১৩ বছরের দাম্পত্য জীবন সাজিয়া আফরিন লিজা ও রায়পুরা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সুমন মিয়ার। দীর্ঘদিন ধরে এই দম্পতির কোনো সন্তান হয়নি। বিদেশে গিয়ে নানা চিকিৎসা ও দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে স্ত্রী লিজার কোলজুড়ে এলো ফুটফুটে যমজ মেয়ে। তবে দুই মেয়ের মুখ দেখে যেতে পারলেন না নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত সুমন মিয়া।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটালে সিজারের মাধ্যমে নিহত সুমনের স্ত্রী লিজা যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। সুমন মিয়া গত ২২ মে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পাড়াতলীতে নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন।

নিহত সুমন মিয়ার বাবা চরসুবুদ্ধি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি হাজী নাসির উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি বলেন, দুই নাতনি ও পুত্রবধূ সুস্থ আছেন। আমার নাতনি দুইটা দেখতে খুব সুন্দর হয়েছে। তারা সুস্থ আছে। তবে দুঃখ হলো, আমার ছেলে নিজ সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারল না। সন্ত্রাসীরা আমার ছেলে সুমনকে হত্যা করেছে। ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর সুমনের বিয়ে হয়।  

এর আগে গত ২২ মে উপজেলার চরাঞ্চলে পাড়াতলীতে প্রচারণায় যান তালা প্রতীকের ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সুমন মিয়া। একই দিন ওই ইউনিয়নে যান তার প্রতিপক্ষ চশমা প্রতীকের ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আবিদ হাসান রুবেল। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পাড়াতলীর মামদিরকান্দি গ্রামের ছলিমবাড়ির সামনের রাস্তায় দুই ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সমর্থকরা মুখোমুখি হন। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হলে একপর্যায়ে রুবেল সমর্থকদের সরাতে সুমনের গাড়ি থেকে ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়।

এতে উত্তেজিত হয়ে প্রার্থী রুবেলের সমর্থকরা তার গাড়ি ভাঙচুর ও ঘেরাও করেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে চলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। একপর্যায়ে সুমন গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে পালানোর সময় মারধরের শিকার হন। আহত সুমনকে তার কর্মীরা উদ্ধার করে দুপুরের দিকে পাড়াতলী থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাঁশগাড়ি পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পুলিশের সহযোগিতায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। সেখানে চিকিৎসক সুমনকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে গত ২৩ মে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুমন নিহত হওয়ার ঘটনায় রায়পুরা উপজেলা পরিষদের সব পদে নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন (সিইসি)। ঘটনার তিন দিন পর ২৬ জনকে আসামি করে নিহতের বাবার দায়ের করা হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত চারজন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। 

এ ব্যাপারে রায়পুরা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হালিম বলেন, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুমন মিয়া হত্যার ঘটনায় দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় এজাহারভুক্ত একজন আসামিসহ মোট ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।

তন্ময় সাহা/আরকে