার নয়ানগর এলাকার থ্রি-অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের শিপইয়ার্ডে নিয়ে আসেন মিলন হাজি, আলাউদ্দিন ও রফিক নামে তিন প্রতিষ্ঠান কর্মচারী। জাহাজটির মেরামত এবং দীর্ঘ প্রায় এক বছরের বার্থিং চার্জ বাবদ মোট ৩০ লাখ টাকা বিল আসে। পাওনা টাকা দিতে বারবার তাগাদা দিলেও তারা তা দিতে তালবাহানা শুরু করেন। এর মধ্যে গত ১৯ মে সকাল থেকে জাহাজটি শিপইয়ার্ড এলাকায় দেখতে না পেয়ে বিষয়টি জাহাজটির মালিক পক্ষকে জানায় শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ।

বিষয়টি সম্পর্কে থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) মোজাম্মেল হক বলেন, জাহাজটি মেরামত করার পর আমাদের শিপইয়ার্ডের এক পাশে মেঘনা নদীতে নোঙর করে রাখা হয়েছিল। মেরামত এবং বার্থিং চার্জ বাবদ ৩০ লাখ টাকা বিল আসে। আমরা বিল পরিশোধ করার জন্য একাধিক বার নোটিশ দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা তা পরিশোধ করেনি। এর মধ্যে গত ১৯ মে সকাল থেকে আমরা জাহাজটি শিপইয়ার্ড এলাকায় না দেখতে পেয়ে জাহাজটির মালিকপক্ষকে জানাই। আমাদের ধারণা পাওনা টাকা পরিশোধ না করার জন্য পরিকল্পিতভাবে তারাই জাহাজটি সরিয়ে ফেলেছে। দীর্ঘ আট-নয় দিন চারদিকে খোঁজাখুঁজি করে আমরা জাহাজটির হদিস না পেয়ে ২৯ মে থানায় একটা লিখিত অভিযোগ করি।

এ ব্যাপারে গজারিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজীব খান মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ঘটনায় দুই পক্ষই থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল  পরিদর্শন করে তদন্ত চলছে। এখনো নিখোঁজ জাহাজটির সন্ধান পাওয়া যায়নি।  তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ব.ম শামীম/আরএআর