দুই ভাইকে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন
পাবনার ঈশ্বরদীতে ভেজাল মধু বিক্রির অভিযোগে দুই ভাইকে অমানবিকভাবে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধর করে মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের আওতাপাড়া নুরজাহান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ভিলেজ ফ্রেশ ফুড অ্যান্ড এগ্রো কোম্পানিতে এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার দুই মধু বিক্রেতা হলেন দাশুড়িয়া ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের আলম সরদারের দুই ছেলে আল-আমিন (২৪) ও আলাল সরদার (১৮)।
বিজ্ঞাপন
এ ঘটনায় শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগীদের বাবা। পরে রাতে ভিলেজ ফ্রেশ ফুড অ্যান্ড এগ্রো কোম্পানির মালিক অভিযুক্ত জিসানকে (৩৫) আটক করেছে পুলিশ।
আটক জিসান উপজেলার দিঘা পাড়ার মো. রজব আলীর ছেলে। বর্তমান তিনি মশুরিয়া পাড়ায় থাকেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভিলেজ ফুড অ্যান্ড এগ্রো নামক প্রতিষ্ঠানটি তেল, ডাল, মধুসহ বিভিন্ন পণ্য প্যাকেটজাত করে পাইকারিভাবে বিক্রি করে থাকে। আল-আমিন ও আলাল পেশায় মধু সংগ্রহকারী। তারা প্রায় এক বছর যাবত উক্ত প্রতিষ্ঠানে মধু বিক্রি করে আসছিলেন।
প্রতিষ্ঠানের মালিকের অভিযোগ- প্রথমদিকে তারা দুই ভাই খাঁটি মধু সংগ্রহ করলেও পরবর্তীতে তারা প্রতিষ্ঠানে ভেজাল মধু বিক্রি করে। বিষয়টি দুই ভাইকে অবগত করলে তারা এর ক্ষতিপূরণ বাবদ বৃহস্পতিবার ১০ কেজি মধু প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়ে আসে। প্রতিষ্ঠানের মালিক জিসান তাদের দুই ভাইকে একসঙ্গে পেয়ে আগের মধুর সব টাকা দাবি করেন এবং প্রতিষ্ঠানের সামনে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারপিট করেন। পরে মাথায় মধু ঢেলে দিয়ে চুল কেটে দেন।
ভুক্তভোগীদের বাবা আলম সরদার বলেন, আমার ছেলেরা ভেজাল মধু সরবরাহ করেনি। মধুর টাকা মেরে দিতেই প্রতিষ্ঠানটি ভেজাল মধুর ‘নাটক’ সাজিয়েছে। তারা শুধু নির্যাতনই করেনি দুই ছেলের মাথার চুলও কেটে দিয়েছে। আমার দুই ছেলের ওপর অমানবিক অত্যাচার করেছে। আমি এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই।
ঈশ্বরদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে ওই গ্রামে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। পুলিশ সুপারের নির্দেশে নির্যাতনকারী জিসানকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের বাবা থানায় মামলা করবেন।
পাবনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বলেন, তারা দুই ভাই অত্যন্ত গরিব ঘরের সন্তান। অন্যের জমিতে ঘর বানিয়ে বসবাস করেন। মা একজন ভিখারি। তাদের দুই ভাইকে এভাবে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে শারীরিক নির্যাতন এবং চুল কেটে দেওয়ার ঘটনাটি আমি জানতে পেরে ঈশ্বরদী থানার ওসিকে উক্ত বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেই। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় নির্যাতনকারী জিসানকে আটক করা হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও ধরতে পুলিশ কাজ করছে। অপরাধী যেই হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
রাকিব হাসনাত/আরএআর