রেমালের তাণ্ডবে বরিশাল উপকূলে ৭২৫ কোটি টাকার কৃষি ও ফসলের ক্ষতি
ঘূর্ণিঝড় রেমালে দক্ষিণাঞ্চলে প্রাণহানি ছাড়াও মৎস্য ও কৃষিখাতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাজার হাজার ঘরবাড়ি ঝড়ে ভেঙে গেছে। সরকারি দপ্তরের তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড়ে বরিশাল বিভাগে ৭২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারি প্রণোদনা, ঋণ প্রকল্প গ্রহণসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ে।
মৎস্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় সহকারী পরিচালক নাসির উদ্দিন জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালে বরিশাল বিভাগে ৮৬ হাজার ৯৭৬টি মাছ চাষের পুকুর ও ৬ হাজার ৯০৬টি ঘের, ১২০টি কাঁকড়ার খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছয় জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বরগুনায় ৪৬ হাজার ৯১২টি। আর সবচেয়ে বেশি ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পিরোজপুরে ১ হাজার ৮৯৫টি। ৭ হাজার ৯২ টন মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার বাজারমূল্য ১৫০ কোটি টাকারও বেশি। এরমধ্যে পোনা মাছ ৬৯৬ টন, ১৫৯ টন চিংড়ি, কুচিয়া/কাঁকড়া ৬৯ টন নষ্ট হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বিভাগে মোট ৩১ জেলে আহত হলেও কারও প্রাণহানি হয়নি। তবে ১ হাজার ১৯টি নৌযান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার অর্থমূল্যে সাড়ে তিন কোটি টাকারও বেশি। মাছ শিকারের জাল নষ্ট হয়েছে ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকার। সব মিলিয়ে ২১৭ কোটি ২৯ লাখ টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে মৎস্য খাতে।
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ বলেন, মাছচাষি ও মৎস্যজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে দীর্ঘক্ষণ ঝড়ের স্থায়িত্ব, জলোচ্ছাস, বাতাসের প্রবল গতি। যারা ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের তালিকা করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রান্তিক জেলে ও মৎস্যচাষিদের প্রত্যাশা আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছি।
ঘূর্ণিঝড় রেমালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষিখাত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশালের তথ্য মতে, কৃষিখাতে প্রায় ৫০৯ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শাকসবজিতে ২৫৭ কোটি টাকা। পান বরজ নষ্ট হয়েছে ১১৭ কোটি ২১ লাখ টাকার মতো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শওকত ওসমান বলেন, বিভাগে ১৮ লাখ ৪৮১ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ১৮ হাজার ২০৯ হেক্টর ফসলি জমির উৎপাদিত ২৫ শতাংশ ফসল নষ্ট হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আউশের বীজতলা, আউশ ক্ষেত, চীনা বাদাম, মরিচ, মুগ ডাল, তিল, শাকসবজি, পাট, পান, কলা, পেঁপে ও ফল ফসলের ১ লাখ ৬৯ হাজার ৭৬৭ টন নষ্ট হয়ে ৫০৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, ক্ষতির ধকল পুষিয়ে উঠতে চাষিদের সময় লাগবে। ঘূর্ণিঝড়ে সরাসরি ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী বীজতলা বা ফসলের ক্ষেত চাষ উপযোগী হতেও কয়েকদিন সময় লাগবে। বিলম্বে চাষ উপযোগী হলে সেটিও কৃষকের জন্য ক্ষতির কারণ। যে কারণে প্রান্তিক চাষিদের চাহিদার ওপর নির্ভর করে বেশ কিছু প্রস্তাবনা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২৬ মে রাতে বরিশাল উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। এরপর টানা ১৭ ঘণ্টার বেশি সময় উপকূল ও বরিশাল বিভাগের স্থলভাগে তাণ্ডব চালায়। এতে ১৯ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। ঘরবাড়ি ভেঙেছে প্রায় ৮০ হাজারেরও বেশি। ক্ষতি হয়েছে বিপুল সম্পদের।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এএএ