প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল ইতোমধ্যে উপকূল অতিক্রম করেছে। এর প্রভাবে সুন্দরবনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। বনের অভ্যন্তরে বনবিভাগের বিভিন্ন ক্যাম্প, সুপেয় পানির পুকুর, বনবিভাগের জলযান ও ওয়ারলেস সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ নুরুল করিম।

মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে আমরা যতটুকু জেনেছি সুন্দরবনের বেশ কিছু জায়গা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে আপনারা জানেন বাগেরহাট শহর থেকে বনের অভ্যন্তরে ১০০ কিলোমিটার দূরে সাগরের কাছাকাছি আমাদের স্টেশন রয়েছে। সেগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। পূর্ব বন বিভাগের দুবলার চর, শেলার চর, কচিখালী, কটকা, শরণখোলা ও বরগুনা জেলার পাথরঘাটা স্টেশনের টিনের চালা উড়ে গেছে। কটকা কেন্দ্রের কাঠের জেটি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। বনকর্মী, জেলে বাওয়ালি ও বন্যপ্রাণীদের জন্য সুপেয় পানির যে আঁধার ছিল সেগুলো প্লাবিত হয়ে লবণ পানি ঢুকে গেছে। সুন্দরবনের কটকার সুপেয় পানির পুকুরটি সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের ওয়ারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম অনেক জায়গায় নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে ছোট ছোট ট্রলারগুলো ছিল সেগুলো জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রবল বাতাসের ফলে বনের গাছ ভেঙে গেছে। যেহেতু প্রায় দুইদিন ধরে ঝড় হয়েছে এবং জলোচ্ছ্বাস অনেক বন্য প্রাণী বিপদাপন্ন হয়েছে। বেশ কিছু বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর খবর আমরাও পেয়েছি। 

তিনি আরো বলেন, যেহেতু গতকাল রাত পর্যন্ত ঝড় ছিল আমরা সরেজমিন কোথাও যেতে পারিনি। আমরা আজকে থেকে সরেজমিনে এসব এলাকায় যাব এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করব।

শরণখোলা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিমের সভাপতি শেখ নাজমুল বলেন, আমরা বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করি। আমরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি। যদি বন্য প্রাণী লোকালয়ে আসে আমরা তাৎক্ষণিক সেটি উদ্ধার করে বনে রেখে আসি। এখন চারদিকে খোঁজখবর নিচ্ছি।

এ বিষয়ে সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীদের জন্য পর্যাপ্ত উঁচু টিলা ও শেল্টার রাখা জরুরি। তাহলে এ ধরনের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। মিঠাপানির পুকুরের পাড় অনেক উঁচু করতে হবে যাতে বন্যার পানি সেখানে প্রবেশ করতে না পারে। 

করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে এখানকার পর্যটক চলাচলের কাঠের পোল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছপালা ভেঙেছে। তবে পুরো সুন্দরবনের গাছপালাসহ কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিশ্চিত করে এখনই বলা সম্ভব নয়।

সুন্দরবনের দুবলার চর এলাকায় অবস্থায় পড়ে থাকা একটি হরিণের ছবি দিয়ে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘হরিণটি বড় ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেলেও আরও কত হরিণ ও বন্য প্রাণী জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে, তার কোনো হিসাব কখনো পাওয়া যাবে না।’ তিনি আবার দুপুর ১টায় আরেক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমেল থেমে গেছে। কিন্তু জানি না এর ভয়াবহতা কতদিনে কাটিয়ে উঠবে সুন্দরবন।’

শেখ আবু তালেব/আরকে