গরু দুটির নাম শনি-রবি। দানব আকৃতির গরু দুটি লালন-পালন করা হচ্ছে কোরবানিতে বিক্রির জন্য। এমন গরু দেখতে আশপাশের গ্রামের লোকজন আসছেন প্রতিনিয়ত। গরু দুটির মালিক রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামের কৃষক ইন্তাজ আলী। গরু দুটি কিনলে দুটি ছাগল ফ্রি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ইন্তাজ আলী জানান, তাদের চারজনের পরিবার হলেও কাজের সুবাদে দুই ছেলে থাকে বিদেশে। বাড়িতে শুধু ইন্তাজ আলী ও তার স্ত্রী থাকেন। তাই তারা চার বছর আগে ফিজিয়ান জাতের দুটি গাভী কিনে বাড়িতে লালন-পালন শুরু করেন। দুইটি গাভী ১৫ দিনের ব্যবধানে শনি ও রোববার দুইটি ষাড় গরুর বাচ্চা দেয়। তাই তাদের নাম রাখা হয় শনি-রবি। একেকটির ওজন ২০ মণ করে। গরু দুটির দাম চাওয়া হচ্ছে ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে গরু দুটি কিনলে দুটি ছাগল ফ্রি দেওয়ার হবে। 

ইন্তাজ আলীর গরু দুটির রঙ কালো ও মাথার ওপর ছোপ ছোপ সাদা। একেকটি গরু উচ্চতা পাঁচ ফুটের বেশি। সংসারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় শনি-রবির মা গাভীদের বিক্রি করতে হয় ইন্তাজ আলীর। এরপর থেকে শনি ও রবিকে পরিবারের সদস্যের মত যত্ন করে লালন-পালন করে আসছেন তিনি ও তার স্ত্রী। 

গরু দুটি সম্পূর্ণ দেশি পদ্ধতি ব্যবহার করে বড় করা হয়েছে। অনেক বড় হওয়ায় প্রতিদিন অনেকেই গরু দেখতে আসেন। রবি শান্ত প্রকৃতির হলেও শনি বেশ রাগী। তাই গরু দুটি এক সঙ্গে গোয়ালের বাইরে বের করা কষ্টকর। তবে গরুর মালিক বলেন, রাগী শনিকে গোয়ালের দরজার দিকে রাখা হয়েছে। যাতে করে চোর এসে গরু নিতে না পরে। এছাড়া গরু দুটি অপরিচিত কাউকে দেখলে ছটফট করে মালিককে জানান দেন কারও উপস্থিতি।

গরু দুটির মালিক ইন্তাজ আলী আরও জানান, তাদের জমিতে লাগানো ঘাস, খড়, খৈল, কালাইসহ বিভিন্ন ভুষি খাওয়ানো হয়। দুটি গরুর জন্য একটি গোয়াল হলেও ফ্যান চলে দুইটি। দিনে গরু দুটিকে দুই থেকে তিনবার গোসল করানো হয়। এছাড়া আবহাওয়া গরম হলেও পাঁচ থেকে ছয়বারের বেশি গোসল করানো হয়। গরু দুটিকে বিভিন্ন খাবার খাওয়ানো বাবদ প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হয় তার।

ইন্তাজ আলীর স্ত্রী ফজিলা বেগম বলেন, সবার ইচ্ছে ছিল বড় গরু লালনপালন করার। ছেলেরাও চায় গরু আরও বড় হোক। তাই কখনও বিক্রির চিন্তাভাবনা করিনি। আমাদের আশা ছিল কোরবানির আগে বিক্রি করব। তাই চার বছর থেকে লালন-পালন করে আসছি। ভাবতাম বড় গরু হবে এলাকার মানুষ দেখতে আসবে বাড়িতে। তাই হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসে আমাদের গরু দেখতে। নিজের ঘর নেই, অভাবের মধ্যে খেয়ে না খেয়ে গরুর গোয়াল তৈরি করেছি। নাহলে কোথায় থাকবে ঝড়, বৃষ্টি খরায়। বেশিরভাগ সময় আমিই লালন-পালন করে থাকি।

গরুগুলো বড় হওয়ায় দেখতে এসেছেন পাশের গ্রামে মো. ভুট্টু। তিনি বলেন, আশপাশের ১০ গ্রামে এতো বড় গরু নেই। প্রতিদিন অনেকই আসে গরুগুলো দেখতে। গরু দুইটিই দর্শনধারী। তাই আশপাশের এলাকার সবার মুখে মুখে ইন্তাজ আলীর গরুর গল্প। তারা দীর্ঘদিন থেকে অনেক যত্ন করে গরু দুটি লালন-পালন করে আসছেন।  

গরুর মালিক ইন্তাজ আলী আরও বলেন, দীর্ঘ চার বছর ধরে এদেরকে লালনপালন করছি। এবারের ঈদুর আযহায় গরু দুটি বিক্রি করতে চাচ্ছি। অনেক বড় গরু হওয়ায় সেভাবে কোনো ক্রেতা আসছে না। বাড়ি থেকে বিক্রির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। যদি বিক্রি না হয় সেই ক্ষেত্রে ঢাকায় নেওয়ার ইচ্ছে আছে। গরু দুটির দাম ২০ লাখ টাকা চাইলেও দামাদামির সুযোগ রয়েছে।

বাগমারা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, গরু দুটি আমি দেখেছি। অনেক বড় আকৃতির। ইন্তাজ আলী দীর্ঘ দিন থেকে লালন-পালন করছেন। আমাদের প্রত্যাশা তিনি যেন ভালো দাম পান।

প্রসঙ্গত, রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে এ বছর কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত রয়েছে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ১৯৬টি। এর মধ্যে গরু রয়েছে ৮৩ হাজার ৩৬৫টি, মহিষ রয়েছে ৩ হাজার ৭৬৯টি ও ছাগল রয়েছে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৭৫৩টি। তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও স্থানীয় চাহিদার তুলনায় পশু বেশি রয়েছে।

শাহিনুল আশিক/আরকে