সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কবলে পড়ে মাছ ধরার নৌকাসহ তিন জেলে নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার (৩১ মে) নিখোঁজ জেলেদের পরিবারের সদস্যরা এবং বন বিভাগের কর্মকর্তারা বিষয়টি জানিয়েছেন।

নিখোঁজ জেলেরা হলেন, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর এলাকার বাবুর আলীর ছেলে মো. সাইদুর রহমান (৪২), মো. হযরত আলীর ছেলে মো. হায়দার আলী (৩০) ও গোলাম রব্বানীর ছেলে লিফন (৩০)।

নিখোঁজ জেলেদের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ২৫ মে পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের কোবাদক ফরেস্ট স্টেশন থেকে পাস (অনুমতি পত্র) নিয়ে সুন্দরবনে মাছ ধরতে যান তারা। তাদের সঙ্গে আরও একটি নৌকাসহ মোট দুইটি নৌকায় ৬ জন জেলে ছিল। বনে যাওয়ার দিন শনিবার (২৫ মে) মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে সর্বশেষ যোগাযোগ হয় পরিবারের সদস্যদের। ঘূর্ণিঝড় রেমালের পর থেকে গত এক সপ্তাহ তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা করতে পারেনি পরিবারের সদস্যরা। 

নিখোঁজ স্বজনরা কোথায় আছে, কি অবস্থায় আছে? এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তারা। তবে তাদের সঙ্গে যাওয়া অন্য নৌকার জেলেদের যোগাযোগ হয়েছে নিখোঁজ জেলেদের পরিবারের সদস্যদের। তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে নিখোঁজ জেলেদের পরিবারের সদস্যরা জানান, ওই তিন জেলেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তারাও তাদের খোঁজ করছেন।

নিখোঁজ জেলে মো. হায়দার আলীর ভাই আলী আজগর ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ভাই হায়দার এবং তার সঙ্গে সাইদুর ও লিফন একটি নৌকা নিয়ে সুন্দরবনে যায়। ঝড়ের পর থেকে তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। এজন্য সন্দেহ হয়। অন্য আরেকটি নৌকায় আরও তিনজন ছিল। তবে তারা ঠিক আছে। তারা জানিয়েছেন, একটি খালে তারা তিনজন ছিল। অন্য খালে বাকি তিনজন। ঝড়ের পরে আমার ভাইসহ তিনজনকে পাওয়া যাচ্ছে না। বন বিভাগের লোকজনের সঙ্গে আমাদের পরিবারের সদস্যরাও সন্ধানে গিয়েছে। তবে এখনও সন্ধান মেলেনি।

নিখোঁজ সাইদুর রহমানের ভাই আবু সালেহ জানান, শনিবার (২৫ মে) কোবাদক ফরেস্ট স্টেশন থেকে পাস (অনুমতি পত্র) নিয়ে দুইটা নৌকায় ছয়জন ওই দিনই সুন্দরবনের মিশিনখালি এলাকায় পৌঁছায়। সেখান থেকে তারা দুইটি নৌকা দুই দিকে ভাগ হয়ে মাছ ধরতে থাকে। এরপর রোববার থেকে ওই তিন জেলেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা ঘূর্ণিঝড় রেমালের কবলে পড়েছে বলে জানান তিনি।

আবু সালেহ আরও জানান, তাদের নিখোঁজের খবর সুন্দরবনের কোবাদক স্টেশনে জানানো হয়েছে।

নিখোঁজ সাইদুর রহমানের ভাইয়ের ছেলে এনামুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাসহ ৩ জন নিখোঁজ হয়েছে। আরেকটি নৌকায় আরও তিনজন ছিল। তারা আজ চারদিন তাদের খুঁজছে, তবে কোন খোঁজ পায়নি। আমাদের আত্মীয়-স্বজন তাদের খোঁজে বন অফিসে গিয়েছে।

এদিকে, কোবাদক স্টেশনের স্টেশন অফিসার মোবারক হোসেন বলেন, এখনও পর্যন্ত আমরা এমন কোনো খবর পাইনি। তবে আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ জেড এম হাছানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, সুন্দরবনের মাছ ধরতে যাওয়া তিন জেলে নিখোঁজের খবর পেয়েছি। আমরা যাচাই-বাছাই করছি কতজন গিয়েছিল এবং কতজন ফিরেছে।

সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন-সংরক্ষক একেএম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনা জানার পর থেকে আমরা খোঁজ নিয়েছি। কোবাদক স্টেশন থেকে পাস নিলেও তারা খুলনা রেঞ্জের মধ্যে চলে যায়। নিখোঁজ তিন জনের পরিবারের সদস্যরা বন বিভাগের সঙ্গে তাদের সন্ধানে রয়েছে। 

মিলন/এমএএস