স্বামী মানসিকভাবে অসুস্থ। এক বাড়িতে থাকলে তিন দিন থাকেন নিরুদ্দেশ। বাড়িতে ৪ মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে ঝুপড়ি ঘরে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে স্ত্রীর। ঠিকমতো তিন বেলা খাবারও জোটে না। অর্থের অভাবে বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না সন্তানরা। বলছিলাম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার ছয়ানী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের কামার বাড়ির আব্দুল গোফরানের স্ত্রী পান্না বেগমের কথা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙা বেড়া, পলিথিন ও পুরাতন কাপড় দিয়ে তৈরি করা ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করেন পান্না বেগম। অভাবের পাশাপাশি ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে যুদ্ধ করে চলছে তাদের জীবন। ছেলে মেয়েরা বড় হলেও অর্থাভাবে যেতে পারছে না বিদ্যালয়ে। কিন্তু তাদের থাকার মতো ছোট ওই ঘরে নেই পর্যাপ্ত জায়গা।

স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, চার মেয়ে আর একটা ছেলে নিয়ে নিদারুণ কষ্টে আছে পান্না বেগম। এই ঘরে থাকার মতো অবস্থা নাই। তার স্বামীর মাথায় সমস্যা। বাচ্চারা বাড়িতে না খেয়ে থাকলেও খবর নেওয়ার কেউ নেই। যদি সরকার বা কোনো বিত্তবান লোক এগিয়ে আসতো তাহলে পান্না বেগম ভালোভাবে থাকতে পারতেন। 

প্রতিবেশী ইব্রাহিম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পান্না বেগম সন্তানদের নিয়ে এখন খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। একটি মাত্র ঘর, তাও আবার ভাঙাচোরা। একদম বসবাস অনুপযোগী। এমন ঘর আমাদের এলাকায় নেই। সরকারি কিংবা কোনো ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান তাকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হতো। ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার নিশ্চয়তা পেত।

পান্না বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বামী সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে আছি। কী খাই, কিভাবে দিন যায় বলতে পারি না। এক আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না আমাদের কষ্ট। আর কাউকে বোঝাতেও পারি না। কোনোদিন একবেলা খাই, বাকি দুইবেলা না খেয়ে থাকি। বর্ষাকাল আসছে এখন না ঘুমিয়ে রাত পার করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের পাশে দাঁড়ায় তাহলে আমাদের রক্ষা হবে।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শিখা সংসদের মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘরটা দেখে আমরা অবাক হয়েছি। ঘরটি খুবই জরাজীর্ণ। পান্না বেগম খুব কষ্টে বসবাস করছিলেন। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আমরা পান্না বেগম পাশে দাঁড়াতে চাই। আমাদের প্রবাসী বিত্তবানরা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। আমরা সে টাকায় নতুন ঘর নির্মাণ করে দিতে চাই। বিত্তবানরা এগিয়ে এলে সমাজে আর অসহায় মানুষ থাকবে না। আমাদের সমাজ পরিবর্তন হলে, আমাদের দেশ পরিবর্তন হবে। 

ছয়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি পান্না বেগম ও আব্দুল গোফরান দম্পতির খবর জানি। আব্দুল গোফরান ছয়ানী বাজারে মাঝেমধ্যে দেখা যায়। কেউ কিছু দিলে সে বাড়ি বাজার করে নিয়ে যায়। তাদের ঝুপড়ি ঘরের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করব। এ ছাড়া সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনব। 

হাসিব আল আমিন/এএএ