ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় মেঘনা নদীর ৩টি তীর রক্ষা বাঁধে ধস নেমেছে। এরমধ্যে রামগতির বড়খেরী, আলেকজান্ডার ও কমলনগরের মাতাব্বর হাট বাঁধে ধস দেখা যায়। বাঁধগুলো এখনো ঝুঁকিপূর্ণ বলে দাবি স্থানীয়দের। এ বাঁধগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে আশপাশের এলাকাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ঝুঁকি এড়াতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধগুলো মেরামত করা হবে।
 
সোমবার (২৭ মে) সরেজমিনে কমলনগর উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের মাতাব্বরহাট এলাকায় গিয়ে নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ দেখা গেছে। একই সঙ্গে প্রচন্ড বাতাস ছিল নদী এলাকায়। তীর রক্ষা বাঁধের ওপর দাঁড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়ছিল। স্থানীয়দের দাবি নদীতে এমন ঢেউ আর কখনো তারা দেখেনি। এছাড়া বাতাসেও ১০০ কিলোমিটার গতিবেগ ছিল।

মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে কমলনগরের মাতাব্বর হাট এলাকার বাসিন্দা আবদুল আলী ও জয়নালসহ কয়েকজন জানায়, মাতাব্বরহাট লঞ্চঘাটের পাশেই ৪-৫টি টিনসেট দোকানঘর ছিল। সোমবার বিকেল পর্যন্ত দোকানগুলো অক্ষত ছিল। এরপরে প্রায় ৪-৫ ফুট জলোচ্ছ্বাস আর প্রচন্ড বাতাসে দোকানঘরগুলো ভেঙে গেছে। এখন দোকানগুলোর চিহ্নও নেই। এছাড়া লঞ্চঘাটের পল্টুন চলাচলের রাস্তায় উঠে গেছে। এজন্য বেড়িবাঁধের দিকে উঠা যাচ্ছে না। বেড়িবাঁধটির দক্ষিণাংশের ব্লক সরে গেছে। এতে ঝুঁকি বেড়ে গেছে। ঝুঁকি এড়াতে বাঁধটি দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজন। এছাড়া জোয়ারের পানিতে কয়েকটি স্থানে নির্মাণাধীন বাঁধ ভেঙে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রামগতির বড়খেরী এলাকায় নদী তীর রক্ষা বাঁধের ব্লকের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। ৯টি স্থানে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ। এ বাঁধটির বড় ধরনের ক্ষতি হলে রামগতি বাজার ঝুঁকিতে পড়বে।

রামগতির আলেকজান্ডার এলাকার বাসিন্দা মাসুদ ও আবদুর রশিদসহ কয়েকজন জানায়, আলেকজান্ডার বেড়িবাঁধটি এ জেলার মানুষের কাছে প্রধান বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে বাঁধটিতে ধস দেখা দিয়েছে। এ বাঁধটি রামগতির বাসিন্দাদের জন্য আশির্বাদ। বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো উপজেলায় মেঘনার পেটে বিলীন হয়ে যাবে। এতে যতদ্রুত সম্ভব বাঁধটির ক্ষতিগ্রস্ত অংশটুকু সংস্কার করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে আকুতি জানিয়েছেন তারা। 

প্রসঙ্গত, বাঁধের ১০০ গজের মধ্যেই রামগতি উপজেলা পরিষদ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে।

বড়খেরী নৌ-পুলিশের ইনচার্জ (পরিদর্শক) ফেরদৌস আহমেদ বলেন, সোমবার মেঘনা নদীতে প্রবল ঢেউ ছিল। এমন ঢেউ সচরাচর দেখা যায়নি। তীব্র জোয়ার ও স্রোতে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধের ৯টি অংশে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে সেসব স্থানে ব্লক ও জিওব্যাগ দিয়ে সংস্কারে অংশ নিয়ে পানি উন্নয়নবোর্ডকে সহযোগিতা করেছি।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান বলেন, নদীতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে তীব্র ঢেউ ছিল। এতে কমলনগরের মাতাব্বরহাট, রামগতির আলেকাজান্ডার ও বড়খেরী এলাকায় তীর রক্ষা বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। বড়খেরী এলাকায় সোমবার সংস্কার কাজ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেও আমাদের লোকজন কাজ করেছে। এছাড়া আলেকজান্ডার বেড়িবাঁধ দেখে এসেছি। বাঁধটিতে একটি স্থানে আগেই সমস্যা দেখা দেয়। এখন ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সমস্যাটি বেড়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তা সংস্কার করা হবে। মাতব্বরহাট বেড়িবাঁধটিও আমরা সংস্কার করবো।

প্রসঙ্গত, ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কমলনগরের মাতাব্বরহাট এলাকায় ১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ পায় ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। ২০১৬ সালের শুরুর দিকে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংকে দিয়ে তারা বাঁধের কাজ শুরু করে। নিম্নমানের বালু ও জিওব্যাগ ব্যবহার করায় স্থানীয়রা কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে একই বছরের ২৩ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাঁধ নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হয়। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময় বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এরপর ১ বছরের মধ্যে ১০ বার বাঁধটিতে ধস নামে। প্রত্যেকবারই বাঁধটি সংস্কার করা হয়।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এমএএস