‘নিক্সন চৌধুরীর লাগামটা টাইনা ধরেন’
ফরিদপুরে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ-৭১ এক প্রতিবাদ সমাবেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেছে ‘নিক্সন চৌধুরীর লাগামটা টাইনা ধরেন’। পাশাপাশি নিক্সন চৌধুরীকে ‘কাউন্সিলিং’ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ওই সভা থেকে।
শনিবার (১ জুন) বিকেল ৫টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ-৭১ ফরিদপুরের উদ্যোগে।
বিজ্ঞাপন
নিক্সন চৌধুরী ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) আসনের সংসদ সদস্য। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীর ছেলে। বর্তমান সংসদের চিফ হুইপ ও মাদারীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নূর-ই-আলম চৌধুরীর ছোট ভাই নিক্সন। সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জামাতাও তিনি।
জানা যায়, ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রয়াত জননেতা বৃহত্তর ফরিদপুরের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এসএম নুরুন্নবী এবং তার পুত্র জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াককে জড়িয়ে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, অশ্লীল এবং কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে এ সভার আয়োজন করে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ-৭১ ফরিদপুর জেলা শাখা।
এ সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম বলেন, নিক্সন চৌধুরী নিজেকে লর্ড মনে করেন। অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করেন। এবারের উপজেলা নির্বাচনে সদরপুরের জনগণ নিক্সনের এইসব ফাজলামি মেনে নেয়নি।
তিনি বলেন, আর এসব ভাষা আমরা সহ্য করব না। আগামীতে আর আপনাকে কন্সিডার করা হবে না। হুশিয়ার হয়ে যান। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের অশ্লীল কথা বলার আগে এসএ, আরএস দেইখা কথা কবেন।
সাইফুল ইসলাম প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনি যে পরিবারের সন্তান আপনার তো এরকম গালাগালি করার কথা না। আপনার বাবা এ ভাষায় কথা বলেননি। আপনার ভাই এ ভাষায় কথা বলেন না। আপনি এ ভাষা কোথায় পেলেন।
নিক্সন চৌধুরীর বক্তব্যে তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে সাইফুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘পিতা নাই, আপনি আছেন। নিক্সন চৌধুরী একজন সংসদ সদস্য হয়ে তিনি যেভাবে, যে ভাষায় আপনার মনোনীত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকে উদ্দেশ্য করে কথা বলেন, এ বিচারের ভার আপনারে কাছে দিয়ে গেলাম। নিক্সন চৌধুরীর লাগামটা টাইনা ধরেন।’
বক্তব্য রাখতে গিয়ে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ-৭১ ফরিদপুরের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ গাঙ্গুলী বলেন, নিক্সন চৌধুরী নৌকা নিয়া নির্বাচন করেন না। উনি সব সময় আওয়ামী লীগের কর্মী নেতাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন। অথচ উনি রাজাকারদের বিরুদ্ধে কথা বলেন না।
তিনি বলেন, আপনি এই ভাষা কোথা থেকে রপ্ত করেছেন জানিনা। সংসদে আপনার কথা আমরা শুনি না। গালাগালি ছাড়া যদি কথা বলতে না পারেন মুখ বন্ধ করে রাখেন।
‘আপনার এসব ভাষা দেশের লোক আর শুনতে চায় না’-মন্তব্য করে বিশ্বজিৎ গাঙ্গুলী বলেন, আমরা মনে করি আপনার কাউন্সিলিং প্রয়োজন। এক ঘণ্টার কাউন্সিলিং করলে ঠিক হয়ে যাবেন।
তিনি আরও বলেন, আপনাকে ভদ্র ভাষায় বলি, আপনি আপনার ওইসব বক্তব্য প্রত্যাহার করেন। আপনি একজন মাননীয় সংসদ সদস্য। গণতন্ত্র মানুষকে সহিষ্ণু করে, কিন্তু আপনার মধ্যে সহিষ্ণুতার অভাব আছে। আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলা আপনি ছাড়েন। আপনি কিন্তু কোথাও দাঁড়াতে পারবেন না। আমরা আজ প্রতিবাদ করে গেলাম। ভবিষ্যতে করলে আপনাকে প্রতিরোধ করা হবে। আপনার কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের কারণে আপনার প্রতি মানুষের ঘৃণা দিনে দিনে বাড়ছে। এইগুলা ছাড়েন। আপনার ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করেন এবং ফরিদপুরবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান।
ওই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ-৭১ ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নাছিরউদ্দিন আহমেদ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সহসভাপতি শরিফ কাওসার।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে নিক্সনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। নিক্সন চৌধুরীর এপিএস এসএম খায়রুল বাশার জানান, নিক্সন চৌধুরী চিকিৎসার জন্য বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মে গণমাধ্যমে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আরিফকে নেশাগ্রস্ত লোক হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, ‘আমার আসলে ওনাকে নিয়ে কথা বলতে ঘৃণা হয়। উনি একজন নেশাগ্রস্ত লোক। আরিফ আজকে আমাকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ বলে যে মন্তব্য করেছেন জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে এরকম মন্তব্য করা কোন সুস্থ লোকের কাজ না। এই আরিফ সাহেবের বাবা (বৃহত্তর ফরিদপুর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম নুরুন্নবী) এক সময় নির্বাচন করেছেন ভাঙ্গায়। তখন ওই ১৯০০ ভোট পেয়ে ওনার জামানত চলে গেছে।’
জহির হোসেন/আরকে