ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবের পর যশোরের পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে মৌসুমি ফল লিচুর। ঘূর্ণিঝড়ের পর প্রতি ১০০ পিস লিচু বিক্রি হচ্ছে পূর্বের দামের থেকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে। ফলে মৌসুমি এ সুস্বাদু ফলের স্বাদ নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের।

যশোরের বাজারে যেসকল লিচু পাওয়া যায় তার একটি বড় অংশ আসে বাঘারপাড়া উপজেলার লিচু বাগান থেকে। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গের কিছু জেলা থেকেও লিচু আসে। এসব লিচু শহরের মনিহার ফলপট্টি থেকে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন পাইকার ও ব্যাপারীরা।

শহরের মনিহার ফলপট্টি ঘুরে দেখা গেছে, এ ফলের আড়তের পাইকারি ব্যবসায়ীরা লিচু সাধারণত ডাকে (নিলামে বিক্রি) তোলেন। সেখানে সর্বোচ্চ দরদাতা লিচু ক্রয় করেন।

বিভিন্ন এলাকা থেকে লিচু বিক্রি করতে আসা বাগান মালিকরা জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে বেশির ভাগ লিচুর বাগান নষ্ট হয়ে গেছে। ঝড়ে ডাল ভেঙে পড়েছে, আবার কোথাও কোথাও অপরিপক্ব লিচু গাছ থেকে ঝরে পড়েছে। ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বাগান মালিক ও মৌসুমি ফল চাষিরা। সংকট এবং ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়ায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে লিচুর।

বাঘারপাড়ার ছাতিয়ানতলা এলাকার লিচু চাষি আলতাফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার দুই বিঘা জমিতে লিচুর বাগান আছে। ঝড়ের আগে তিন চালান লিচু বিক্রি করেছি। তখন দাম মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। তবে ঝড়ে লিচু ঝরে গেছে, ডাল-পালাও ভেঙেছে। ফলে আমার মতো অনেক চাষি ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় ঝড়ের পর বেশি দামে আড়তে লিচু বিক্রি করতে হচ্ছে।

বসুন্দিয়ার একটি লিচুর বাগান মালিক ইমতিয়াজ শেখ বলেন, এই হাটে দুই ভ্যান লিচু নিয়ে এসেছি।  গত হাটে চার ভ্যান নিয়ে এসেছিলাম। ঝড়ের পর বেশি দামে লিচু বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। কিছু করার নেই। যতই দাম বৃদ্ধি পাক চাষিদের ক্ষতি অপূরণীয়ই থাকে।

তারিফ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, যশোরে অন্যান্য বছর যে পরিমাণ লিচুর চাষ হয় তাতে যশোরের চাহিদা মিটিয়েও বাইরের জেলায় সরবরাহ করা যায়। কিন্তু চলতি বছর ঝড়ে সব লন্ডভন্ড করে দেওয়ায় লিচুর সংকট হয়েছে, ফলে দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।'

মেসার্স নূর আলম ফল ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী নূর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা লিচু সাধারণত নিলামে বিক্রি করি। সর্বোচ্চ দরদাতা লিচু নিয়ে যান। রেমাল ঝড়ের পর লিচুর দাম পাইকারি পর্যায়ে হাজারে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাইকারদের কাছ থেকে খুচরা বিক্রেতারা লিচু কিনে প্রতি হাজারে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করছেন।

যশোর চৌরাস্তা এলাকার খুচরা বিক্রেতা গোলাম রসুল বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর আমরা লিচু বেশি দামে কিনছি তাই বেশি দামে বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

আর এন রোডের খুচরা ফল বিক্রেতা মনি আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা লিচু নিলামে কিনে থাকি। রেমালের আঘাতের পর লিচুর দাম প্রতি হাজারে দুই থেকে তিনশ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আমরা একটু বেশি দামে বিক্রি করছি। আমাদেরও তো পেট চালাতে হবে।

বেজপাড়া গুলশানের মোড়ের বাসিন্দা খালেক হোসেন বলেন, মৌসুমি ফল লিচু কিনতে চেয়েছিলাম বাচ্চাদের জন্য, কিন্তু  দাম বেশি হওয়ার কারণে অল্প নিতে হচ্ছে।

দড়াটানা মোড়ে লিচু কিনছিলেন ইউসুফ আলী নামের এক ক্রেতা। কথা প্রসঙ্গে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালে রোগী দেখতে আসছিলাম। তার জন্য লিচু কেনার চেষ্টা করছি। কিন্তু দাম বেশি হওয়ার কারণে ১০০ টাকার জায়গায় ৫০শ টাকার লিচু কিনতে হচ্ছে।

কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুশান্ত বিশ্বাস বলেন, কয়দিন আগে লিচু কিনেছি প্রতি শ ২০০ টাকা। সেই লিচু আজ কিনলাম ৩৫০ টাকা করে। কেনার সময় দাম বাড়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে বিক্রেতারা বলছেন ঝড়ের কারণে লিচুর বাগান নষ্ট হয়েছে, এজন্য দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

খরকি এলাকার বাসিন্দা বুলবুল খান বলেন, ঝড় হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে। এ অঞ্চলের লিচুর দাম বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক তবে উত্তরাঞ্চলের লিচুরও দাম বৃদ্ধি পাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। এর মধ্যে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদেরও কারসাজি আছে।

এ্যান্টনি দাস অপু/এমজেইউ